Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আলফ্রেড নোবেল

আলফ্রেড নোবেল
আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল ছিলেন একজন রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও শিল্পপতি; যিনি ডিনামাইট এবং আরও নানা শক্তিশালী বিস্ফোরক আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর জন্ম হয় ২১ অক্টোবর ১৮৩৩ সালে, সুইডেনের স্টকহোম শহরে এবং মৃত্যু হয় ১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সালে, ইতালির সান রেমো শহরে। কিন্তু তিনি বিশ্বে বিশেষ করে যে কারণে পরিচিত, তা হলো তিনি বিপুল অর্থ নিয়োগ করে নোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল, তাঁর বাবা আলফ্রেড ইমানুয়েল নোবেল এবং মা ক্যারোলিন নোবেলের আট সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান ছিলেন। এই দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে চারজনই অল্প বয়সে মারা যান। বার্নহার্ডের বাবা আলফ্রেড ইমানুয়েল নিজেও একজন উদ্ভাবক ও প্রকৌশলী ছিলেন। যেহেতু বাবা ও ছেলে দুজনেরই ফার্স্ট নেম আলফ্রেড, সে জন্য বিভ্রান্তি কাটাতে এই প্রবন্ধে আমরা কেবল ছেলেকেই আলফ্রেড এবং বাবাকে ইমানুয়েল বলে সম্বোধন করব।
শৈশবে আলফ্রেড প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। তা সত্ত্বেও ছোট বয়স থেকেই আলফ্রেড নানা বিষয়ে প্রাণবন্ত কৌতূহল প্রকাশ করে তিনি তাঁর তীক্ষè বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই অল্প বয়স থেকেই তিনি বিস্ফোরক পদার্থের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন এবং এই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শিখতে শুরু করেন। এ সময় বাবা ইমানুয়েলের ব্যবসার উদ্যোগ একের পর এক ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল। তাই তিনি ১৮৩৭ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ভাগ্যান্বেষণে চলে যান। সুখের বিষয় হলো, সেখানে গিয়ে তাঁর ভাগ্য খুলে যায়। তিনি খনি বিস্ফোরণ ও তার বিভিন্ন স্তরের মেশিন প্রস্তুতকারক হিসেবে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেন। সেই সঙ্গে তাঁর আর্থিক সমৃদ্ধিও জোটে।
এর ফলে ১৮৪২ সালে নোবেল পরিবারের বাকিরা স্টকহোম ত্যাগ করে সেন্ট পিটার্সবার্গে আলফ্রেডের বাবা ইমানুয়েলের কাছে চলে যান। আলফ্রেডের সদ্য-ধনী হয়ে যাওয়া বাবা-মা ঠিক করেন, হাতে যখন পয়সা এসেছে, তখন ছেলেকে ভালো করে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাইভেট টিউটর রেখে পড়াবেন। ইতিমধ্যে আলফ্রেড একজন তীক্ষè বুদ্ধি, আগ্রহী ছাত্র হিসেবে প্রমাণ দেখিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নিজেকে একজন দক্ষ রসায়নবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন। তিনি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান এবং রাশিয়ান ভাষায় পারদর্শিতা দেখান। আর মাতৃভাষা সুইডিশে তাঁর দখল আগে থেকে তো ছিলই।
