Thikana News
২২ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

প্রবাসে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম

প্রবাসে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম



 
ছোট্ট একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি, সুপার মার্কেটে ঢুকেছি কিছু কেনাকাটা করবো বলে হঠাৎ কানে এলো — মাইশা মাইশা হুয়ার ইউ, খামন …খামন । আমি পেছন ফিরে তাকাই, দেখি ৩-৪ বছরের পুতুলের মতো একটা মেয়ে দৌড়ে লোকটার কাছে এসে বললো, আই এম হেয়ার ডেডি! বাবা তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘ডোন্ট গো ফারউয়ে! বাবা লোকটার উচ্চারণ ছিল বেশ হাস্যকর। যদিও আমার ইংরেজি উচ্চারণ এর চাইতে তেমন একটা ভালো না। তারপরও আমার হাসি পাচ্ছিলো। একটু কৌতূহল হলো, ভাবলাম কথা বলি। জানা গেল তিনি আমাদের এলাকার লোক। জিজ্ঞেস করলাম মেয়ে কি বাংলা বুঝে না? কেন বুঝবে না, আমরা বাঙালি না! তাহলে নিশ্চয়ই ওর মা ইংলিশ! আমি ঠাট্টার ছল করি, কী যা-তা বলছেন ভাই, তিনি আমাকে কপট ধমক দেন। তাহলে ওর সাথে তার মায়ের ভাষায় কথা বলছেন না কেন? আমি প্রশ্ন করি। তিনি বোধ করি এই ধরণের উদ্ভট প্রশ্নের সম্মুখীন হননি কখনো। বললেন, ‘বাংলা শিখে কী হবে, ইংরেজির দেশো? আমার মেয়ে সামনের বছর ইস্কুলে যাইব, ইস্কুলো তো বাংলা চলে না।’ ও বাংলা পারে, এখন আর বাংলার দরকার নাই!’ আমি বললাম তা ঠিক। তবে ওর সাথে বাংলা কথা বলার চর্চা করলে কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না। স্কুলে এরা ঠিকই ইংরেজি বলবে কোনো সমস্যা হবেনা। বাংলাটা চালু রাখেন প্লিজ! আমার এসব আবেগী কথা উনি পাত্তা দেননি। আমার বিশ্বাস এই মেয়ে আর কোনো দিনই তার মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে না।

এইবার আসি নিজের অভিজ্ঞতাতে। আমার ছেলে এই দেশে জন্ম। দেখতে দেখতে কখন যে তার প্রি-কেতে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারিনি। স্কুলে আড়াই ঘণ্টার ক্লাস। আমি এবং আমার স্ত্রী পড়েছি ভীষণ দুশ্চিন্তায়। কারণ সে একটি শব্দও ইংরেজি বলতে পারে না, আমরা কোনোদিন ওর সাথে ইংরেজিতে কথা বলিনি কিংবা আমার হাইস্কুলে পড়ুয়া মেয়েও! প্রথম দিন স্কুলে তাকে নিয়ে রেখে আসতে পারছিলাম না সেকি কান্না! তার কান্না দেখে আমার স্ত্রীও কাঁদার উপক্রম। তখন তার টিচার এসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমাদের বলেন, তোমরা সামনে থেকে চলে যাও এসবে আমরা অভ্যস্ত, জানি কি করতে হবে। তারপরেও আমরা বাসায় না গিয়ে স্কুলের আশপাশে হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাচ্ছিলাম। যদি কখনো ওরা আমাদের কল করে।

ওর যদি বাথরুমে যাওয়ার দরকার হয়, তাহলে কি টিচারকে বলতে পারবে? অনেক বড় রকম ভুল করেছি ওকে ইংরেজিটা না শিখিয়ে। টিচারকেই বা কোন মুখে বলি। বিশ বছর যাবত এই দেশে, ছেলের জন্ম এই দেশে আর এই দেশের ভাষা জানে না! না না আর ভাবা যাচ্ছে না, যেভাবেই হোক টিচারকে বলতে হবে এবং ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। দ্বিতীয় দিন কিছুটা মন খারাপ থাকলেও ও কান্নাকাটি করেনি। তৃতীয় দিন সে আমাদের বলে, তোমরা বাসায় চলে যাও, টিচাররা তোমাদের থাকতে দেবে না ‘এলাউড’ না! আমি ঠিক আছি! একেবারে পাকামো কথাবার্তা! আমরা দুজন আশ্চর্য! একদিন এই বিষয়ে যখন টিচারকে বলতে যাই তখন টিচার যেন আকাশ থেকে পড়লো, বলে আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না তোমরা কী বলতে চাও, ওতো সবই বুঝে এবং ইতিমধ্যে সে অনেক বন্ধু বানিয়ে ফেলেছে। তার প্রমাণ পেলাম কয়েকদিন পর, তাকে আনতে গেছি, দেখি সে টিচারের সাথে হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে, টিচার তাকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছেন! ঘটনা হলো আজকে তাদের খেলাধুলার কোনো সুযোগ ছিল না তাই সে বার বার টিচারকে জিজ্ঞেস করছিল, আজকে কেন তাকে খেলতে দেয়া হলো না ? আমরা দুজনই বেশ স্বস্তি বোধ করি, যাক আমার ছেলে ইংরেজি বলতে পারে! সে বাসায় কার্টুন দেখতো। এই কার্টুনই তাকে ইংরেজি কথাবার্তা বলতে সাহায্য করেছে এবং সেই সাথে স্কুলের শিক্ষাদান পদ্ধতির সুফল বলে ধরে নেই। এরপর ছেলের জন্য ভাষাগত সমস্যার কথা কল্পনায়ও আসেনি! আমার ছেলের ভাষা এখন ইংলিশ এবং বাংলা দুটোই।

