Thikana News
০২ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪
২৫ স্পট চিহ্নিত * টার্গেট উঠতি বয়সীরা * উদ্বিগ্ন অভিভাবক

মাদক ব্যবসায় এমএলএম পদ্ধতি

মাদক ব্যবসায় এমএলএম পদ্ধতি
নিউইয়র্ক শহরে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে মাদকের ব্যবসা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশি উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে এলএমএল পদ্ধতিতে মাদক ব্যবসার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। এই পদ্ধতিতে ব্যবসার যত বিস্তৃতি ঘটছে, মাদক কারবারীরা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হচ্ছে। এলএমএল ব্যবসার নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলা যেমন কঠিন, তেমনি মাদক ব্যবসার এমএলএল পদ্ধতিও সহজে নিমূর্ল করা যায় না। ফলে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে। 
মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে সাধারণত পণ্য বেচাকেনা হয়। অনেকে এই ব্যবসাকে হায়-হায় কোম্পানি বলে থাকেন। বিশ্বের বহু দেশে এই ব্যবসাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পণ্য বিক্রির টার্গেট দিয়ে একেকজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে জালে আটকানো হয়। সেখান থেকে বিনিয়োগকারীর আর ফিরে আসার সুযোগ থাকে না। তেমনি এমএলএম পদ্ধতির মাদক ব্যবসায় জড়িতরা আর ফিরতে পারছে না স্বাভাবিক জীবনে। 
জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে ও গোপনে মাদক বেচাকেনা চলছে। পুলিশ মাদক ব্যবসার ২৫টি স্পট ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে। এ পর্যন্ত শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবাক বিষয় হলো- মাদক ব্যবসায় বাংলাদেশি অনেক তরুণ-তরুণি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশের কাছে এমনও তথ্য আছে যে এসব তরুণ-তরুণী প্রথমে মাদক সেবন করতো। মাদকসেবনের খরচ যোগাতে তারা এখন মাদক ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন। অনেক অভিভাবক বিষয়টি জানার পর সন্তান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে সন্তানকে নেশা থেকে বাঁচাতে নিউইয়র্ক ছেড়ে অনত্র আবাস গড়েছেন। 
একাধিক সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক শহরে ২৫টি প্রধান মাদক বিক্রির স্পট বা আখড়ার মধ্যে অর্ধেকই কুইন্সের জ্যামাইকায়। বাংলাদেশিদের ঘনবসতি এলাকা জ্যামাইকায় মাদকের ব্যবহারও সবচেয়ে বেশী। গাঁজা সেবন নিউইয়র্কে বৈধ হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা এখন বেছে নিয়েছেন মরণনেশা ফেন্টানিল, হেরোইন এবং ক্রিস্টাল মেথ। 
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র অফিসের একটি সূত্র মতে, ফেন্টানিল একটি কৃত্রিম বিষাক্ত পদার্থ যা হেরোইনের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ এবং মরফিনের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি কার্যকর। এটি দামে সস্তা, সর্বত্র পাওয়া যায়, খুবই আসক্তিমূলক এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক। ব্যবসায়িক স্বার্থে মাদক পাচারকারীরা ক্রমবর্ধমানভাবে অন্যান্য অবৈধ মাদকের সাথে ফেন্টানিল মিশিয়ে মানুষকে মাদকাসক্তিতে সম্পৃক্ত করছে। ২০২২ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে অতিরিক্ত মাত্রায় মাদক গ্রহণ করে। ওষুধের ওভারডোজের কারণে মারা যাওয়া ৮১ শতাংশের মধ্যে ফেন্টানিল শনাক্ত করা হয়। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস ফেন্টানিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। 
একাধিক সূত্র মতে, তরুণ প্রজন্মকে মাদকাসক্তিতে সম্পৃক্ত করতে নিউইয়র্ক শহরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাদকের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। গত এক দশকে এই ব্যবসার নানান কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রথমে তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিনামূল্যে মাদক সরবরাহ করা হয়। এরপর তাদের বলা হয়- দুটি ডোজ বিক্রি করতে পারলে দুটি ডোজ বিনামূল্যে পাবে তারা। মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণী নিজেদের নেশার রসদ সংগ্রহ করতে মাদক বিক্রিতে নেমে পড়েছে। এভাবে একজন-দুজন করে শত শত উঠতি বয়সীরা মাদকের এই ছোবলে পড়ে ধ্বংস হচ্ছে। একদিকে ঘটছে মাদকের সেবন, অন্যদিকে বাড়ছে ব্যবসার বিস্তৃতি। 
সূত্র মতে- যারা প্রথমে ভেপ (ইলেকট্রনিক সিগারেট), তামাক জাতীয় সিগারেট, গাঁজা, এরপর পর্যায়ক্রমে ভয়ঙ্কর সব মাদকে আসক্ত হচ্ছে তরুণ সমাজের একটি অংশ। অভিভাবকেরা সন্তানের এই মাদকাসক্তি নিয়ে পড়েছেন নানান শঙ্কায়। তারা না পারছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে, না পারছেন সামাজিক কারণে কাউকে বলতে। 
