সংবাদপত্রের ঐতিহ্য এবং সাপ্তাহিক ঠিকানা
প্রতিদিনকার ঘটনাবলির মধ্য থেকে ছেঁকে ছেঁকে যেসব খবর সাংবাদিকেরা সংবাদপত্রের পাতায় তুলে আনেন, তা-ই নিউজ বা সংবাদ। আর সেসব খবরসমৃদ্ধ প্রিন্ট এডিশনকেই বলা হয় সংবাদপত্র। সভ্যতার উষালগ্ন থেকে ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে মানুষের পথসৃষ্ট ইতিহাস পর্যায়ক্রমে সুসমৃদ্ধ হয়ে আসছে। সব ইতিহাসের পেছনে একটা কারণ ও বৈশিষ্ট্য বা বিষয় লুক্কায়িত থাকে।
সেই দিক থেকে সংবাদপত্রেরও একটা সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে। দর্শনগতভাবে সংবাদপত্রের বৈশিষ্ট্য হলো, অপ্রচলিতকে একটা সৌকর্যময় সিস্টেমের আওতায় এনে প্রচলিত কার্যকর প্রডাক্টের পরিকল্পিত পুনঃসংযোজন। কিন্তু সাংবাদিকতার ক্রাইটেরিয়ায় মূলত সত্যনিষ্ঠতার আলোকে সঠিক ও নিরপেক্ষতার নিরিখে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করাই হচ্ছে মূল বৈশিষ্ট্য।
আগেকার দিনে প্রযুক্তিগত অপ্রতুলতা ছিল। নিত্যকার ঘটনাবলিকে সংবাদপত্রের পাতায় নিয়ে আসাও খুব একটা সহজ ছিল না। অনেক কঠিন ছিল। এখন অনেক সহজ। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও অগ্রগতির ফলে এখন পৃথিবীর সকল প্রান্তে প্রতিদিনকার সংবাদ মুহূর্তেই ইথারের মতো ছড়িয়ে যায় এবং গণমানুষের কর্ণগোচর হয়।
তবে কালের বিবর্তনে বর্তমান বিশ্বে সেসব খবরের সবকিছুকেই সত্য ভাবা যায় না। কিছু সত্য কিছু মিথ্যার উপাত্তসহ অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে মিডিয়ায় অনেক খবর পরিবেশিত হয়।
মানুষের ভেতরকার সত্যবোধ লোপ পেয়ে অসত্য, মিথ্যাচারের দৌরাত্ম্যে মানুষ স্বার্থের টানাপোড়েনে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে সত্যবাদিতা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা কঠিন।
আগেকার অনেক মানুষ তাদের সম্মানবোধের সাধারণ সীমানা ও সংবাদ প্রকাশের সত্যতা বজায় রাখতেন। কেননা তথ্যগুলোর সোর্স ও মাধ্যম বিশ্বাসযোগ্য ছিল। এখন নানা রকম বৈপরীত্য সেটিকে বাধাগ্রস্ত করছে। তবে এখনো পৃথিবীতে ঐতিহ্যগতভাবে অনেক সংবাদপত্র এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠান আছে, যারা সত্যনিষ্ঠসমৃদ্ধ নিউজ পরিবেশন করে থাকে।
ব্রিটিশ আমলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে সংবাদপত্রসমূহ প্রকাশিত হতো। সরকারি তোষণনীতি পরিহার করে অনেক পত্রিকা গণমানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করেছে। অনেক সময় সরকারের রোষানলে পড়েছে। সাংবাদিকেরা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
একইভাবে তখন থেকে গণমানুষের চাহিদা ও অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ভারতবর্ষের শিল্প-সাহিত্যের জাগরণে ছিল সংবাদপত্রের বিরাট ভূমিকা। কোনো কোনো সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে।
ষাটের দশক থেকে বাংলার শিল্প-সাহিত্যের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, তার পূর্ণতা আসতে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর। আমাদের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা ও শিল্প-সাহিত্য নবদিগন্তের সূচনা করেছে, সেটিকে অব্যাহত রাখা প্রত্যেক সমাজসচেতন মানুষের কর্তব্য। শুধু তা-ই নয়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার লোক ও ছাত্র-শিক্ষক বিদেশে যাওয়া শুরু করেন। পঁচাত্তরের পর সেই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিকের বহির্বিশ্বে যাওয়ার পথ অবারিত হয়। বর্তমানে তা আরও অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ সুগম হবে।বর্তমানে বাংলাদেশের বহুসংখ্যক লোক সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। তাদের সূত্রে বহির্বিশ্বেও বাংলা বইয়ের প্রসার এবং বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, বাংলা সাহিত্যের উন্নয়ন ও বিশ্বায়নে এগুলোই হচ্ছে ঐতিহ্যের ধারক।
আমরা চাই বাংলা সাহিত্যের উন্নয়নে সেই প্রক্রিয়া বিশ্বের সর্বত্র
অব্যাহত থাকুক।ঐতিহ্যগত দিক থেকে ভারতবর্ষে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত তালিকা অনেক। বাংলা ভাষার জাগরণ ও শিল্প-সাহিত্যের উৎকর্ষের জন্য সেগুলো আমাদের ঐতিহ্যের ধারক। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে সেসব পত্রিকার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে।
সংবাদপত্র ছাড়াও ভারতবর্ষে প্রাচীন সাহিত্য পত্রিকার অবদান রয়েছে। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সেসব পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পত্রিকা হলো :
