Thikana News
২২ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

পারস্পরিক আচরণ বাংলা ভার্সন

পারস্পরিক আচরণ বাংলা ভার্সন



 
জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মানুষের প্রতি মানুষের রয়েছে ভালো আচরণ ও পারস্পরিক সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার। নাগরিক হিসেবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর নিকট যেমন রয়েছে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার অধিকার, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে ভালো ব্যবহার ও সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার।

আমরা বেশির ভাগ বাংলাদেশিই ওই বিষয়গুলোকে পাত্তা দিই না। আমাদের অনেকের ধারণা, সারা জীবন মানুষের সঙ্গে স্বার্থপরের মতো আচরণ করব, ঘুষ খাব, টাকা নিয়ে বিচার-আচার করব, দুর্বলদের ওপর জুলুম করব, ওজনে কম দেব, মরা মুরগি বিক্রি করব, রেস্টুরেন্টে মানুষকে বাসি খাবার খাওয়াব, খাদ্যে ভেজাল করব, আমানতের খেয়ানত করব, ফাইল আটকে দুর্নীতি করব, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করব, মানুষকে রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করব, নিজের কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন না করে সর্বদা জাতির গুষ্টি উদ্ধার করব আর বয়স হলে দাঁড়ি রেখে, পাঞ্জাবি পরে, টুপি মাথায় দিয়ে নিয়মিত মসজিদে যাতায়াত করব। আমাদের অনেকেরই প্রত্যাশা বৃদ্ধ বয়সে এসে আল্লাহ‌র হুকুম-আহকাম পালন করে কান্নাকাটি করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন। বিনিময়ে আমরা মৃত্যুর পর অনন্তকাল জান্নাতে জীবন অতিবাহিত করব।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অন্যকে তাদের হক ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আল্লাহ‌র সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি যে আসলে সঠিক পদ্ধতি নয়, তা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে, তার পরও আমরা আল্লাহ‌র বিশেষ করুণার আশায় বসে থাকি। অথচ মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) একজন মানুষের প্রতি মানবীয় আচরণ ও পারস্পরিক হক ও অধিকারকে ওনার জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

আমরা অনেকেই জানি না, মানুষ হিসেবে আমার প্রতি অন্য মানুষের কী অধিকার রয়েছে। পরিচিত বা অপরিচিত একজন মানুষ যখন আমাকে গুরুত্ব দিয়ে হাসিমুখে কথা বলে, তখন বোধ করতে পারি তার প্রতি এটা ছিল আমার অধিকার। একজন বিনয়ী মানুষের প্রতি অটোমেটিক্যালি আমাদের মন থেকে দোয়া বা শ্রদ্ধা চলে আসে। আমাদের দেশের কিছু রিটায়ার্ড সরকারি অফিসার ও রাজনীতিবিদ রয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ওনারা অনেকেই সারা জীবন মানুষকে ধমক দিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহির করে এসেছেন। অবসরে যাওয়ার পর ওনাদের ক্ষমতা চলে গিয়েছে কিন্তু দেশে-বিদেশে ওনাদের আচরণ সেই আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। কতিপয় সেসব মানুষ জীবিত থাকতে অন্য মানুষকে শান্তিতে রাখেনি, মৃত্যুর পর ফেরেশতাদেরও শান্তিতে রাখবে না!
অনেকেই আবার নিজ ঘরে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে শান্তিতে নেই, বউয়ের দাবড়ানি খেয়ে অনেকেই বীরপুরুষের ভূমিকা পালন করতে না পেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে সে ঝাল ঝাড়েন নিরীহ বাস কন্ডাক্টর, সিএনজিওয়ালা বা অফিসের পিয়নের ওপর। বাকি যেটুকু ঝাল থাকে, তা ভাগ্যে থাকে পাড়ার মুদিওয়ালার ভাগে।

স্বামীর ধমক ও খারাপ আচরণের শিকার বাঙালি নারীদের ধৈর্য ও মহানুভবতার কথা সারা জীবন শুনে এসেছি। এবার সম্ভবত তারা জেগে উঠেছে, মা-চাচিদের যুগ পেরিয়ে এবার নব নারীদের যুগ এসেছে। যেখানে গতিপথ সম্ভবত উল্টে গিয়েছে, তাই বেশির ভাগ পুরুষদের অন্তরেই আজ বিরহের সুর।

নিজের অজান্তেই আমাদের অনেকের মধ্যেই ধন-সম্পদ, শিক্ষা ও ক্ষমতার অহংকার কাজ করে। তাই অন্যকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতে আমাদের কষ্ট হয়। অথচ আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত কত শত অহংকার ধসের ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ ব্যবসায় লস খেয়ে পথে বসে যাচ্ছে, কেউ শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ছে, কেউবা ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ছে। আমরা সেসব উদাহরণ থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করি না। আর কিছু শিখলেও তা নিজেদের জীবনে ধারণ করি না।
বিজয় সরকারের একটি গানে বলা হয়েছে :
‘মহা ঘুমে আমার যখন মুদিবে দুই চোখ
পাড়াপড়শি প্রতিবেশী পাবে কিছু শোক
শেষে আমি যে এই পৃথিবীর লোক ভুলে যাবে সবে।’
আমরা এখন যেসব সম্পদের মালিক, গত পাঁচ-সাত পুরুষ পূর্বে এ সম্পদের মালিক কে বা কারা ছিল, আমরা তা জানি না। অর্থাৎ আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে সর্বশেষ পাঁচ-সাতজন ছাড়া বাকিদের নাম আমরা জানি না। তার মানে আমাদের নাতি-নাতনিদের দু-এক প্রজন্ম পরই আমার নাম আর এ পৃথিবীতে থাকবে না। তবে সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য যদি আমরা কিছু করে যেতে পারি, তবে হয়তো মানুষের মুখে আমার নামটা থেকেও যেতে পারে। তাই আত্ম-অহংকার ভুলে শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের উচিত পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি করা ও অন্যের প্রতি সর্বদা বিনয়ী হওয়া।

লেখক : কলামিস্ট, ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক।
কমেন্ট বক্স