Thikana News
০২ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

বাইডেনের এখন দুঃসময়

বাইডেনের এখন দুঃসময়
কয়েকদিন পূর্বে আমার এক প্রতিবেশীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। প্রতিবেশীর নাম মিসেস মারিয়াম্মা। তিনি দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের অধিবাসী। কয়েক যুগ ধরে তিনি আমেরিকায় বাস করছেন। কর্মজীবনে নার্স হিসেবে জ্যামাইকা হসপিটাল সেন্টারসহ আরও দু-একটি হাসপাতালে কাজ করে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। একটি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় কাজ করা কালে আমার তার কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ হয়। এখন থেকে আমার সঙ্গে তার ও তার স্বামীর সখ্যতা। মাঝে মধ্যে মিসেস মারিয়াম্মা এটাসেটা নিয়ে আমার সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন। দু-একবার তিনি আমার বাসায় এসে আমার সঙ্গে বসে চা-বিস্কুটও খেয়েছেন। সায়টিক ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ইদানীং তিনি তেমনভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। ফোনে কথার শুরুতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গভর হতাশা ব্যক্ত করে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করেন। বিশেষ করে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বিদেশিদের তার ভাষায় অবাধে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে বাইডেন অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছেন বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি ১১ জুন নিউইয়র্ক ফিলাডেলফিয়া ও লস এঞ্জেলেস থেকে মার্কিন ইমিগ্রেশন পুলিশ (ICE) কর্তৃক আটজন সন্দেভাজন সন্ত্রাসী আটকের ঘটনার উল্লেখ করেন, যাদের সবাই সম্প্রতি দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। তথ্যমতে, এরা আইসিসের খোরাসান গ্রুপের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পেছনে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে তিনি ধারণা করেন। বস্টন  ম্যারাথন ও সাম্প্রতিকালে মস্কোর কনসার্ট হলে যে ধরনের সন্ত্রাসী হামলা সংগঠিত হয়, সে ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত হতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি জানান তিনি ও তার স্বামী এযাবৎকাল পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিলেও আগামীতে বাইডেনের পক্ষে দেশে বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে না বিবেচনা করে তারা এবার রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন।
বিভিন্ন জনমত জীরপে বহু মার্কিন নাগরিককে মিসেস মারিয়াম্মার অনুরূপ মনোভাব ব্যক্ত করতে দেখা যায়, যে কারণে মানুষের মধ্যে বাইডেনের গ্রহণযোগ্যতা নিকট অতীতের সব প্রেসিডেন্টের নিচে (৩৭.৪ ভাগ) রয়েছে। তার কথার এক ফাঁকে আমি বললাম, ইদানীং বায়ডেন ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে প্রায়ই বলছেন, ‘Trmp is all about him and, I (biden) am all about the country’ অর্থাৎ ট্রাম্প কেবল নিজের স্বার্থই দেখেন আর আমি (বাইডেন) দেখি দেশের স্বার্থ। আমার কথা শুনে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছুটা উত্তেজিত কণ্ঠে বলরেন, সিরিয়াসলি, বাইডেন সত্য কথাটাই বলেছেন। তবে তিনি দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিতে বা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হয়, সে ধরনের কিছু নয় বরং কীভাবে দেশকে রসাতলে নিতে হয়, সে কাজটা তিনি ভালোভাবেই করছেন। বাইডেনের বিরুদ্ধে তার মধ্যে ক্ষোভের মাত্রাটা যে কতোটা গভীর, সেটা আমি বিলক্ষণ অনুধাবন করতে সক্ষম হই।
কুইনিপিয়াক বাদে সাম্প্রতিক প্রায় সব জনমত সমীক্ষায় নির্বাচনে বিজয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৭টি দোদুল্যমান (swing) রাজ্যের ছয়টিতে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে জনপ্রিয়তার বিচারে চার-পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বলে দেখা যায়। শুধু উইসকনসিনে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। গত নির্বাচনে বাইডেনে এসব রাজ্যের প্রায় সব ক’টিতে বিজয়ী হয়েছেন। জনমত জরিপ অনুযায়ী এবারে যে সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলে প্রতীয়মান হয়। মুদ্রাস্ফীতি, বর্ডার ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে মানুষ বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের উপর অধিক আস্থা রাখেন বলে দেখা যায়। গ্যাস গ্রোসারি সামগ্রী, বেবিফর্মুলা, ডাইপারসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু মানুষকে বাইডেন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ কারণে বাইডেনের ট্রাম্প বিরোধী প্রচার-প্রচারণা মানুষের মধ্যে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময়ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রচাণা চালানো হয়। বলা হয় ট্রাম্প দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক এবং তাকে ক্ষমতায় বসানোর অর্থ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ সমূহ বিপদ ডেকে আনা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও এটাই সত্য যে, ট্রাম্পের আমলে এররূপ তেমন কিছু ঘটেনি। সে সময় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১.৪ ভাগ যা বাইডেনের আমলে ৯ ভাগে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসসহ সকল পণ্যের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। বর্তমানে পণ্যমূল্য আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মানুষের মধ্যে একরকম নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে বলা যায়।
ইউক্রেন ও ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় আগামীতে বিশ্ব পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উৎকণ্ঠা বিদ্যমান রয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর পরও ইসরাইলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ও ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র প্রেরণের কারণে বাইডেনে ইতোমধ্যে ‘জেনোসাইড জো’ নামে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। এ কারণে জনগণ বিশেষ করে ছাত্র ও তরুণ সমাজের মধ্যে বাইডেনের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে দেখা যায়। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু সমাধান না করে ২৪ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দানের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিবি নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই আমন্ত্রণের পেচনে রিপাবলিকান হাউজ স্পিকার মাইক জনসন, সিনেট মাইনরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেল ও মেজরিটি লিডার ডেমোক্র্যাট চাকশুমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি কোর্ট কর্তৃক নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (Warrant of arrest) জারি রয়েছে। এ রকম একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে কংগ্রেসে ভাষণ দানের সুযোগ দেয়াকে বহু মার্কিন নাগরিক সুনজরে দেখছেন না।
বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাইডেনের যে এখন দুঃসময় চলছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
লেখক : কলামিস্ট।
কমেন্ট বক্স