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যেসব তরুণ একসময় ভেপ, সিগারেট ও গাঁজায় আসক্ত ছিল, তারা এখন ইয়াবা, ফেন্টানিল, এরপর পর্যায়ক্রমে হেরোইন ও স্ক্রিস্টাল মেথ সেবন করছে। ইয়াবায় তরুণরা হারিয়ে ফেলছে মানসিক ভারসাম্য। অন্যদিকে ইয়াবার চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী স্ক্রিস্টাল মেথ একসময় কেড়ে নিচ্ছে তরুণদের প্রাণশক্তি। 
বিভিন্ন দেশ ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে নানা কৌশলে ঢুকছে ভয়াবহ সর্বনাশা এসব মাদক।
নিউইয়র্কের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রকাশ্যে নানান কৌশলে বিক্রি হচ্ছে মাদক। ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসের যেসব এলাকায় সর্বনাশা মাদক বিক্রি হচ্ছে, তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। কিন্তু কুইন্সের চিত্র খুবই ভয়াবহ। কুইন্সের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে বাংলাদেশি তরুণ সমাজ। এর চেয়েও ভয়াবহ চিত্র হলো- মায়ানমারের তৈরি ইয়াবা ও থাইল্যান্ডের ক্রিস্টাল মেথ-এর মত ভয়াবহ সর্বনাশা এসব মাদক যুক্তরাষ্ট্রে আসছে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে। নানান কৌশলে এসব মাদক পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে।
ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ এবং ইয়াবা নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড, জ্যামাইকার হিলসাইডসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের ঠিকানায় আসছে। আর এসব মাদক বিক্রির উত্তম স্থানও হচ্ছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলো। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্যাকেটে করে মাদকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ডিলারদের কাছে আসে। তারাই দালালের মাধ্যমে এগুলো বিক্রি করে থাকে। মাদকগুলো গ্রহণ করছে প্রবাসে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম। এসব মাদক ব্যবহার করে তারা উচ্ছন্নে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা এবং ব্রুকলিনের বিভিন্ন স্ট্রিটে এ সব মাদক বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ সময় গাড়িতে বসেই বা কোন কোনো বাসা থেকে এগুলো দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা সাধারণত রাতে বের হয়। এদের ব্যবসা চলে রাতেই।
জ্যাকসন হাইটস এবং ব্রুকলিন এলাকায় বেশ কয়েকজন আছেন তারা শুধু মাদক বিক্রিতেই ব্যস্ত। তাদের অন্য কোন ধান্ধা নেই, একমাত্র ধান্ধা মাদক বিক্রি করা। কখনো এসব মাদক পোস্টাল সার্ভিসে, আবার লাগেজে বা অন্যপন্থায়ও আসছে।
জ্যাকসন হাইটস এলাকাকে বলা হয় বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র। আর বাংলাদেশি মাদক ব্যবসায়ীরা টার্গেট করেছে নিউইয়র্কের এই জ্যাকসন হাইটসকে। যে কারণে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাকসন হাইটসের কয়েকটি এলাকায় রমরমা মাদকের ব্যবসা শুরু হয়। প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জানান, রাত ১২টার পর ৩৭ অ্যাভিনিউর বিভিন্ন স্ট্রিটের কর্ণারে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে মাদক বিক্রি করছে তরুণ প্রজন্ম। বিভিন্ন সাংকেতিক নামে তারা বাংলাদেশের ইয়াবা বিক্রি করছে। জ্যাকসন হাইটসে ইয়াবা বিক্রির প্রচলন বেশী।
জ্যাকসন হাইটসে ইয়াবার ছড়াছড়ি থাকলেও কুইন্সের জ্যামাইকার বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যে ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে হিলসাইড অ্যাভিনিউ সংলগ্ন বিটুইন ১৬২ ও ১৬৪ স্ট্রিটের ৮৭ রোডে একসঙ্গে একাধিক গাড়ি থামিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মাদক বিক্রি হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা একাধিকবার ৯১১-এ কল করে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছে। কিন্তু পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের কিছুই বলছে না। এমনকী নো পার্কিং এলাকায় দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখলেও এসব গাড়িতে কোনো ট্রাফিক টিকেট দেওয়া হচ্ছে না। এসব ঘটনায় পুলিশের ওপর আস্থা হারাচ্ছে এলাকার বাসিন্দারা। জ্যামাইকায় ইতিপূর্বে মাদকবিরোধী সেমিনারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ মাদক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। কোনোভাবেই ভাঙা যাচ্ছে না মাদক বিক্রির এই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। 
 
কমেন্ট বক্স