সিলেট তখন আসামের একটি অংশ। ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ সরকার শৈল শহর শিলংকে রাজধানী শহরের মর্যাদা দিয়ে আসাম রাজ্যের পত্তন করেছিল। শুরুতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার পাঁচ জেলা এবং খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড় নিয়ে গঠিত হয়েছিল আসাম প্রদেশ। পরবর্তী সময়ে ১৮৭৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আসামের সঙ্গে সিলেট অঞ্চলকে জুড়ে দিলে আসামের ভৌগোলিক পরিধি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল বহুগুণ এবং ওই সময়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের দোহাই দিয়ে আসামকে ‘ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা’ এবং ‘সুরমা উপত্যকা’ নাম দিয়ে দুভাগে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এই বিভক্তিকরণ ছাড়াও মূল আসামে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা তখন ছিল ৩৯ লাখ ৬০ হাজার ৭১২ জন এবং অসমীয় জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৪৬ জন। এ ছাড়া পার্বত্য অধিবাসী ছিলেন ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৫১৫ জনের মতো।
মূলত আসামের সঙ্গে সিলেটকে জুড়ে দেওয়ার পেছনে ভারত শাসন আইনের ২৯৮ ধারা মোতাবেক, যেকোনো অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলে বসতি স্থাপনের অধিকারস্বীকৃত হওয়ায় আসামজুড়ে তখন বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল স্থানীয় অধিবাসীদের তুলনায় বেশি। এই বাংলাভাষী জনসংখ্যার আধিক্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার অবশ্য কারণও ছিল; যেমন কৃষি এবং ব্যবসা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সিলেটি নেতৃত্বের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। ফলে স্থানীয় মানুষেরা ক্রমশ বহিরাগত সিলেটিÑবাঙালিদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া আসামের স্থানীয় প্রশাসনও সিলেটি-বাঙালিদের বিরুদ্ধে একটা অপ্রকাশ্য প্রতিরোধের দেয়াল তুলে দিতে শুরু করে। আসামের আইন-আদালতের ভাষা তখন ইংরেজি। তারপর অসমীয়া ভাষার স্থান। কিন্তু বাংলার প্রবেশাধিকার বলতে গেলে নেহাতই সংকুচিত ছিল। এ ছাড়া সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে হিন্দি ভাষারও একটা মর্যাদা ছিল আসাম অঞ্চলে। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ও বাঙালিদের কৃতিত্বপূর্ণ অবস্থান থাকা সত্ত্বেও ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ে বাঙালি সমাজ। মূলত এসব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একটা জোরালো প্রতিবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে ১৮৫৭ সালের ‘সিপাহি বিদ্রোহের’ প্রেক্ষাপটও একটা ভূমিকা পালন করেছিল।
মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তখন সামনে চলে আসে আসামে বসবাসরত বাঙালি সমাজের সামনে। ওই বাঙালিদের মধ্যে সিলেটি জনগোষ্ঠীর আধিক্যও ছিল উল্লেখযোগ্য। তার একটা বড় প্রমাণ হলো ত্রিশের দশকে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত ১০৮ জন সদস্যের মধ্যে সিলেটের মুসলমান সদস্য ছিলেন ৩৪ জন এবং ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৫৮Ñএই সময়কালের মধ্যে আসামের মন্ত্রিসভায় সিলেটের সাতজন বরেণ্য রাজনীতিবিদ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৃতী সন্তান আবদুল মতিন চৌধুরী আসামের স্যার সৈয়দ সাদুল্লাহ মন্ত্রিসভায় চারবারের নির্বাচিত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আসামের একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক ‘হোসেন বর গোহাঞ্চি’ আশির দশকে কলকাতার বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘দেশ’ ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘১৯৪৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট যখন আসাম থেকে বের হয়ে গেল, আমরা অসমীয়রা যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। কারণ কেরানি থেকে মন্ত্রীÑএকেবারে সব পর্যায়ে সিলেটিদের আধিপত্য আমাদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