১৮৫০ সালে আলফ্রেড রসায়ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য প্যারিস গমন করেন। শিক্ষা শেষে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন আয়রনক্ল্যাড যুদ্ধজাহাজ মনিটরের নির্মাতা জন এরিকসনের অধীনে কাজ করার জন্য। ১৮৫২ সালে তিনি আবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ফেরত গিয়ে বাবার কারখানায় যোগ দেন। সে সময় ক্রিমিয়ার যুদ্ধের জন্য সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করে তাদের ব্যবসার বেশ রমরমা চলছিল। দুর্ভাগ্যবশত, ১৮৫৬ সালে যুদ্ধটি শেষ হয়। সে জন্য তাদের সামরিক সরঞ্জাম তৈরির ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প হিসেবে তারা তখন শান্তিকালীন যন্ত্রপাতি, যেমন স্টিমবোটের জন্য যন্ত্রপাতি বানানো শুরু করেন। কিন্তু যুদ্ধের যন্ত্রপাতি বানানো থেকে শান্তিকালীন যন্ত্রপাতিতে সুইচ করা অত সহজ নয়। একদিকে আয় বন্ধ, অন্যদিকে শান্তিকালীন যন্ত্রপাতি তৈরিতে কেবল খরচই হয়ে চলছিল।
এসব করতে গিয়ে ১৮৫৯ সালে শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যায়। তখন বাবা-মাসমেত আলফ্রেডরা আবার সুইডেনে ফেরত চলে আসেন। আর দুই ভাই রবার্ট ও লুডভিগকে রেখে আসেন ব্যবসায়ের অবশিষ্ট অংশের যতটা পারা যায় তা উদ্ধারের জন্য।
সুইডেনে এসে আলফ্রেড শিগগিরই তার বাবার কারখানায় ছোট একটা ল্যাবরেটরিতে বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। সে সময়ে খনিতে ব্যবহার করার জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিস্ফোরক পদার্থ ছিল ‘ব্ল্যাক পাউডার’ নামে একধরনের বারুদ। তারও কিছুদিন আগে ‘নাইট্রোগ্লিসারিন’ নামে আরেকটি বেশ শক্তিশালী বিস্ফোরক তরল পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে এটি খুবই অস্থিতিশীল বস্তু ছিল। এর সামান্যতম অংশ অতি সাবধানতায় নিয়েও নির্ভয়ে ব্যবহার করা যেত না। তবু ১৮৬২ সালে নোবেল নিজেই নাইট্রোগ্লিসারিন তৈরির ছোট একটি কারখানা বানিয়েছিলেন। এই বিস্ফোরকটি কীভাবে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করা যায়, তার ওপর গবেষণা শুরু করে দেন।
১৮৬৩ সালে তিনি ব্ল্যাক পাউডার ঢোকানো, কাঠের ছিপি দিয়ে বন্ধ করা একটি ডেটোনেটর আবিষ্কার করেন। যাতে বিস্ফোরণটি দুই স্টেজে সংঘটন করা যায়। কাঠের ছিপিওয়ালা ছোট চার্জটিতে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যেটি দ্বিতীয় স্তরে তরল নাইট্রোগ্লিসারিনের আরও শক্তিশালী চার্জকে বিস্ফোরিত করতে সাহায্য করে। এই ডেটোনেটরটির আবিষ্কারক হিসেবে এবং বিস্ফোরক পদার্থের প্রস্তুতকারক হিসেবে আসা বিপুল অর্থ নোবেলের ভাগ্য বদলানো শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬৫ সালে নোবেল একটি আরও উন্নতমানের ডেটোনেটর আবিষ্কার করেন, যা ‘ব্লাস্টিং ক্যাপ’ নামে পরিচিত এবং যেটি মাঝারি ধরনের তাপ দ্বারা বিস্ফোরিত হতে পারে। এই ব্লাস্টিং ক্যাপই আধুনিক কালের উচ্চ বিস্ফোরণে ব্যবহারের সূচনা তৈরি করে।
প্রথম দিকে নাইট্রোগ্লিসারিন পরিবহন যেমন কঠিন কাজ ছিল, তেমনি এর ব্যবহারও ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। বস্তুত, ১৮৬৪ সালে এটি ব্যবহার করার সময় নোবেলের নিজের নাইট্রোগ্লিসারিন কারখানাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কারখানার কয়েকজন কর্মচারীসহ তার নিজের ছোট ভাই এমিলের মৃত্যু হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নোবেল যেসব নাইট্রোগ্লিসারিনের কারখানা তৈরি করেন, তার প্রতিটিতেই ব্লাস্টিং ক্যাপ ছাড়া নাইট্রোগ্লিসারিন যাতে কিছুতেই নাড়াচাড়া করা না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দেন। তবে এত সাবধানতা সত্ত্বেও কিছু কিছু দুর্ঘটনা যে ঘটেনি, তাও নয়।