কালিকলম : কল্লোলের আদর্শে কলকাতা থেকে ১৯২৬ সালে ‘কালিকলম’ এবং ঢাকা থেকে ১৯২৭ সালে ‘প্রগতি’ সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রপ্রভাব থেকে দূরে থেকে বাস্তবতাপ্রধান সাহিত্য সৃষ্টিই ছিল এসব পত্রিকার প্রধান লক্ষ্য। আধুনিক নতুন ভাষারীতি, রচনারীতি ও সাহিত্যাদর্শ সৃষ্টিতে সাময়িক পত্রের অবদান স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নে এসব পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য।
মোসলেম ভারত : ‘মোসলেম ভারত’ ১৯২০ সালে কলকাতা থেকে মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় মাসিক সাহিত্যপত্র হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিখ্যাতি লাভের পশ্চাতে এই পত্রিকার বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। সমকালীন খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকদের রচনা এতে প্রকাশিত হতো।
ধূমকেতু : ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা অর্ধ সাপ্তাহিক হিসেবে ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। ধূমকেতুর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল : ‘…এ দেশের নাড়ীতে নাড়ীতে অস্থি-মজ্জায় যে পচন ধরেছে তাতে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না। …দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামী, মেকি তা সব দূর করতে ধূমকেতু হবে আগুনের সম্মার্জনী।’ পত্রিকাটির জন্য ‘আশীর্বাণী’ পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বারীণ ঘোষসহ অনেকে।
অক্ষয় কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী’ (১৮৪৩-১৯৩২), প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪-২৯), বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ (১৯৩৫-৬৫), সজনিকান্ত দাশ সম্পাদিত ‘শনিবারের চিঠি’ (১৯২৪-৬৩), ‘প্রগতি’, ‘কল্লোল’ পত্রিকাসহ অনেক কিছুই বাংলা সাহিত্যে অবদান রেখেছে।
শিল্প-সাহিত্যের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহকরূপে কিংবদন্তি অন্যান্য সংবাদপত্রের মধ্যে মওলানা আকরম খাঁ সম্পাদিত ‘দৈনিক আজাদ’ ও ‘মোহাম্মদী’ মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন সম্পাদিত ‘সাওগাত’ আল-ইসলাহ, মিল্লাত, সংবাদ, নূরজাহান বেগম সম্পাদিত ‘বেগম’, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ‘দৈনিক ইত্তেফাক’সহ এমন অনেক পত্রিকার নাম উল্লেখ করা যায়।
প্রকাশ থাকে, ব্রিটিশ আমলে কলকাতায় দৈনিক আজাদ এবং সাওগাত, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু, লাঙ্গল, জাগরণ, নবযুগ ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে স্বাধীনতাসংগ্রামে বিশেষ অবদান রেখেছিল এবং বাংলা সাহিত্যের সেরা লেখক তৈরি হয়েছিল।
এ ছাড়া কয়েক যুগ ধরে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার গ্রুপের সেরা প্রকাশনার মধ্যে ‘সাপ্তাহিক দেশ’ পত্রিকা বাংলা সাহিত্যের জাগরণে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে।
ঐতিহ্যের মূল্যায়ন করতে গেলে তারও অনেক আগে ১৭৮০ সালে জেমস আগাস্টাক হিকির সম্পাদনায় বাংলা ভাষায় ‘বেঙ্গল গেজেট’ নামে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকার মধ্যে ‘দিকদর্শন’ নামে (১৮১৮ সালে) বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ‘ঢাকা নিউজ’ নামে (১৮৫৬ সালে) বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ১৮৩১ সালে শেখ আলীমুল্লাহর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র’। ১৮৪৭ সালে গুরুচরণ রায়ের সম্পাদনায় বাংলাদেশের রংপুর থেকে প্রকাশিত হয় ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’। ১৮৭৪ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ থেকে আনিসউদ্দীন আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘পারিল বার্তাবহ’। এ রকম আরও অনেক পত্রিকা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বের হতো।
প্রতিটি সংবাদপত্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শ ছিল মননশীলতা ও মুক্তচিন্তার উৎকর্ষ সাধন। মেধাবী ও মননশীল লেখক, কবি-সাহিত্যিকদের সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জাগরণে সংবাদপত্রের রয়েছে মুখ্য ভূমিকা। গণমানুষের জীবনধারার খবরের পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে সংবাদপত্রের যে অপরিসীম অবদান আছে, সেদিকে আমাদের অবশ্যই গুরুত্বশীল হতে হবে।সংবাদপত্রের প্রধান আদর্শ হলো নিরপেক্ষতা, সত্যনিষ্ঠ খবর এবং ভালো লেখা। আমরা জানি, পরাধীন যুগেও বাংলা সংবাদপত্রের ভূমিকা ছিল ইনস্টিটিউশনের মতো। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনার পাশাপাশি সাংবাদিক ও লেখক তৈরিতে বাংলা সংবাদপত্রের ভূমিকা সচল ও বাংলাভাষীদের জন্য ছিল বিরাট অবদান।