মূলত সিলেটি রাজনীতিবিদদের অনমনীয় মনোভাব আসামে বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তৈরি করে। ১৯২৭ সালের ৫ অক্টোবর আসাম ব্যবস্থাপনা পরিষদে একটি মামলাকে কেন্দ্র করে জনৈক দারোগা আবদুল হামিদ আকন্দের বরখাস্তের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাচিত পরিষদ সদস্য আবদুল হামিদ চৌধুরী সোনা মিয়া। ওই প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনার দাবি জানিয়ে হবিগঞ্জ আসনের অপর এক সদস্য গোপেন্দ্র লাল চৌধুরী এবং সিলেট আসনের সদস্য রাজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী বক্তব্য রাখলে সরকারের পক্ষ থেকে জুডিশিয়াল মেম্বার ‘বাংলায় কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তার উত্তর দেওয়ার বিধান পরিষদে নাই’ বক্তব্য দিলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সবাই। সিলেটের তিন আসন থেকে নির্বাচিত ওই তিন সদস্য সরকারি ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করে আন্দোলন গড়ে তুললে তা তীব্র আকার ধারণ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৭ সালে আসাম ব্যবস্থাপনা পরিষদের স্বীকৃত ভাষা হিসেবে ওই সময়ে বাংলা ভাষা তার সম্মানজনক মর্যাদা লাভ করেছিল। পরের ঘটনা ১৯৪৭-এর ভারত ভাগ। সেই সময়ে সিলেট অঞ্চলকে আসাম থেকে বের হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যোগ দিতে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। গণভোটের মধ্য দিয়ে সেই সংকট উত্তরণে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। কিন্তু দেশভাগের পর সারা দেশের বাঙালি সমাজ হতবাক হয়ে পড়ল, যখন সদ্য জন্ম নেওয়া পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করল তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার।
দীর্ঘ ৬৫ বছরকাল বাংলার বাইরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সিলেট অঞ্চলকে আসামের অন্তর্ভুক্ত করে রাখার ফলে যে মরণযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল সিলেটবাসীকে, তার বিস্তার তখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে বহুগুণ বেশি হয়ে। ফলে আবারও আন্দোলনে নামতে হলো। যদিও সেই সময়ে সিলেটে মুসলিম লীগের আধিপত্য ছিল প্রচণ্ড মাত্রায়। তার অবশ্য কারণও ছিল। ৪৭-এর ভারত বিভক্তির সময় সিলেট বিভাগকে নিয়ে উপমহাদেশজুড়ে যে তুলকালাম কাণ্ড বেধেছিল, সেই অবস্থার মোকাবিলায় মুসলিম লীগের সিলেটি নেতাদের ভূমিকা ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল হয়ে থাকলেও ৪৭-পরবর্তী ভাষা বিতর্কের সময় তাদের মধ্যে তখন অনেকেই উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশ গঠনের অজুহাত খাড়া করে। তবে এই নেতাদের বাইরে সিলেটের তরুণসমাজ এবং নারীসমাজ যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, ইতিহাসে তার নজির মেলে না। সিলেটে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে তখন অন্য মাত্রায়।
সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, বাম রাজনীতির পরীক্ষিত বুদ্ধিজীবী তাসাদ্দুক আহমেদ, পীর হাবিবুর রহমান, এএইচ সাদাত খান, প্রসূন কান্তি বরুণ রায়, দেওয়ান আজরফ, আসদ্দর আলী, মো. মুসলিম চৌধুরী, কবি দিলওয়ারসহ সমাজের সচেতন অংশ আন্দোলনের ময়দানে সমান কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন সেই সময়ে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রাদেশিক রাজধানীর চেয়ে বহুদূরে সিলেটের অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবির সপক্ষে ১৯৪৭ সালের ৩০ নভেম্বর সিলেটে যে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল, তা ছিল ঢাকায় আয়োজিত সর্বজনীন প্রতিবাদ জানানোরও আগের ঘটনা। ওই সময়ে শুধু সিলেট নয়; সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, ছাতক, বিয়ানীবাজারসহ প্রতিটি শহরে গঠিত হয়েছে ‘ভাষা সংগ্রাম কমিটি’র মতো শক্তিশালী সংগঠন। দিনে দিনে ওইসব অঞ্চলে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। সিলেট অঞ্চলজুড়ে লাগাতার আন্দোলনে ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো অচল হয়ে পড়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। বিশেষ করে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে সিলেট শহরে গায়েবানা জানাজা ছাড়াও পূর্ণ দিবস হরতাল পালিত হয়েছিল। ওইসব আন্দোলনের পাশাপাশি সিলেটের পত্রপত্রিকাও সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছিল। বিশেষ করে, নুরুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘মাসিক আল ইসলাহ’ এবং মাহমুদ আলীর ব্যবস্থাপনায় ও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক নও বেলাল’ ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল সেই সময়ে।
