Thikana News
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কালের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঠিকানা

কালের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঠিকানা
পবিত্র কোরআনের সপ্তদশ অধ্যায়ের মদিনায় অবতীর্ণ সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে : ওয়া হুয়াল্লাজি খালাকাল্ লাইলা ওয়াল নাহারা ওয়াস্ সামসা ওয়াল কামারা কুল্লুন ফী-ফালাকী ইঁয়ামবাহুনÑআর তিনি এমন (ক্ষমতাবান) যিনি রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন (আর সূর্য ও চন্দ্রের) প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে। বস্তুত, মহাবিশ্বের সকল কিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে সদা পরিভ্রমণরত ও আবর্তিত এবং মহাকর্ষ শক্তিবলে পরস্পরকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিশ্বপ্রতিপালকের নিয়ম লঙ্ঘন করে কেউই কাউকে কাছে টানতে কিংবা অতিক্রম করতে পারছে না এবং মহাপ্রলয়ের আগ পর্যন্ত পারবেও না। তাই দিবা-রাত্রি সংঘটন, চন্দ্রকলার হ্রাস-বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি পার্থিব প্রবাহও সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে শুরু হয়ে মহাপ্রলয়ের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আর অধরা ও আত্মভোলা সময় এবং নদীর স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানবজীবনের ক্রমপরিবর্তনও ঘটছে প্রাকৃতিক নিয়মে অব্যাহতভাবে। মূলত শৈশব-কৈশোর-যৌবন-পলিতকেশ-অশীতিপর-নবোতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বয়সের ভারে ন্যুব্জদেহ ও কুব্জপৃষ্ঠ হয়ে পড়া ইত্যাদি মানবজীবনের স্বাভাবিক বিবর্তন বা পরিণতিরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই পরিবর্তন বা পরিণতি জগৎ-সংসারের কোনো বিধিবদ্ধ নিয়মরীতি, প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষুর শাসানি কিংবা প্রচলিত সমাজব্যবস্থা-আইনশৃঙ্খলার তোয়াক্কা করে না। আবার জাগতিক নিয়মেই বিভিন্ন ধাপ উতরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী, ধার্মিক-অধার্মিক, বিত্তশালী-হাভাতে নির্বিশেষে প্রত্যেক মানবশিশু অন্তিম মুহূর্তে একদিন মহান আল্লাহর নির্দেশে পরলোকে পাড়ি জমায়। আর অপর হাজার হাজার, লাখ লাখ, কোটি কোটি নতুন মুখ জগৎ-সংসারের শূন্যস্থানগুলো পূরণ করে নেয়।
স্মর্তব্য, সাপ্তাহিক ঠিকানা প্রকাশনার প্রেক্ষাপট, সূচনালগ্নের ঝিনুক দিয়ে সাগর সেচার দুঃসাধ্য প্রয়াস; প্রসববেদনা, মূলধন সরবরাহ, প্রাসঙ্গিক ঝুঁকি ইত্যাদি সম্পর্কে আমার ধারণা একেবারেই সীমিত। তবে ঠিকানার ম্যারিয়ট হোটেলের গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পত্রিকার প্রাণপুরুষ-প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি এম এম শাহীনের নাতিদীর্ঘ ও সারগর্ভ বক্তব্য থেকে সবকিছুর সম্যক ধারণা পাওয়া গেছে। জনাব শাহীনের বক্তব্য অনুসারে, স্বদেশের সঙ্গে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনা এবং বীর বাঙালির অবিস্মরণীয় অর্জন মহান একুশের আদর্শ ও বজ্রদীপ্ত শপথকে পাথেয় করে নিউইয়র্ক থেকে ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল সাপ্তাহিক ঠিকানা। তারপর চলার পথে যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিবন্ধকতার দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর সাফল্যের সঙ্গে মাড়িয়ে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ৩৫তম বর্ষে পা রাখতে যাচ্ছে ঠিকানা। ঠিকানার ৩৫তম বর্ষের মাইলফলক স্পর্শে কর্তৃপক্ষ এবং শুভাকাক্সক্ষীদের মতো আমিও আবেগ-উদ্বেলিত এবং ঠিকানার উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঙ্গে বিশ্ববাঙালির জাতিসত্তা ও নাড়ির স্পন্দন একই সূত্রে গাঁথা। মহান একুশের রক্তঝরা পথ বেয়েই উনসত্তরের গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরের নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মোৎসর্গ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে বিশ্বমানচিত্রে। অধিকন্তু বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের সূতিকাগার হিসেবেও একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য ও গুরুত্ব রীতিমতো বর্ণনাতীত। ফলে জাতিসংঘভুক্ত অপরাপর দেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিশ্ববাঙালিও স্বদেশে ও প্রবাসে চোখ-ধাঁধানো অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের মাধ্যমে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে প্রতিবছর। আর ঠিকানা কর্তৃপক্ষও নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সাড়ম্বরে মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের পাশাপাশি বর্ধিত কলেবরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ১৯৯১ সাল থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ঠিকানার ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ধিত কলেবরের বিশেষ সংখ্যা।
ঠিকানার সঙ্গে আমার প্রায় দুই যুগের ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্তি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মানদণ্ডে আমি নিঃশঙ্কচিত্তে বলতে চাই, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানা যুগ এবং কালের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাপ্তাহিকী। শতাব্দীর ভয়াবহতম প্যান্ডামিকের প্রলয়নৃত্যকালে সাময়িকভাবে কয়েক সপ্তাহ প্রকাশনা বন্ধ থাকা ব্যতিরেকে আত্মপ্রকাশের লগ্ন থেকে বিগত ৩৪ বছর লাখো প্রতিকূলতার মাঝেও সপ্তাহের প্রতি বুধবার ঠিকানা নিয়মিতভাবে বাজারে আসছে। তবে ঠিকানার প্রকৃত আপন এবং শত্রু-মিত্র নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয়, সন্দেহ রয়েছে। বিগত ২৪ বছরে ঠিকানার তথাকথিত অসংখ্য ঘনিষ্ঠজন, হরিহর আত্মা, শুভাকাক্সক্ষী, অকৃত্রিম হিতৈষী এবং নিখুঁত দরদিকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আবার স্বার্থের ঘেরাটোপে আচ্ছাদিত জগৎ-সংসারে পান থেকে চুন খসে পড়ার মতো সামান্যতম স্বার্থের ব্যাঘাতে অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী ও ঘনিষ্ঠজনকে রাতারাতি ঠিকানাবিদ্বেষী হওয়ার দৃষ্টান্তও বহুবার অভাগার নজরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে মানবচরিত্রের বিচিত্র অভিজ্ঞতার নিখুঁত চরিত্র চিত্রণে সিদ্ধহস্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ষাটের দশকে পড়া কিছু উদ্ধৃতি মনে পড়ে যায়। লেখকের ভাষায়, সদ্য পুত্রশোকাতুরা জননী আর্ত-আহাজারিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেছেন। কিন্তু পুত্রের শ্রাদ্ধ শেষ হওয়ামাত্রই সাংসারিক দেনা-পাওনা ও বিষয়-আশয় নিয়ে কোমর বেঁধে সদ্যবিধবা পুত্রবধূর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে বধূকে ঘর থেকে বিতাড়িত করলেন। আমি তখনই বুঝেছি, মনুষ্যের এই অপূর্ণ বিকশিত রুগ্্ণ সমাজে প্রীতির আশা বৃথা। তিনি  আরও বলেছেন, আমি যাকে হাতে ধরে হাঁটতে শিখিয়েছি, হাঁটা শেখামাত্রই সে দৌড়ে আমাকে লাথি মারতে আসায় বুঝেছি যে মনুষ্যের এই অপূর্ণ বিকশিত রুগ্্ণ সমাজে প্রীতির আশা বৃথা।
যাহোক, ঠিকানা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সর্বদা সঠিক ছিল- এটি হলফ করে বলার সুযোগ একেবারেই কম। জানা এবং দেখামতো যাদের পরিতুষ্ট করতে গিয়ে ঠিকানা কর্তৃপক্ষ অন্যের বিরুদ্ধে মসি চালনা করেছে, সময়ের ব্যবধানে তারাও ঠিকানার প্রতি খড়্্গহস্ত হয়ে উঠেছে। যারা একসময় ঠিকানার বিপণন এবং সরবরাহের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন, তাদের অনেকেই আবার সময়ের ব্যবধানে ঠিকানাকে পোড়ানোর মতো অশোভনীয় কাজে লিপ্ত হয়েছেন। একসময় যারা ঠিকানার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ও সর্বেসর্বা হিসেবে কমিউনিটিতে ব্যাপক পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন, সময়ের