প্রতিটি সংবাদপত্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শ ছিল মননশীলতা ও মুক্তচিন্তার উৎকর্ষ সাধন। মেধাবী ও মননশীল লেখক তৈরি এবং কবি-সাহিত্যিকদের সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করা। আমাদের মনে রাখা দরকার, ঐতিহ্যগাথা সংস্কৃতি ও জাতীয় উন্নয়নের সম্প্রসারণ ঘটাতে পারলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা উচ্চকিত হবে। স্বাধীনতার সুবাদে বর্তমানে বাংলাদেশ ও সমগ্র বিশ্বে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার পথ সুগম ও অবারিত হচ্ছে। একই পথের যাত্রী হিসেবে বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্যের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক কাজ করে যাচ্ছেন।
আমি মনে করি, নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকা সেই ভূমিকাটি সুন্দরভাবে রক্ষা করে চলছে। ঠিকানার গৌরবময় অতীতের দিকে তাকালে সহজেই তা অনুভব করা যায়। সংবাদপত্রের প্রধান ও অন্যতম আদর্শ হলো জনগণের স্বার্থে স্বাধীন নিরপেক্ষতার মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সত্যের পক্ষে সাহসী ভূমিকার কারণেই সংবাদপত্র ও মিডিয়া সকল মানুষের প্রিয়। নিউইয়র্কের ঠিকানা পত্রিকাটি আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা মনে রেখে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা। সত্য-সুন্দর কার্যক্রম এবং প্রবাসে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার আদর্শ রক্ষা করে বাংলাদেশিদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় ‘ঠিকানা’র অবদান যেন ম্লান হয়ে না যায়।আসলে যেকোনো উন্নতি ও সাফল্যের জন্য প্রয়োজন দৃঢ়চেতা মনোভাব আর আন্তরিক প্রচেষ্টা। এ মুহূর্তে বেনসকিলের একটি উক্তি মনে পড়ছে। তিনি বলেন,‘চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ অজানাকে জানতে পারে, অসাধ্যকে সাধন করার জন্য উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে।’
এটাও সত্যি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শুধু সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, এটা সমগ্র মানবজাতিরই মৌলিক অধিকার। কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাসও প্রায় সভ্যতার সমান বয়সী। তবে মানুষের সেই সব অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্য সত্যনিষ্ঠ ও সুদৃঢ়ভাবে ন্যায়ের ভিত্তির ওপর সংস্থাপিত থাকা জরুরি। তাহলেই তা ইতিহাসের পাতায় ভালো কাজের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হবে।
আমরা চাই বিশ্বে বাংলা ভাষা ছড়িয়ে পড়ুক। আমাদের সুপ্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের উন্নয়ন। বাংলা ভাষার সম্প্রসারণ ও শিল্প-সাহিত্যের পথ সুগম করা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ সাধন। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে পাঠক ও গণমানুষের ভালোবাসার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
একুশের চেতনায় বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের বাংলা সংবাদপত্রসমূহের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশিদের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। নিউইয়র্ক থেকেও বেশ কয়েকটি পত্রিকা বের হয়ে থাকে। পাশাপাশি অনলাইন পত্রিকাও যুক্ত। এগুলো সংবাদপত্রের জাগরণ ও সংস্কৃতির অংশ। এ বছর ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’ ৩৪-এ পদার্পণ করছে জেনে আমি আনন্দিত। বিগত দিনগুলোতে সার্থকভাবে পত্রিকাটি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রেখে আসছে। ঠিকানার এসব ভালো কাজই একদিন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।
উত্তর আমেরিকায় প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্রের মধ্যে অন্যতম সংবাদপত্র হচ্ছে ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’। ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পত্রিকাটি এখনো টিকে আছে এবং প্রকাশনার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে চলেছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বাংলা সংবাদপত্রকে টিকিয়ে রাখা সহজ ব্যাপার নয়। নানা রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিউইয়র্ক থেকে বেশ কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বহির্বিশ্বের সংবাদপত্রের পাঠক ও সুশীল সমাজের জন্য এটি গৌরবের বিষয়। তেমনই বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে ঠিকানা হোক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ।
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, প্রবাসে বাংলা সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের পথে ঠিকানার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তা-ই হোক আজকের প্রত্যাশা।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
কমেন্ট বক্স