১৮৬৭ সালে নোবেল যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেন, তার নাম ‘ডিনামাইট’। তাঁর গবেষণার মাঝে হঠাৎ তিনি আবিষ্কার করে বসেন, ‘কিসেলগুর’ নামক বালিজাতীয় এক বস্তু নাইট্রোগ্লিসারিনের সঙ্গে মেশালে এর তরলতা কমে যায় এবং মিশ্রণটির ব্যবহার অনেক নিরাপদ হয়। নোবেল এই নতুন পণ্যটির নাম দিয়েছিলেন ডিনামাইট (গ্রিক ‘ডায়নামিস’ থেকে, যার অর্থ শক্তি)। এই নব্য আবিষ্কৃত পণ্যটির ওপর ১৮৬৭ সালে তিনি গ্রেট ব্রিটেনে ও ১৮৬৮ সালে আমেরিকায় পেটেন্ট বের করে ফেলেন। এই ‘ডিনামাইট’ই নোবেলকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেয় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এটি সুড়ঙ্গ বিস্ফোরণ, খাল কাটা, রেলপথ এবং রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা শুরু হয়ে যায়।
১৮৭০ ও ৮০-র দশকে তিনি ইউরোপজুড়ে বিস্ফোরক উৎপাদন ও বিপণনের জন্য নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। সেই সঙ্গে আরও কিছু উন্নত পদার্থের জন্য গবেষণা অব্যাহত রাখেন। ১৮৭৫ সালে তিনি ‘ব্লাস্টিং জেলোটিন’ নামে ডিনামাইটের আরও একটি শক্তিশালী প্রকারভেদ তৈরি করেন ও তার পেটেন্ট বের করেন। তিনি এর নাম দেন ‘নাইট্রোসেলুলোজ’। মজার ব্যাপার হলো, ইতিমধ্যে তিনি হঠাৎ আবিষ্কার করে ফেলেন যে নাইট্রোসেলুলোজ নামে তুলতুলে এই পদার্থের সঙ্গে তরল নাইট্রোগ্লিসারিন যোগ করলে একটি শক্ত, প্লাস্টিকের উপাদান তৈরি করা সম্ভব, যেটি একাধারে জল প্রতিরোধক হয় এবং আরও অধিক পরিমাণ বিস্ফোরণের ক্ষমতা রাখে। এরপর তিনি ‘ব্যালিস্টাইট’ নামে আরও উন্নত, ধোঁয়াহীন নাইট্রোগ্লিসারিন পাউডার তৈরি করেন।
বিশ্বব্যাপী আলফ্রেড নোবেলের বিস্ফোরক বাণিজ্য এবং রাশিয়ায় তাঁর ভাইদের কোম্পানিতে হোল্ডিং তাঁকে বিশাল সম্পত্তির মালিক বানিয়ে দিয়েছিল। এরপর তিনি সুইডেনের অস্ত্রশিল্পে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ভারমল্যান্ডের নিকটবর্তী বোফোর্সে একটি লোহার কারখানার সঙ্গে যুক্ত ॥হন। সেটি পরে   (বাকি অংশ ঝ-৬২ পাতায়)
আলফ্রেড নোবেল
বোফোর্স অস্ত্র কারখানার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। বিস্ফোরক আবিষ্কার ছাড়াও তিনি কৃত্রিম রেশম ও চামড়া বিষয়েও অনেক কিছু আবিষ্কার করেছিলেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৫০টিরও বেশি নিবন্ধন করেছিলেন।
নোবেলের ছিল এক জটিল ব্যক্তিত্ব, যা তখকার সবাইকে বিস্মিত করেছিল। ব্যবসার কাজে যদিও তিনি ভ্রমণের ওপরই থাকতেন, তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুব একাকী ছিলেন। এমনকি তাঁর হতাশা রোগের ঝুঁকিও ছিল। অবসরজীবনে তিনি একজন সহজ-সরল সাধারণ মানুষ, অনেকটা সন্ন্যাসীদের মতো জীবনযাপন করতেন। অথচ তিনি বিনয়ী, বন্ধুবৎসল একজন ভালো শ্রোতা হতে পারতেন। কখনো বিয়ে করেননি। রোমান্সের চেয়ে উদ্ভাবনের আনন্দকেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন। সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনাবিল আগ্রহ ও ভালোবাসা ছিল। তিনি অনেক নাটক, উপন্যাস ও কবিতা লিখেছিলেন। কিন্তু সেগুলোর প্রায় সবই অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
শারীরিক দিক থেকে আলফ্রেডের অদম্য শক্তিমত্তা ছিল। একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ কঠিন পরিশ্রমের পরও তাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যেত না। তিনি উদারপন্থী, এমনকি সমাজতান্ত্রিক হিসেবে নাম কুড়িয়েছিলেন। অথচ তিনি গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করতেন না। একদিকে তিনি মহিলাদের ভোটাধিকারের বিরোধিতা করেছিলেন, অন্যদিকে আবার কর্মচারীদের ওপর তিনি পিতৃত্বের দরদি মনোভাব বজায় রাখতেন।