ব্যবধানে তাদের সিংহভাগও ঠিকানার জঘন্যতম শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। এ ছাড়া ঠিকানার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাউস মার্কা ক্যামেরা নিয়ে যারা একসময় চৌকস গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতো সারাক্ষণ অনুষ্ঠানস্থল চষে বেড়াতেন, মঞ্চ-কাঁপানো বক্তৃতার মাধ্যমে যারা রাশি রাশি প্রশংসা কুড়াতেন, তাদের বেশির ভাগকেই আজকাল ঠিকানার অনুষ্ঠানাদিতে দেখা যায় না। পক্ষান্তরে ঠিকানার চৌদ্দগোষ্ঠীর সার উদ্ধারকারী এবং সাপে-নেউলে সম্পর্কধারী সাবেক আমলের অনেকের বর্তমানে ঠিকানার অনুষ্ঠানমালা এবং বক্তৃতা মঞ্চে উপস্থিতি কারও দৃষ্টি এড়ায় না। তবে সামগ্রিকভাবে ঠিকানাসহ প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সময়ের চাহিদা এবং প্রবাসী বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচিবোধের আমূল পরিবর্তনের ফলে।
নব্বইয়ের দশকে আটলান্টিকের এ-পারে বসতিগড়া প্রবাস কমিউনিটির জীবনে প্রিন্ট মিডিয়া ছিল স্বদেশের সঙ্গে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনা, অভ্যন্তরীণ খবরাখবর লেনদেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার দুর্ভেদ্য বর্ম; ভাষা-ভাব-লেখা প্রকাশের একমাত্র বাহন; অমর একুশে, স্বাধীনতা দিবস এবং সামাজিক-জাতীয়-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, পণ্যের বাজারজাতকরণ, বাসা ভাড়া ইত্যাদি চাহিদা মেটানোর প্রধান অবলম্বন। তৎকালে প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম, লোকবল ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে পত্রিকা প্রকাশও ছিল বহুলাংশে আকাশকুসুম কল্পনা। জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালে প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীগণ উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত পারিবারিক-সামাজিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করা হতো না। অথচ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রাজত্ব, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন মিডিয়ার আবিষ্কার, উদ্ভাবন; ইউটিউব, ব্লগারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর কবিতা-গল্প ও লেখা প্রকাশের সুযোগ এবং আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিস্তার প্রিন্ট মিডিয়ার অস্তিত্ব বিপন্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়া বহুলাংশে অনাদৃত, অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। তা ছাড়া মুদ্রণযন্ত্রের উন্নয়ন এবং কাট ও প্রিন্টের সুবিধা, পত্রিকা প্রকাশের অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপও প্রিন্ট মিডিয়ার ধ্বংসযজ্ঞে গোদের ওপর বিষফোড়া গজাচ্ছে। ফলে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার সাপ্তাহিকীগুলো বর্তমানে প্রতিকূলতার অতলস্পর্শী সাগরে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে এবং যেকোনো মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।
যাহোক, শত্রু-মিত্র; আস্থা-অনাস্থা; আনুকূল্য-প্রতিকূলতা; কুসুমশয্যা-কণ্টকাকীর্ণ পথ; শুভাকাক্সক্ষী-ঘোরতর শত্রুতা ইত্যাদি বৈপরীত্যের মধ্য দিয়েই সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ঠিকানা কায়ক্লেশে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অন্যদের মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাঁটি, কোর্ট-কাছারি এবং আদালত পর্যন্ত গড়ালেও সৌভাগ্যক্রমে একশ্রেণির পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ী নিজেদের সীমিত শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে ঠিকানাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। সুনামের মোহমুক্ত এবং ভদ্র সমাজে অবহেলিত এই বিশেষ গোষ্ঠীর ঐকান্তিক সমর্থন ও অকৃত্রিম পৃষ্ঠপোষকতায় ঠিকানা