Thikana News
০২ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪
মতি-বেনজীর-আছাদের চেরাগে সরকারের অস্পষ্ট মতিগতি

মার্কিনি চাবিতে ঢাকার প্যান্ডোরা বক্স

মার্কিনি চাবিতে ঢাকার প্যান্ডোরা বক্স
হেমারের টোকাটা এসেছিল আল-জাজিরা থেকে। সরকার গা মাখেনি। বরং ডেমকেয়ার করেছে। সঙ্গে তাচ্ছিল্যও। সময়ের ফোঁড়ে দুর্নীতির প্যান্ডোরা বক্সটি খুলল ছাগল-কাণ্ডে। এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের আগেই সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর, সেনাপ্রধান আজিজ, এনবিআরের ওয়াহিদা, ধনকুবের পিকে হালদারসহ কয়েকজনের কীর্তি প্রকাশ পায় ধীরে ধীরে। একটার পর একটা খুলতে খুলতে তা সাবেক  ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিআইজি জামিলে এসেছে। সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও পোস্ট অফিস থেকে শত-হাজার কোটি টাকা লোপাটের খবরও আছে। সরকার না পারছে এসব খবর রুখতে, না পারছে সইতে। মাঝে এক এমপির সোনালী-কাণ্ডের জেরে ভারতে খুনের পর লাশ টুকরা টুকরার পর গায়েবও হয়ে গেছেন। সরকার এসব লুটেরার পক্ষ নিয়েও আবার সরে যাচ্ছে। কোনো দিকই রক্ষা করতে পারছে না। বেনজীর-মতিউররা বিদেশ পালিয়েছেন। দেশে আছেন কেবল আজিজ। আছাদ মিয়া বিদেশ থেকে ফিরবেন বলে বার্তা দিচ্ছেন তার বিশেষ বিশেষ সোর্সদের দিয়ে। দেশে থাকা এ জাতের অনেকে ভিসা-টিকিট পকেটে নিয়ে ঘুরছেন। আর জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের বিশাল সম্পদ-সম্পত্তি ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ রোধ করার কাজে। জমাজমি, রিসোর্ট, কোম্পানির পার্টনার, পাচার মিলিয়ে বিত্তবৈভবে তাদের কেউ কেউ বেনজীর-আছাদ, জামিলদের চেয়ে কম নন। ভেসে ওঠা দুর্নীতির ভয়ংকর চিত্রে সামনে ভিন্ন রকমের কিছুর শঙ্কায় কেবল দুর্নীতিবাজরাই নয়, সরকারের রেড জোনের অনেকেও। দুর্নীতির প্যান্ডোরা বক্স খোলার নেপথ্য নিয়ে তাদের কাছে কিছু বাড়তি তথ্যও রয়েছে। পুলিশের একাধিক সাবেক কর্মকর্তার সম্পদের বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা খবর নিয়ে বাহিনীটির অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশ করা ক্ষোভ পরিস্থিতিকে লেজেগোবরে করে দিয়েছে। গণমাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোকে ‘উদ্দেশ্যমূলক ও অতিরঞ্জিত’ বলে অভিহিত করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পাল্টা প্রতিবাদ করেছে সাংবাদিকদের অ্যাসোসিয়েশনও। এর রেষারেষিতে এখন আর কেবল সাবেক নন, চাকরিরত কারও কারও তথ্য-সাবুদের ফাইলও ঘুরছে বিশেষ কয়েক জায়গায়। এর মাঝে ক্ষমতাসীন দলের স্পোকসম্যান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, হেভিওয়েট মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢেলে দিয়েছেন সাংঘর্ষিক বক্তব্য। এক বাক্যে বলেছেন, ঢালাও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আরেক বাক্যে বলেছেন, অসৎ ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কোনটা তার মনের কথা, কোনটা মুখের কথা বা লিপ সার্ভিস, তা রহস্যাবৃত। এর নেপথ্যও গভীরে। আটলান্টিকের ওপারে। বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষয়টি বেশি করে আলোচিত হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের পর থেকে। সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ২০ মে, আমরা ৭০৩১ (সি) ধারার অধীনে সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে “পাবলিক ডেজিগনেশন” (একধরনের নিষেধাজ্ঞা) ঘোষণা করি। ... দুর্নীতির এ অভিযোগগুলোর ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে বলে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা বিবৃতি দিয়েছেন, আমরা এ ব্যাপারটি স্বাগত জানাই। ... আমি আশা করি, আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে মিলে সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাব।’
তার এ বক্তব্যের মধ্যে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অ্যাকশনের বিষয়টি পরিষ্কার। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসেছিলেন বাংলাদেশে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তারা কথা বলেন কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে রকম নির্বাচন চেয়েছিল, তা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলতে বলতে বাংলাদেশের রুগ্্ণ গণতন্ত্রের ডায়াগনসিস করে ফেলেছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের অলিগার্কদের দমনের জন্য দুর্নীতি দমনকে যেভাবে হাতিয়ার হিসেবে দেশটি বেছে নিয়েছে, ঠিক সেই পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা শুরু করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে এর আঁচ মিলছে। সারা বিশে^র সমাজ দুর্নীতির বিচার দেখতে আগ্রহী বলেও মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড লু। নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমি যখন আলবেনিয়া এবং কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রদূত ছিলাম, আমরা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দিয়েছিলাম। এটি তখনকার (আলবেনীয়) সরকারের কাছে জনপ্রিয় ছিল না, কিন্তু এখন সেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত সাবেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সবাই কারাগারে।’ বাংলাদেশের জন্য দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নতুনও নয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনকারীদের বেসামাল হয়ে পড়ার ঘটনা বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতিবাজদের টাকা পাওয়া গিয়েছিল রাস্তাঘাটে, বালিশ-তোশকের তলায়। ওই নিদারুণ অভিজ্ঞতা অর্জনের পর দুর্নীতিবাজরা তাদের অর্থ আর বাংলাদেশে রাখছে না। এখন সমস্যা বেধেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের পর এটি ক্রমেই ভিন্ন মাত্রা পায়। রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের জন্য বিষয়টি বিব্রতকর। কিছু পদক্ষেপও নিতে হচ্ছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এনবিআরের মতিউরের বিরুদ্ধেও সরকারি অ্যাকশন চলছে। আবার আছাদুজ্জামান মিয়ার দুর্নীতির তথ্য সরবরাহের অভিযোগে পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করাও হয়েছে, যার মাঝে সরকারের মতিগতির অস্পষ্টতা।
কমেন্ট বক্স