Thikana News
০২ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫
আরাকান করিডোরে গোপন মতানৈক্য ♦ আওয়ামী-বিরোধী বিএনপি-জামায়াত-এনপিসি’র অনৈক্য

জাপা-জোটকে জেতাতে ‘র’-এর ফাঁদ 

জাপা-জোটকে জেতাতে ‘র’-এর ফাঁদ 
দেশে আওয়ামী-বিরোধী প্রধান দল তিনটি। বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রদের নবগঠিত দল ‘এনসিপি’। মাঠ পর্যায়ে তিনটি দলেই চলছে মহাবিরোধ। সভা-টিভি-টকশো-তে বহমাত্রিক আক্রমণ। তিনটি দলই প্রস্তুতি নিয়েছে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের। ৩০০ আসনেই তিনটি দলেরই প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত। সমমনা ছোট ছোট দলগুলোও সমাদৃত হচ্ছে। তিনটি দলই তাদের জোটে টানছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও হাসিনা-বিরোধী। 
মাঠজরিপ মতে ৬২% ভোট তাদের প্রাপ্য। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও জাপার মুঠোয় ৩৮%। সেটি বেড়ে ৪০ শতাংশও হতে পারে। নির্বাচনী পূর্বাভাষকে ঘিরে পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র-’এর প্রতিনিধিরাও ব্যস্ত। 
বিএনপি, জামায়াত-এর ভারত সম্পৃক্ততা ‘টক অব দ্যা টাউন’। কথিত এজেন্ট সন্তোষ শর্মা ছিলেন জামায়াত-মঞ্চে। তথ্য মতে, মহলটি চায় আওয়ামী-বিরোধীদের অনৈক্য। তাদের ভোট ভাগাভাগি হলে আওয়ামী লীগ-জাপায় সুবাতাস। জোটের মাধ্যমে ভোটের কপালে পরাবে বিজয়ের টিপ। তবে রাজনীতির দমকা হাওয়া দক্ষিণে। ‘আরাকান মানবিক করিডোর, গড়েছে বাংলাদেশ’ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে অভিনব পদক্ষেপ। জাতিসংঘের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি গোপনে চলমান। এক্ষেত্রে সরকারের সাথে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি’র গোপন সমঝোতা। চীনের সহযোগিতায় ‘নতুন রাষ্ট্র’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। একই ইস্যুতে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বৈঠকও হয়েছে। লন্ডন বৈঠকের বিষয়টি রাখা হয়েছে নিচ্ছিদ্র গোপন। 
ঐ প্রকল্পের কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন। কারণ ড. ইউনূসের আকাঙ্খা-নতুন রাষ্ট্র হোক। আরাকান বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের বিরোধ চরমে। সমাধান পেতে নতুন রাষ্ট্র গঠনেও আপত্তি থাকছে না।

ভারতের কৌশলে যেভাবে জন্ম বাংলাদেশ-এর সেভাবেই ‘রোহিঙ্গা-রাষ্ট্র’ গড়তে চলছে প্রক্রিয়া
১৯৭১ সালে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের বিরোধ ওঠে চরমে। সুযোগটি কাজে লাগায় কৌশলী ভারত। পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববাংলাকে যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৬২-এর স্বাধীন নিউক্লিয়াস গঠনের নেপথ্যেও ভূমিকা রাখে। পাক-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দিয়েছিলো বাতাস। ৭ মার্চের ভাষণকালে বঙ্গবন্ধুর মুখে চেয়েছিলো ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’। ১৯৭১-এর জানুয়ারিতেই পাকিস্তানের জন্যে ভারতের আকাশ নিষিদ্ধ করে। এ জন্যে একটি বিমান হাইজ্যাকের নাটক সাজানো নয়। ‘র’-এর তৎকালীন প্রধান মি. কাও আত্মজীবনীতে লিখেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সরকার গঠন, শরণার্থী সেবা। শতভাগ সার্ভিস নিশ্চিৎ করে কৌশলী ভারত। ফলে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশের জন্ম’। 
একইভাবে ‘রাখাইন রাজ্যে’ ‘রোহিঙ্গা রাষ্ট্রে’র জন্ম-প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু উল্টো ১ লাখ ২০ হাজার যোগ হয়েছে। বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছে না নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা। বরং তাদেরকে দিয়ে স্বাধীন ‘রোহিঙ্গা-রাষ্ট্র’ গঠনের প্রত্রিয়া চলমান। 