অসাধ্য সাধন করেছে এবং যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাত নির্ভীকতার সঙ্গে মোকাবিলা শেষে সাফল্যের বরমাল্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই কালের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঠিকানার প্রকাশনা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ^াস। যাহোক, কোভিড-১৯-এর ভয়াবহ ছন্দপতনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে বিনা মূল্যে পাঠকদের হাতে ঠিকানা পৌঁছানো হচ্ছে এবং পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঠিকানা কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপনের সীমিত আয়ে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনের স্থলে স্যালাইন-কোরামিনের সাহায্যে ধড়ে প্রাণ ধরে রাখার আদলে অদ্যাবধি নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে।
উপসংহারে বলতে চাই, নদীর স্রোতস্বিনী প্রবাহের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, পেছনের ঢেউটি সামনের ঢেউকে ধাক্কা মেরে তার স্থান দখল করে নেয়। আর ধাক্কা খাওয়া ঢেউটি তার সামনের ঢেউটিকে সজোরে ধাক্কা মেরে সেই শূন্যস্থান দখল করে নেয়। এভাবে শেষ পর্যন্ত আকাশস্পর্শী ঊর্মিমালা তটে বা নদীর কিনারায় আছড়ে পড়ে ফেনার জন্ম দেয়। আর প্রাকৃতিক নিয়মে ফেনারাশি শুকিয়ে ঊর্মিমালা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও কলকল নাদে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনীর প্রবাহ অনন্তকাল অব্যাহত থাকে। কর্মপ্রবণ বিশ্বচরাচরে আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান বাস্তবে প্রবহমান সামুদ্রিক ঢেউতুল্য। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শেষে আমাদের প্রত্যেককে কর্মস্থল এবং অন্তিম পর্যায়ে জগৎ-সংসারের পাট চুকিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমাতে হয়। একে ঘর-গৃহস্থালি ও সংসারধর্ম পালনকার্যে নিত্য ব্যবহার্য গৃহিণীদের মাটির হাঁড়ি-কলসি-তৈজসপত্রের সঙ্গে তুলনা করলেও আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে অধিকতর যুক্তিসিদ্ধ মনে হয়। প্রচলিত নিয়মে হঠাৎ কোনো আঘাতে মাটির বাসন-কোসন বা তৈজসপত্র ভেঙে গেলে গৃহিণী ভাঙা খোলাগুলো দূরে ছুড়ে ফেলে। কখনো ভগ্ন খোলার জন্য সুবর্ণ মন্দির তৈরি করে না। কর্মপ্রবণ বিশ্বে ঘর-গৃহস্থালির কাজে নিত্য ব্যবহার্য মাটির তৈজসপত্রের মতো নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নির্বাহ শেষে কিংবা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদেরও স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এক কর্মস্থল ত্যাগ ও নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। বিদায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ যেমন দীর্ঘকাল মাথা ঘামায় না, কর্মস্থলত্যাগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দীর্ঘকাল অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন না। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও ঠিকানার ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অতীত সহকর্মী-কবি-লেখক-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক ও কর্তৃপক্ষের স্মৃতিচারণায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। মনের অজান্তেই অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছি এবং চোখ থেকে দু’ ফোঁটা তপ্ত অশ্রু গাল বেয়ে ঝরে পড়েছে। যাহোক, অতীতকে বিদায় এবং নতুনকে উদ্বাহু বাড়িয়ে স্বাগত জানানো জগৎ-সংসারের ধারা। অনবদ্য কারণে উপসংহারে লোকান্তরিতদের আত্মার চিরপ্রশান্তি, অতীত ও বর্তমানে ঠিকানায় দায়িত্বরত সকলের কল্যাণ কামনা এবং ব্যক্তিগত অক্ষমতার জন্য সকলের নিকট ক্ষমাভিক্ষা করছি। আমিন! শুভ এবং সফল হোক ঠিকানার নতুন পথচলা।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
 
কমেন্ট বক্স