Thikana News
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঠিকানার প্রতি  অনুরাগ বশত

ঠিকানার প্রতি  অনুরাগ বশত
পরজীবী বা পরমুখাপেক্ষী গণতান্ত্রিক আন্দোলন কিংবা গণতান্ত্রিক পরিবেশে সংবাদপত্রের দীপ্তিহীন অবয়বই চোখে পড়ে। বিদেশের মাটিতে স্বদেশের রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে যদিও অবাধ আচরণের অবয়বে সংবাদপত্রগুলো দৃশ্যমান হয়, তার পরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার পরতে পরতে আলখাল্লা জড়ানো থাকে। সংবাদপত্র সাংবাদিকদের অপ্রকাশ্য অনুরাগের স্থান। কিন্তু বর্তমানে সাংবাদিকদের এই অনুরাগের অবস্থানটা সীমাহীন আপসকামিতার পর্যায়ে নেমে এসেছে। প্রবাসেও দেখা যায়, এই আপসকামিতা আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, গণতন্ত্র নেই। কিন্তু বিষয়টা কেন প্রবাসে আন্দোলিত হবে? তার কারণ সম্ভবত স্বদেশের অনুরণন বিদেশ বিভুঁইয়েও আঘাত হানে। করে দেয় উচ্চারণ। ঠিকানার বর্ষপূর্তির লেখা লিখতে বসে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরভোজী নগ্ন চেতনা বিষয়টিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র, যা বস্তুত পুঁজি ধারণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, তা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের নামে হইচই হয়েছিল ২০২৩ সালে। এই আন্দোলন নির্বোধদের হাতে-পায়ে মাঠে মারা গেছে। গণতান্ত্রিক কোনো আন্দোলনই হয়নি। পশ্চিমারা তাদের নিজেদের করে চীনের প্রভাবমুক্ত একখণ্ড বাংলাদেশ হয়তো চেয়েছিল, তা যতটুকু বাংলাদেশের স্বার্থে, তার সমপরিমাণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পশ্চিমাদের স্বার্থে। এখানে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের কৌশল ছিল পরভোজী, যা তার স্বাভাবিক পরিণতি ডেকে এনেছে। বাংলাদেশের মানুষ আমেরিকাকে বিশ্বাস করে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। তাই পরভোজী এই আন্দোলনের বিশদ ব্যাখ্যা হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশ নামক দেশটি আজ বিকলাঙ্গ রূপ নিতে যাচ্ছে। এর রাজনীতিতে অনেক মনীষাদের একজন সিরাজুল আলম খান তার মৃত্যুর পূর্বে বলে গেছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের খুঁটিটি নড়বড়ে হয়ে যাবে। তার লব্ধ তত্ত্বটি অনেকটা তথ্যনির্ভর, যা তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। তবে এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কি কোনো অনুসিদ্ধান্ত নেওয়া যায়? বাংলাদেশের গণতন্ত্র এক ইউনিক পদ্ধতিতে আজ একদলীয় শাসনে দাঁড়িয়েছে, যা বলা যায় অনেকটা স্বৈরতন্ত্রের ভিন্ন রূপ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দলীয় স্বৈরতন্ত্র বলতে যা বোঝায়, তা-ও নেই। যা প্রতিভাত হয়েছে, তা হলো দলের মাথায় আলুর দমের মতো বসে থাকা ব্যক্তিতন্ত্র; যা গণতন্ত্রের রূপকে শুধু বিকৃতই করেনি, বরং তা এক স্রোতহীন নদীর চাতালের মতো অনড় শিখণ্ডীর রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশের ডান কিংবা বাম, মৌলবাদ কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ কিংবা সমাজবাদ, গণতন্ত্র কিংবা রক্ষণশীলতাÑসবকিছুই আজ বাংলাদেশে নিজ নিজ চরিত্র হারিয়েছে।
বামপন্থী বলে যারা আছে, তারা আজ নিজেদের একধরনের শৌখিন রাজনীতিক হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশে বাম রাজনীতি বলে কিছু নেই। যেটুকু ছিল, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাশিয়ার খোলা মন খোলা হাওয়ায় উড়ে গেছে। নতুন চীনের সংস্কারপন্থীদের দ্বারা বিবস্ত্র, নগ্ন হয়ে পড়েছে।
দেখা গেছে, বাংলাদেশে জনগণের পরজীবী আন্দোলন কোনো পরিবর্তন তো করতেই পারেনি, বরং দেশের ক্ষমতাসীন শ্রেণিটি এখন নামতা নিয়ে গণতন্ত্রের বেলেল্লাপনায় যেমন একদিকে লিপ্ত, অন্যদিকে তারা নিজেদের শাসন কায়দা বাহ্যত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। তার কারণ হচ্ছে, নতুন প্রজেক্ট। কারণ নতুন প্রজেক্ট না হলে পকেট ভরে না। পকেট না ভরলে দল বা নির্বাচন নির্বাচন খেলা জমে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনে দৃশ্যত যা ঘটেছে, তা হলো, ‘৩০০ আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটার ছিল মাত্র একজন।’ বাকিরা ছিল বস্তুত দর্শক। বেসামরিক সংসদীয় শাসন বস্তুত অকেজো হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। তাই বস্তুত প্রশ্ন দাঁড়ায়Ñদেশ কোন দিকে যাচ্ছে?
ভারতের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতীয় সমর্থনের সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই, তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের বিবেচ্য হচ্ছে বাংলাদেশে কোন সরকার থাকলে ভারত সন্ত্রাসী, বিশেষ করে ইসলামি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত থাকবে? আসলে বিষয়টা কি তা-ই? ভারতের সন্ত্রাসী হামলা বাংলাদেশের ওপর যতবার হয়েছে, ভারতে কি সে তুলনায় বাংলাদেশ থেকে কোনো সন্ত্রাস চলেছে কোনো সরকারের সময়?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
নিউইয়র্ক
কমেন্ট বক্স