আমাদের প্রতিবেশী একটা পরিবারের তৃতীয় সন্তান ফুটফুটে অসম্ভব সুন্দর তিন বছরের মেয়ে কথা বলতে পারে না, তবে উ-আ শব্দ করে। মা যখন নাম ধরে ডাকেন দৌড়ে আসে। ‘সিট’ বললে বসে। ‘ইট’ বললে খায় সারা দিন ধ্যান ধরে টিভি দেখে। তার এক ভাই এক বোন ওর সাথে ইংরেজিতেই কথা বলে এবং ও নাকি ‘রেস্পন্ড’ করে। তবে কথা বলে না। বাবা-মা দুজনই চিন্তিত! ইতোমধ্যে বাসায় ‘স্পীচথ্যারাপিস্ট’ এসে চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছে না! ডাক্তার একদিন প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে মেয়ের মায়ের মুখের ভাষা বাংলা এবং তিনি মেয়ের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করেন। তখন ডাক্তার যে ব্যাখ্যা দিল তার জন্য মোটেই তারা প্রস্তুত ছিলেন না! একটা শিশুর কণ্ঠ নাকি আগে ফুটতে হবে, সেই ফোটা সম্ভব সবচাইতে কাছের মানুষ মায়ের মুখের ভাষার মাধ্যমে। মা সারাদিন কথা বলবেন, ছড়া গল্প বলবেন, খুনসুটি করবেন, শিশু আনন্দ নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা আয়ত্ত্ব করবে যদি-না অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে। মাতৃভাষা হচ্ছে আল্লার নেয়ামত। যেভাবে বলা হয় মায়ের বুকের দুধকে।

ডাক্তার তাদের পরামর্শ দিলেন দেশ থেকে বেড়িয়ে আসতে। সেই পরিবার সামারে দুমাসের জন্য দেশে বেড়াতে গেলেন। দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা, ফুফু, কাজিন ভাই-বোনদের সাথে মিশে কখন যে মেয়ের মুখে কথা ফুটলো কেউ টেরই পাননি! দুমাস পর ও যখন আমেরিকায় আসলো তখন তার মুখে খইফুটে! এখন সে দুই ভাষাই বুঝে এবং বলতে পারে। এমন অনেক উদাহরণ আরও আছে বলে আমার বিশ্বাস! তবে তার এই বাংলাভাষাটা ধরে রাখতে হলে ঘরে বাংলা বলার চর্চাটা রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।

