Thikana News
০২ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

অর্থনীতিতে আবহাওয়ার ভয়ংকর কুপ্রভাব

অর্থনীতিতে আবহাওয়ার ভয়ংকর কুপ্রভাব
দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া, যার ভয়ংকর প্রভাব পড়তে চলেছে প্রকৃতির ওপর। যে এলাকা একসময় হা-বৃষ্টি, হা-বৃষ্টি করে কাটাত, সেখানে এখন বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝমিয়ে। আর অঝোর ধারার বৃষ্টিতে বানভাসি হতো যে অঞ্চল, সেখানে এখন প্রায়ই হচ্ছে খরা। জলবায়ুর পরিবর্তন যে হচ্ছে, তার আরও প্রমাণ-বরফ গলছে সুমেরু-কুমেরুর। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জেরে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে বিশ্ব অর্থনীতি। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৩৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
জলবায়ুর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে তীব্রতর হারিকেন, বন্যা ও তাপপ্রবাহ। এতে মার্কিনিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার প্রভাবে মার্কিন নাগরিকেরা জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে ব্যাপক উদ্বিগ্ন।
উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি ক্রান্তীয় বিঘ্নের কারণে ফ্লোরিডার দক্ষিণাঞ্চলে টানা কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে সেখানে বিরল ফ্ল্যাশ-বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্য একটি প্রবল ঝড় বর্তমানে টেক্সাসের কাছে ঘুরছে এবং জাতীয় হারিকেন কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি একটি ক্রান্তীয় অবনমন গঠন করতে পারে। এমনকি যদি উভয় রাজ্য এখন বড় ঝড় থেকে বাঁচেও, তবে সহসাই আবারও হুমকির মুখে পড়বে।
জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, চলতি গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্র তার দশকের সবচেয়ে খারাপ হারিকেন মৌসুম দেখবে। এরই মধ্যে ফিনিক্সে জড়িত তাপপ্রবাহগুলো এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, কিছু বিশ্লেষক তাদের সর্বশেষ অবস্থাকে ‘তাপের হারিকেন ক্যাটরিনা’ হিসেবে অভিহিত করছেন।
মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তীব্র তাপ সতর্কতা পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ সময় জ্বালানির চাহিদা আকাশচুম্বী হবে। কারণ মানুষ তাদের এয়ার কন্ডিশনার চালু করবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এ বছর ১১ বিলিয়ন ডলার বিপর্যয় দেখেছে, যার মধ্যে কয়েক সপ্তাহ আগে আইওয়ায় আঘাত হানা টর্নেডোগুলোও অন্তর্ভুক্ত। ইতিমধ্যে বাজেট সংকটে ভুগছে FEMA এবং বিপর্যয় বন্ডের বিক্রি সর্বকালের সর্বোচ্চ।
শুধু তা-ই নয়, আবাসন ও হাউজিং খাতে খরচ বাড়ার কারণে বাড়িভাড়ার দাম বাড়বে। জ্বালানি ক্ষেত্রে মোটর ফুয়েল সস্তা হতে পারে, কিন্তু বাড়ির ব্যবহারের জন্য জ্বালানি এবং বিদ্যুতের দাম এখনো বেশি। বিমাকারীরা দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে গাড়ির জন্য প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবাসিক বিমার ক্ষেত্রে সরবরাহকারীরা ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও নিউ জার্সির মতো রাজ্যগুলো থেকে হয় প্রত্যাহার করছে অথবা তাদের দাম নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই রাজ্যগুলো সুপারচার্জড চরম আবহাওয়া, যেমন বন্যা, বৃষ্টি, তাপপ্রবাহ এবং খরার সম্মুখীন হয়েছে।
জাতীয় আইনপ্রণেতারা আশঙ্কা করছেন, বিমা সংকট শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর রিয়েল এস্টেট খাতে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। এ ছাড়া আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে ওই রাজ্যগুলোতে। যেমন উৎপাদিত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোর কৃষি ফলন (ফল, বাদাম, ভুট্টা, চিনি, সবজি, গম) অত্যধিক তাপ এবং মাটির পুষ্টির অবনতির কারণে হ্রাস পাবে।
ফ্লোরিডা কমলা ও চিনির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার পাশাপাশি আক্রমণাত্মক ফসল রোগের কারণে সেই রপ্তানিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলবায়ুর প্রভাব আমেরিকান পশুপালনের মধ্যেও বার্ড ফ্লুর বর্তমান পথ এবং বিস্তারে প্রভাব ফেলতে পারে। এর মানে হলো মাংস ও দুধের দাম বৃদ্ধি। তবে এর প্রভাব শুধু মুদি দ্রব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আধুনিক জীবনের প্রতিটি মৌলিক উপাদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য : শ্রম, অভিবাসন, ভ্রমণ, গৃহনির্মাণ, পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য উপকরণ। জলবায়ুর প্রভাব কাঠ, তামা ও রাবারের দাম বাড়িয়েছে, এমনকি চকলেটের দামও দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আফ্রিকান কোকো বিন ফসলের ওপর প্রভাব ফেলে। বিশ্ব অর্থনীতির যে ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে, তার জন্য সিংহভাগ দায়ী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। পাশাপাশি রয়েছে ঝড় ও বৃষ্টি। অদূর ভবিষ্যতে এই ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে ৫০ শতাংশ। কেবল তা-ই নয়, এক অঞ্চল থেকে অন্যত্র এই ক্ষতির পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
এখন থেকেই যদি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনে ব্যাপকভাবে রাশ টানা না হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো বিশ্ব অর্থনীতি।
কমেন্ট বক্স