কেয়ারটেকার সরকারের প্রথম প্রস্তাবক গোলাম আজম ॥ ‘রোহিঙ্গা রাষ্ট্রের’ও প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবক জামায়াত
বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ পদ্ধতি ফিরছে। ১৯৯৬ সালের মার্চে বিএনপি সরকার বাস্তবায়ন করেছিলো। আওয়ামী লীগ, জাপা, জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন করে। ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলো বিরোধী পক্ষ। ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১-এর নির্বাচন করে তত্ত্বাবধায়ক। ২০১১-এ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আদালতের রায়ের সূত্রে বাতিল করে। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এর নির্বাচন করে ‘হাসিনা সরকার।’ নেতারা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ তত্ত্বটি তো আমাদের না। অতএব সেটি বাতিলে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগিনি। 
উল্লেখ্য, ১৯৯০-এ প্রস্তাবটি প্রথম দিয়েছিলো ‘জামায়াত’। তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আজম প্রস্তাবনাটি দেন। নির্বাচনকালীন বিরোধ, সংঘর্ষ, অবিশ্বাস ঠেকাতে এই প্রস্তাব। সেই  ‘কেয়ারটেকার’ প্রস্তাবনাটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াত-জাপাকে সঙ্গে নেয়। নতুন নামে শুরু করে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ আন্দোলন। বিএনপি নেতৃত্বের সংসদে সেটি পাশ করানো হয়। ২০১১-এ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তা বাতিল করে। 
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ নির্ধারিত ছিলো সর্বোচ্চ তিনমাস। ৫ আগস্ট ২০২৪ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালান। মন্ত্রীসভা, সংসদ, দল- সবাই পলাতক। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতিতে দেশ ছিলো শুন্য-সরকারে। রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবিধানিক ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার গড়েন। ১০৬ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নেন। ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ড. ইউনূস সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এই ‘অন্তর্বর্তী সরকারে’র সুনির্দিষ্ট কোন মেয়াদকাল নেই। 
ড. ইউনূসের ক্ষমতা যাপন নিয়ে ভারত ও হাসিনা গং উদ্বিগ্ন। এজন্যে অতিদ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সৃষ্টি করছে চাপ। ভূতলবাসী আওয়ামী লীগ নেতারা চাচ্ছে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ প্রত্যাবর্তন। নিজেদের হাতে জবাই করা পদ্ধতিটিকে ভাবছে সেরা রক্ষাকবচ। 
রোহিঙ্গা-রাষ্ট্রের প্রস্তাবনা দিয়ে জামায়াত এখন আলোচিত। মহাচীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পদক্ষেপ গ্রহণের। অন্যদিকে ‘র-সংস্থা’ জামায়াত-ঘনিষ্ঠ হয়েছে বলে অভিযোগ। সাম্প্রতিক সূধী সমাবেশে অতিথি করেছে সন্তোষ শর্মাকে। তিনি ‘কালবেলা’ পত্রিকার সম্পাদক। পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটির শীর্ষ নেতা। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ‘র’ গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে। 