আলফ্রেড নোবেল মূলত একজন শান্তিবাদী মানুষ ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, তাঁর আবিষ্কার দেশে দেশে শক্তির লড়াইয়ের অবসান ঘটাবে। কিন্তু ঘটেছে ঠিক উল্টো। তাঁর আবিষ্কারকে মানুষ ধ্বংসাত্মক শক্তিযুদ্ধের কাজে লাগাতে দেখে মানবজাতি সম্পর্কে তিনি হতাশাবাদী হয়ে পড়েন।
১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেল অ্যানজাইনা পেক্টরিস রোগে ভুগছেন বলে ধরা পড়ে। ১৮৯৬ সালে ইতালির সান রেমোতে নিজের ভিলায় তিনি সেলিব্রাল রক্তক্ষরণে মারা যান। মৃত্যুকালে বিশ্বব্যাপী তাঁর বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উৎপাদনকারী সাম্রাজ্য মিলে ৯০টিরও বেশি কারখানা ছিল।
ওই ১৮৯৫ সালেরই ২৭ নভেম্বর প্যারিসে তিনি যে উইল বা ইচ্ছাপত্রটি তৈরি করেছিলেন এবং স্টকহোমের একটি ব্যাংকে জমা দিয়েছিলেন, সেটি তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সাধারণ জনগণের কাছে একটি অত্যন্ত বিস্ময়কর ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল। মানবিক ও বৈজ্ঞানিক দাতব্য কাজে সদা উদার এই মহান ব্যক্তি তাঁর সম্পদের সিংহভাগ দিয়ে আন্তর্জাতিক তাবৎ পুরস্কারের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ‘নোবেল পুরস্কার’ এর প্রতিষ্ঠা করেন।
কী কারণে তিনি এই বিপুল সম্পত্তি নির্মোহে দান করে গেলেন, সে কথা তিনি কাউকে বলে যাননি। অনুমান করা যায়, ১৮৮৮ সালের একটি উদ্ভট ঘটনা তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। সে বছর আলফ্রেড নোবেলের ভাই লুডভিগ ফ্রান্সের কান শহরে অবস্থানকালে মারা যান। কিন্তু ফরাসি সংবাদপত্রগুলো ভুল করে লুডভিগের বদলে আলফ্রেডের মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা করে। পত্রিকাগুলোর শিরোনাম ছিল, ‘লে মার্চান্ড দে লা মর্ট মর্ট মর্ট মর্ট’ (মৃত্যুর সওদাগর মারা গেছেন)। অনেক পত্রিকা আরেকটু বিস্তারিত লিখেছিল, ‘ড. আলফ্রেড নোবেল, যিনি বহু লোককে খুব তাড়াতাড়ি মেরে ফেলার উদ্ভাবন করে বড়লোক হয়েছিলেন, তিনি গতকাল মারা গেছেন।’ (ঞযব ঋৎবহপয হবংিঢ়ধঢ়বৎ ড়নরঃঁধৎু ংঃধঃবফ, ‘উৎ. অষভৎবফ ঘড়নবষ, যিড় নবপধসব ৎরপয নু ভরহফরহম ধিুং ঃড় শরষষ সড়ৎব ঢ়বড়ঢ়ষব ভধংঃবৎ ঃযধহ বাবৎ নবভড়ৎব, ফরবফ ুবংঃবৎফধু.’
মনে করা হয়, মারা যাওয়ার পর লোকে আলফ্রেডকে ‘মরণ ব্যবসায়ী’ হিসেবে মনে রাখবেÑএ কথা মনে করে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন। সে জন্য প্রায় সর্বস্ব দিয়ে তিনি এটি রোধ করে মানুষের স্মৃতির চাকাটি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করে গেছেন। এ ছাড়া অনেক প্রমাণ রয়েছে, তাঁর বন্ধু, বিশিষ্ট অস্ট্রিয়ান শান্তিবাদী ব্যক্তিত্ব, বার্থা ভন সুটনার, তাঁকে শান্তির জন্য পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
পরিশেষে এটা বলা যায়, আলফ্রেড নোবেল ছিলেন একজন দ্বন্দ্বময় ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাকী এবং উজ্জ্বল একজন মানুষ। আংশিক হতাশাবাদী আবার আংশিক আদর্শবাদী। তিনি যেমন আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহৃত সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরক আবিষ্কার করেছিলেন, তেমনি মানবতার উৎকর্ষের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট অবদান যারা রেখেছেন ও ভবিষ্যতে রাখবেন, তাদের জন্য তাঁর প্রায় সর্বস্ব দিয়ে, বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
-শিকাগো
কমেন্ট বক্স