পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছোট্ট অরণ্য। খুবই চঞ্চল। রং আর তুলিÑএই ছিল নিত্যসঙ্গী। আকাশ ঘন নীল-রংতুলি দিয়ে ছবি আঁকতে যেত।
অনন্যা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। ছোট ভাই অরণ্যর মতো সেও একজন শিল্পী। দুজনেই মিলে প্রকাশ করে ‘শিল্পী মঞ্চ’। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা মিলে ‘শিল্পী মঞ্চ’ দেখতে গেলাম।
কত বর্ণে, কত ছন্দে ভাইবোনের এই সুন্দর আয়োজনÑঅতীতের সেই স্মৃতি বলার মতো শব্দ আমার জানা নেই।
আমরা সহপাঠীরা অনন্যাকে নাম দিলাম-ফাঁকিঝুঁকি অনন্যা।
অনন্যা বলে বসে, এমন নাম দিলি কেন?
বাহ্্! তুমি বারো মাসে তেরো মাস ক্লাসে অনুপস্থিত।
ওই কারণে ফাঁকিঝুঁকি অনন্যা।
তখনই রংতুলি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ছবি তুলে ধরে। ভাইবোন দুজনের মনের ভেতর এক ব্যতিক্রমী চেতনা।
ফাঁকিঝুঁকি অনন্যার মন খুবই আনমনা।
মন খারাপ কেন?
তোকে তো এটা মানায় না।
মনের মাঝে কী আনাগোনা আমরা কেউই বুঝতে পারছি না।
তোর রংতুলি কোথায়?
নারে আর ভালো লাগে না!
মানে! সবাই আকাশ থেকে পড়লাম। অরণ্য! অরণ্য।
কী হয়েছে, বলবি তো!
অরণ্যর ব্লাড ক্যানসার।
বুঝতে পারলাম, ভাইবোনের এত আয়োজন, আপন প্রকাশ সব হারিয়ে যাচ্ছে।
অনন্যার টেলিফোন পেয়ে ছুটে গেলাম। অশ্রু চোখে বলে যাচ্ছে-
কেন আমাকে ফাঁকিঝুঁকি অনন্যা বলতিস?
দেখ অরণ্য ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। তোরা কি এটা জেনেই এমনটি করছিস?
আমরা কিচ্ছুই বলতে পারি না। আমাদের বন্ধু বেলাল বলে বসে-
অনন্যা! অরণ্য কখনো হারিয়ে যায় না। আমাদের সবার মাঝে লুকিয়ে থাকে ছোট্ট অরণ্য!!
লেখক : ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ
নিউইয়র্ক প্রবাসী