Thikana News
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়

সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়
বাংলাদেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন পাস করা হয়েছে। এই নতুন আইনটির নামকরণ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩। দেশ-বিদেশে কঠোর সমালোচনার মুখে বিলুপ্ত করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ভিন্নমতের রাজনীতিক ও সাংবাদিকেরা।
ডিএসএর ক্ষেত্রে সরকার মামলার তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। এ বিষয়ে সরকারি তথ্য বলতে সংসদে আইনমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য। সেখানেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। আইনমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুসারে ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে বলা হলেও এ আইনের অধীনে সর্বমোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা, কারাগারে আটক ব্যক্তির সংখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত ১ হাজার ৪৮৬ জনের পেশা শনাক্ত করে দেখা যায়, ভিন্নমতের রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকেরাই এই আইনে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রীর উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৭ হাজার ১টি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিএসএতে অভিযোগকারী ৮৪৬ জনের পেশা শনাক্ত করে দেখা গেছে, অভিযোগকারীদের মধ্যে রাজনীতিবিদই বেশি এবং আওয়ামী লীগ ও সরকার-সংশ্লিষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। ডিএসএতে শুধু প্রধানমন্ত্রীর মানহানির জন্য মামলা হয়েছে ১৯০টি। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ৩১টি আর প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক কর্তৃক মামলা হয় ১৫৯টি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) ২২৫টি মামলার মধ্যে ৮৩ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও অনলাইনে ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের কারণে হয়েছে। যেসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মতপ্রকাশের কারণে মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও লাইকি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার পর অস্বাভাবিক দ্রুততায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে নতুনভাবে এসেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এটা আমাদের বন্দী করে ফেলছে। বাংলাদেশ এখন শৃঙ্খলিত দেশ। এদিকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের পর কর্তৃত্ববাদী সরকারের দরকার এ রকম একটা আইন, যার মাধ্যমে সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি সম্প্রসারণ করা সম্ভব।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনগুলো সামগ্রিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আইনের কাজ। সরকারকে রক্ষা করার অথবা সরকারি দলকে রক্ষা করার কোনো আইন মানুষের উপকারে আসে না। কোনো গণতান্ত্রিক সার্বভৌম দেশে এমন আইন চলতে পারে না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার সুরক্ষা আইন নামে নতুনভাবে এসেছে। দুটির মধ্যে বড় কোনো পার্থক্য নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেহেতু বাতিল হয়েছে, তাই এই আইনে অভিযুক্ত সবাইকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া উচিত। যে আইন দেশে নেই, সেই আইনের অধীনে মামলা কীভাবে চলে! নিশ্চয় এই মামলা থেকে সবাইকে মুক্তি দেওয়াই উত্তম। আইনে আছে, রাজনৈতিক নেতার সমালোচনা করা যাবে না। দেবতার যদি সমালোচনা করা যায়, ধর্মবিশ্বাসের যদি বিরোধিতা করা যায়, তাহলে রাজনৈতিক নেতার কেন সমালোচনা করা যাবে না। এখনই সময় ডিএসএ মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা। মামলাগুলোর তথ্য জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করা, সব মামলার সত্যতা খুঁজে বের করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন, যারা অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত, বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতপ্রকাশের কারণে যাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে সেসব মামলা বাতিল করা। সেই সঙ্গে এসব মামলায় যাদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে আইনের খসড়া, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মানবাধিকারকে দমন করার জন্য পূর্বে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি দমনমূলক ধারা বজায় রাখা হয়েছে। নতুন আইনটি যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সংবিধানে প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অধিকার সমুন্নত রাখে এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের কাজের জন্য ঝুঁকিতে না ফেলে, তা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। এটি নিশ্চিত যে বর্তমান প্রক্রিয়াগুলো অনলাইনে নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা করতে এবং বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লবের কারণে তৈরি হওয়া হুমকিগুলোর সমাধান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়, কর্তৃপক্ষ বা যাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, তাদের কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনভাবে বাংলাদেশের সব জাতীয় ও স্থানীয় ঘটনার সংবাদ প্রকাশের ক্ষমতা থাকা উচিত।
 
কমেন্ট বক্স