এই প্রবাসে আমরা বাঙালিরা স্বদেশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে কত কিছুই না করছি অহরহ। বাংলাভাষা ও সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যকে বহমান রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। এসব অনুষ্ঠানে আমাদের প্রজন্মদের অংশগ্রহণ কতটুকু স্বতঃস্ফূর্ত তা দেখার প্রয়োজন আছে। যদি তাদের বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় না থাকে এবং একটি শব্দও বাংলা বলতে না পারে তাহলে তাদের কাছে এসব মেলা, দিবস বিরক্তিকর ছাড়া কিছুই না! অনেকে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিভিন্ন দিবসে। বিশেষ করে বাংলাচর্চা বিষয়ক। কিছু কিছু পরিবারের সন্তানেরা অভাবনীয় দক্ষতা প্রদর্শন করলেও বেশির ভাগই দেখা যায় শুধু মঞ্চে উঠা এবং পরের দিন পত্রিকার পাতায় খবর ও ছবি ছাপানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ! একটা বাস্তব উদাহরণ দেই, কোনো এক পিঠা উৎসবের ঘটনা, দুই মহিলা একেবারে বাঙালি সাজে উৎসবে বসে কথা বলছিলেন। কথাগুলো বেশ উঁচ্চস্বরে বলায় সবাই শুনতে পাচ্ছিলেন এবং তাদের মাঝে কোনো জড়তা ছিল না। একজন আরেক জনকে তাঁর বাচ্চারা কোথায় জানতে চাইলে উত্তরে অন্যজন বললেন, তাদের কোনোক্রমেই আনা সম্ভব না- বাসায় কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত। এসব অনুষ্ঠান নাকি ‘বোরিং’। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ছিল ‘পোশাকে বাঙঙলি সাজো’ নামে প্রতিযোগিতা। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে চমৎকার সেজেছে গাঁয়ের বধূ, রাখাল ছেলে, কৃষক, বাউল ইত্যাদি। মোটামুটি চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যের সবকিছু মঞ্চ আলোকিত করছিল। খুব ভালো লাগছিল। খারাপ লাগলো তখনই যখন দেখলাম তাদের বিভিন্ন মজার মজার প্রশ্ন করা হচ্ছে কিন্তু উত্তর দিচ্ছে না, এমন কি তাদের নাম জিজ্ঞেস করলে তাতেও তারা আমতা আমতা করছিল। মনে হচ্ছিল ওরা বোবা। আসল ঘটনা হচ্ছে উপস্থাপিকা ওদের বাংলায় প্রশ্ন করছিলেন। একসময় তা বুঝতে পেরে যখন ইংরজিতে প্রশ্ন করলেন তখন তাদের মধ্যে প্রানচাঞ্চল্য দেখা গেলো। বেশ আহত হলাম! আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, এই উৎসব আসলে কাদের জন্য? আমাদের বুড়োদের জন্য? বাংলাই যখন ওরা বলতে পারে না, মাতৃভাষাই বুঝে না তাদের আমরা বাংলা সংস্কৃতির কতটুকু ধারণাই বা দিতে পারব?
নিউইয়র্কে প্রতি বছর বইমেলা হয়। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এই প্রবাসে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এ উদ্যোগ যদি হয়ে থাকে তবে তা নিঃসন্দেহে মহৎ। এই মহতি কাজের সূচনা করেছিল মুক্তধারা। যার অগ্রযাত্রা এখনো অব্যাহত। বইমেলা এখন নিউইয়র্কে বৃহত্তম সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিনত হয়েছে এবং নাম দেয়া হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব’। দেশীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে তথা শেকড়ের টানে সবসময় চেষ্টা করি সপরিবারে এই ধরনের মেলায় উপস্থিত থাকার। আগে থেকেই ছুটি নিয়ে রাখি বিশেষ করে বইমেলার জন্য। অনেক দিন আগে ঠিক এরকম একটি মেলার অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলাম অডিটোরিয়ামে। পর্বটা ছিল একক লোকসংগীত। প্রবাসের নাম করা একজন লোকসংগীত শিল্পী। প্রবাসে বাংলামায়ের শেকড় সন্ধানী এই শিল্পীর একটা স্কুলও আছে এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলার সুর ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নিয়োজিত রাখছেন নিরন্তর! পত্রিকার বিজ্ঞাপনেও তার এই প্রত্যয়ের কথা বলা থাকে। তিনি গান শুরুর আগে এই দেশে মিউজিকের উপর স্নাতক ডিগ্রিধারী তার মেয়েকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং বললেন যে তার মেয়ে কিছু গান গেয়ে আমাদের শুনাবে। যোগ্য পিতার সুযোগ্যা কন্যার গান শোনার জন্য সবাই উদগ্রীব। পরিচয়পর্বে প্রথমেই মেয়েটি সবিনয়ে ক্ষমা চাইল যে সে বাংলাটা ঠিক মতো বলতে পারবে না! সবাই একটু ধাক্কার মত খেলাম, তবে মনে মনে বললাম অসুবিধা নাই গান গাইতে পারলেই হলো। চমৎকার সুন্দর একটা ইংরেজি গান গাইল। তার অসম্ভব সুন্দর কণ্ঠের কারুকাজ সবাইকে চমকে দিলো! এইবার সে বাংলা গাইবে!! না পর পর চারটি গান সে ইংরেজিতে গেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিল! তারপর বাবা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বেশ অহঙ্কারের সাথে বললেন, এরপর কি আমার গান গাওয়ার সাহস থাকে? প্রবাসে বাংলা পল্লিগানের শেকড় সন্ধানী সেই যোগ্য পিতার সুযোগ্যা কন্যার কণ্ঠ থেকে কি একটি বাংলা গানের লাইনও আশা করতে পারি না ? এই ধরণের ‘হিপোক্র্যাসি’কে কিভাবে ব্যাখ্যা করবো? আমি আমার পরিবারসহ অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে আসি, উনার গান আর শোনার ইচ্ছা হয়নি!