এ ছাড়া ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীরাও এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী আবদুর রব নিশতার এক সংক্ষিপ্ত সফরে সিলেটে এসেছিলেন। মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ছাত্রনেতা আবদুস সামাদ আজাদের (পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী) নেতৃত্বে এক ছাত্র প্রতিনিধিদল দেখা (বাকি অংশ ঝ-৬৩ পাতায়)
১৯২৭ থেকে ১৯৬১
করে মন্ত্রীর সঙ্গে। ওই একই সময়ে বেগম জোবেদা রহিম চৌধুরীর নেতৃত্বে এক মহিলা প্রতিনিধিদল মন্ত্রী আব্দুর রব নিশতারের সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ‘বাংলা’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই মহিলা প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে আরও একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের কাছে। ওই দুই স্মারকলিপি পাঠানোর খবর পেয়ে সিলেটের মুসলিম লীগপন্থী রাজনীতিবিদেরা খেপে গেলেও ঢাকাস্থ তমুদ্দুন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাশেম জোবেদা রহিম চৌধুরীর কাছে এক চিঠিতে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, ‘সিলেটের পুরুষেরা যা করতে পারেনি, আপনারা তা-ই পারলেন।’
কিন্তু শুধু স্মারকলিপি পাঠিয়েই থামলেন না তারা। ১৯৪৮ সালের ১০ মার্চ সিলেটের গোবিন্দচরণ পার্কে (বর্তমানে হাসান মার্কেট এলাকা) রাষ্ট্রভাষা বাংলা চালুর দাবি জানিয়ে একটি জনসভারও আয়োজন করেছিল মহিলা মুসলিম লীগ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রী, সিলেটের কুলাউড়ার সন্তান রওশন আরা বাচ্চু ছাড়াও সৈয়দ মুজতবা আলীর স্ত্রী মিসেস রাবেয়া আলী, লুৎফুন্নেসা খাতুন, রাবেয়া খাতুন, সৈয়দা শাহার বানু, সৈয়দা নজিবুন্নেসা খাতুন, শামসি খানম চৌধুরী, জাহানারা মতিন, নূরজাহান বেগম, সুফিয়া খাতুন এবং মাহমুদা খাতুনের নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। পরবর্তী সময়ে এই ভাষা আন্দোলনের ঢেউ আলোড়ন তুলেছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্তিক শহর আসামের শিলচর ও করিমগঞ্জে।
১৯৪৭-এর ভারত বিভক্তির জের ধরে ১৯৫০ সালে দেশজুড়ে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল, তার ফলে বিপুলসংখ্যক হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষ সিলেট অঞ্চল ছেড়ে আসামের করিমগঞ্জ ও শিলচরে পাড়ি জমায়। সরকারি হিসাবমতে, সেই উদ্বাস্তু শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ছয় লাখের মতো। ফলে অসমীয় জনজীবনে বাঙালি জনগোষ্ঠী একটি বিষফোড়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ’৫৪ সালে আসামজুড়ে ‘বাঙাল খোদাও’ অভিযানের সূত্রপাত। দল বেঁধে বাঙালি গৃহবধূদের ওপর অবাধে অত্যাচার করা ছাড়াও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাঙালি বস্তির সব ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ। সেই সময়ে আসামের প্রাথমিক স্কুলসমূহের মধ্যে ২৫০টি স্কুলের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল অসমীয় ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও। কিন্তু ’৫৪ সালে ২৪৭টি স্কুল থেকে বাংলা ভাষাকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে তুলে নেওয়া হয়, অর্থাৎ বাংলায় পাঠদান একেবারে রহিত করে দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে ১৯৬০ সালের ২২ এপ্রিল অসমীয় ভাষাকে রাষ্ট্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষার দাবি জানিয়ে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি বিধান সভায় একটি বিল উত্থাপন করলে সেটাও ১৯৬০ সালের ২৪ অক্টোবর কণ্ঠভোটে পাস হয়ে যায়। ফলে বাঙালির সামনে আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ ছিল না। আসাম ভাষা সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে বাঙালিরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরের রেললাইনের ওপর অবস্থানরত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারি পেটোয়া বাহিনীর গুলিবর্ষণে ওই দিন প্রাণ হারায় ১১ জন নিরীহ মানুষ। ওই ১১ শহীদের মধ্যে মাত্র ১৬ বছর বয়সী এক তরুণী কমলা ভট্টাচার্যের বাড়ি ছিল বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। এ ছাড়া ১১ শহীদের মধ্যে ৯ জনের পৈতৃক নিবাস ছিল একসময়ে সাবেক পূর্ব বাংলায়। আর ওই ৯ জনের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের সন্তান, যারা দেশভাগের অজুহাতে একদিন পৈতৃক ভিটামাটি ছেড়ে বসতি গেড়েছিলেন অজানা-অচেনা এক ভিন গাঁয়ে। শেষ পর্যন্ত বায়ান্নর ধারাবাহিকতায় আসাম অঞ্চল রক্তে রঞ্জিত হলেও ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর আসাম সরকার ভাষা আইন সংশোধন করে বাংলা ভাষাকে তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।