নির্বাচনী জরিপের তথ্যে হতবাক বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ॥ আরাকান কারিডোর ইস্যুতে গোপন সমঝোতা
নির্বাচন নির্বাচন করে উতলা হয়ে উঠেছিলো বিএনপি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাঠজরিপ দেখে হতবাক তারা। প্রথমত, সারাদেশে চাঁদাবাজিতে বিএনপি এগিয়ে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলে ভরানোর ঘোষণা দিয়েছেন। মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শাসনবার্তা দিয়েছেন। তারপরও দখল, তদ্বির, সন্ত্রাস অব্যাহত। মাঠ পর্যায়ে এনপিসি’র সমন্বয়কেরাও সমালোচিত। অর্থ আদায় বিষয়ে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে চলছে বিরোধ। দুটি দলের কার্যক্রমের প্রকাশ্য নিন্দা করছে জামায়াত। 
দুজন উপদেষ্টার এপিএস ৭০০ কোটি টাকা কামিয়েছে। এমন অভিযোগ এনপিসি ঘনিষ্ঠ তরুণ কর্মকর্তার প্রতি। টিভিতে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করছে বিএনপি নেতা। বলছে শেখ হাসিনার পিয়ন ৪০০/৫০০ কোটি টাকা কামিয়েছে। সেটি ঘটেছিলো ১৫/১৬ বছরে। কিন্তু ৭/৮ মাসেই ৭০০ কোটি টাকা, কী তান্ডব। জামায়াত অভিযোগ করছে সতীর্থ দল দুটির বিপক্ষে। বলছে, মাঠ পর্যায়ে চর দখলের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বিএনপি, এনসিপি। 
অন্যদিকে এনসিপি ভারত ইস্যুতে বিএনপি-জামায়ত-কে আক্রমণ করছে। আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভোট করার প্রস্তাবনাকে নাকচ করছে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শুধু নয়। প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দিনকেও ভারতের দালাল বলছে। বিবদমান পরিস্থিতিতে এককভাবেই নির্বাচনে আগ্রহী দল তিনটি। কিন্তু নির্বাচনী মাঠজরিপ তাদেরকে হতাশ করেছে। আওয়ামীবিরোধী দলগুলোর প্রাপ্য ভোট সর্ব্বোচ্চ ৬২ শতাংশ। এককভাবে নিবার্চনে পরিস্থিতি দাঁড়াবে-
০১. বিএনপি+জোট  = ৩২%
০২. জামায়াত+জোট = ১৪%
০৩. এনসিপি+জোট = ১১%
০৪. ইসলামী দল+অন্যান্য = ৫%
সর্বমোট= ৬২%
অন্যদিকে আ.লীগ+জাপা জোট = ৩৮%।
অর্থাৎ এককভাবে ভোট করলে জয় পাবে আওয়ামী লীগ-জাপা জোট। তবে কোনভাবেই শেখ হাসিনাকে দলীয় প্রধান রাখা যাবে না। গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর জরিপেও একই চিত্র। বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও মাঠের পরিস্থিতি জানিয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন অধিকাংশই আওয়ামীপন্থী। ভাতাধারী মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রদায়ও ‘নৌকা মার্কায়’ আসক্ত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও মূলত আওয়ামী প্রেমী। 
আওয়ামী লীগের গবেষক দলও বসে নেই। দুটি অপসন সামনে নিয়ে তারা এগুচ্ছে। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক জাতিসংঘ রিপোর্ট। তাতে সব দল নিয়ে নির্বাচনের নির্দেশনা রয়েছে। সে মতে, ইউনূস সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে রাখবে। জাতীয় পার্টিকেও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অতএব আওয়ামী লীগ-জাপা জোট ভোটে থাকছে। আর তাতে ‘গণেশ ওল্টানো’ ফলাফল আসতে পারে। শর্ত একটাই- এককভাবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি’র ভোটে অংশগ্রহণ। 
সেই বিষয়টি নিশ্চিৎ করতেই দায়িত্ব পেয়েছে ‘র’। বিএনপি-জামায়াতকে রাজি রাখতে চলছে গোপন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের সরকারপক্ষও বিষয়টি জানে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কানে বাস্তবতাটি তুলেও ধরেছে। ফলে দ্রত লন্ডন গিয়েছিলো জামায়াত নেতারা। শীর্ষ পর্যায়ে আলোচ্য বিষয় ছিলো দুটি। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন। রোহিঙ্গা-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘আরাকান-করিডোর’কে সমর্থন দান। উল্লেখ্য, জামায়াতের নির্বাচনী নিবন্ধন এখনও নিশ্চিৎ হয়নি। ২০১৮-তে ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছিলো। প্রয়োজনে আবারও ধানের শীষেই প্রত্যাবর্তন ঘটাবে তাদের।
 
কমেন্ট বক্স



9