প্রবাসের কর্মব্যস্ততার মধ্যে শুধুমাত্র নিজের পরিবারকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ থাকে বা করি। আমার সন্তানেরা কিভাবে বড় হচ্ছে? তারা কি আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে? এসব চিন্তা কাজ করে। তাই হয়ত বা আমি তাদের যতটুকু পারি সময় দেয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা প্রধান। আমার দুই সন্তান বাংলায় কথা বলে। ওরা ভুলেও বাবা-মার সাথে ইংরেজিতে কথা বলে না। যদিও তাদের ভাষা ইংরেজি। তার মানে এই নয় যে এটা তাঁদের উপর আরোপিত বরং বলা যায় স্বতঃপ্রণোদিত। আমরা যা করেছি তাহলো ঘরের পরিবেশ, খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, পরিধেয় বস্ত্র সব কিছুতেই আমরা বাঙালি। ওরা যা কিছু শিখছে তা স্বতঃস্ফুর্তভাবে আনন্দের সাথে। জানি না কতটুকু পারবো, তার পরেও চেষ্টার ত্রুটি করছি না, তাদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি নিরন্তর। অভিবাসীর এই দেশে আমার সন্তানেরা তাদের স্কুলে বেশভালই করছে, এক্ষেত্রে বাংলা তাদের কোনো সমস্যা করছে না বরং তাঁরা গর্ববোধ করে। মেয়ে স্কুলে ইংরেজিতে বক্তৃতা ও কবিতা লেখার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, প্রিন্সিপাল তাঁকে অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা হিসেবে মনোনীত করেছেন, কই বাংলা তো কোনো সমস্যা করেনি।

বৈচিত্রময় সংস্কৃতির এই দেশে পৃথিবীর নানা অঞ্চল থেকে লোকজন আসে অভিবাসী হয়ে। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে লালন করে যায় প্রতিনিয়ত। তার প্রমাণ আমরা দেখি প্রতি মাসেই কোনো না কোনো দেশের ‘প্যারেড’, যার মাধ্যমে উপস্থাপন করে তাদের দেশকে, সেই সাথে বিভিন্ন ‘কালচারাল প্রোগ্রাম’। প্রত্যেকে একে অপরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে। নিজকে উপস্থাপন করার উপযুক্ত স্থান হচ্ছে এই দেশ। তাই আমাদের উচিত হবে নিজেদের একেবারে খাঁটি বাঙালি হিসেবে উপস্থাপন করা এবং এটাই আমদের অহঙ্কার হওয়া উচিত। সেই সাথে মাতৃভাষার চর্চা। একটা দেশের সংস্কৃতির সাথে ভালো পরিচিতি লাভ করার জন্য প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সেদেশের ভাষা। সেই প্রধান মাধ্যমেই যেখানে গলদ সেখানে এই মেলা উৎসব পার্বন দিয়ে কোনোভাবে আমাদের প্রজন্মকে উৎসাহিত করা সম্ভব নয় বলে আমার বিশ্বাস।

আমরা অভিবাবকরা হয়তো ভুলে গেছি, বেশি ভাষা জানা একটা অতিরিক্ত যোগ্যতার পর্যায়ে পড়ে। এই দেশে যখন বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করা হয় বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কোনো পদে তখন ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। তাছাড়া অনেকেই হিন্দি ও উর্দু ভাষার সাথে পরিচিত বাসায় টিভি চ্যানেল থাকার সুবাদে।

প্রতিবার মহান ভাষাদিবস এলে আমরা অনেক আবেগ মিশ্রিত কথা বলি। আসুন সেই কথাগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করি। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের সন্তানেরা দুই পরিবেশে বড় হচ্ছে, বাসা থেকে বেরুলেই তাঁর আলাদা জগত। আমাদের কাজ হবে এই দুই ভুবনের মাঝে সুন্দর এক সেতুবন্ধন রচনা করা, যাতে করে সে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। কোনোভাবেই যেন আরোপিত মনে না করে, দুই ভুবনে তাঁদের বিচরণ যেন হয় স্বতঃস্ফুর্ত। সবাই যদি ওয়াদা করি, আমার সন্তানদের সাথে বাসায় শুদ্ধ বাংলায় কথা বলব, ঘরের পরিবেশ হবে পুরোপুরি বাংলাদেশি, ঘরটাকে বানিয়ে ফেলবো একখণ্ড বাংলাদেশ এবং সেই সাথে সন্তানদের প্রচুর সময় দেবো, তবেই আমাদের এই সব মেলা, উৎসব পালন, সাহিত্য চর্চা সার্থক হবে।

লেখক : ছড়াকার ও কলামিস্ট।
কমেন্ট বক্স