Thikana News
০২ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

এস্টোরিয়ায় জানালা দিয়ে বহিরাগতের ঢোকার চেষ্টা

এস্টোরিয়ায় জানালা দিয়ে বহিরাগতের ঢোকার চেষ্টা
এস্টোরিয়ায় একটি প্রাইভেট হাউসের চারতলা ভবনের ফায়ার এক্সিট দিয়ে বহিরাগত এক লোক ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় ওই ঘরে থাকা ২ ও ১১ বছর বয়সী দুটি শিশু ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এখনো তাদের আতঙ্ক কাটেনি। সন্তানদের এই আতঙ্ক নিয়ে তাদের বাবা-মাও চিন্তিত। তারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘটনাটি ঘটে ২২ জুন শনিবার সন্ধ্যা পৌনে আটটা থেকে আটটার মধ্যে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আনিকা ইসলাম বলেন, আমরা এস্টোরিয়ার ২৩ স্ট্রিটে একটি অ্যাপার্টমেন্ট বাসায় থাকি। আমাদের বাসার উপর ছাদ। আমি রান্না করার জন্য বাচ্চাদের ঘরে রেখে রান্নাঘরে যাই। এ সময়ে আমার ছোট দুই সন্তান খেলাধুলা করছিল। অনেক গরমের কারণে রান্নাঘরে যাওয়ার আগে এসি চালিয়ে ওদের ঘরের দরজাটি বন্ধ করে দিই। কিছুক্ষণ পর আমার মেয়ে চিৎকার করে আমাকে ডাকতে থাকে। সন্তানের চিৎকার শুনে ঘরে যাওয়ার পর মেয়ে আমাকে জানায়, ওই সময়ে কালো রঙের একজন মানুষ, যার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট, সাদা প্যান্ট ও সাদা জুতা। সে জানালার নেট ও জানালা খুলে ফায়ার এক্সিটের ওদিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। আমার মেয়ে বলল, লোকটি তার এক পা ও দেহের অনেকখানি অংশ ঘরের ভেতরে ঢুকিয়েও ফেলে। এ সময়ে এই দৃশ্য দেখে আমার মেয়ে কোনো কথা বলতে পারেনি। একদম চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর যখন সে ঘটনা বুঝতে পারে যে অপরিচিত কেউ ঘরে ঢুকছে, তখন সে আম্মা আম্মা বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন আমি রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে দেখি, কেউ একজন নেট টানছে এবং ফায়ার এক্সিটের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেছে। আমি তাকে দেখতে পারিনি, লাফ দেওয়ার শব্দ শুনেছি। কারণ আমার কল্পনায়ও নেই যে চারতলার ওপর এভাবে কোনো মানুষ প্রবেশ করতে পারে। অনেক দ্রুতই ঘটনাটি ঘটে।
তিনি আরও বলেন, এই বাসায় আমরা পাঁচ-ছয় বছর হলো আছি। এলাকাটি ভালো, এ জন্য এখানে থাকছি। কিন্তু এই বিল্ডিংয়ে অনেক সমস্যা। সমস্যার কথা বারবার বলা হলেও বাড়িওয়ালা ঠিক করে না। বাসার মেইন গেটের দরজার লক ঠিকমতো লাগে না। ফলে চাইলে যখন-তখন যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। জানালাগুলোও ঠিকমতো লাগে না। তিনি বলেন, ঘটনাটি কেন ঘটেছে, আমরা জানি না। এখন বাসায় থাকতেই আমরা ভয় পাচ্ছি। যে এসেছে তাকে এর আগে কখনো আমার মেয়ে দেখেনি। তা ছাড়া লোকটি বাসায় প্রবেশ করার আগে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখছিল, কেউ তাকে দেখছে কি না।
তিনি বলেন, আমরা এ দেশে আসার পর এখানে আছি। কারও সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আর আমাদের বাসায় এ ধরনের কেউ প্রবেশ করবে, সেটাও ভাবা যায় না। কারণ আমি কোনো চাকরি করি না, বাসায়ই থাকি। আমার স্বামী নজরুল ইসলাম ব্যাংকে চাকরি করেন। এখানে আত্মীয় বলতে কেবল আমার এক মামা আছেন। আর কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। ফলে আমাদের বাসায় তেমন কোনো মানুষজনও আসে না। এখন আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যদিও ঘটনার পরপর বিষয়টি সুপারকে কল করে জানানো হয়েছে। তিনি বিল্ডিংয়ে না থাকার কারণে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ সবকিছু দেখে গেছে ও তথ্য নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে তার হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে, সেটাও নিয়ে গেছে।
নজরুল ইসলাম আমেরিকার একটি খ্যাতনামা ব্যাংকে চাকরি করেন রিলেশন্স ব্যাংকার হিসেবে। তিনি বলেন, আমরা যে বাসাটিতে থাকি, সেটি এস্টোরিয়ার খুব ভালো এলাকায়। এখানে অনেক রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার থাকেন। এ ছাড়া অনেক ইতালিয়ান থাকেন। এলাকাটি নিরাপদ হওয়ার কারণেই আমরা এখানে থাকি। তবে আমাদের বাড়িটি চারতলা। এটি একটি প্রাইভেট হাউসের অ্যাপার্টমেন্ট বাসা। আগে অন্য মালিক ছিল। সম্প্রতি মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। তবে এই বিল্ডিংয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। গেটের দরজা যেমন লাগে না, জানালাও ঠিকমতো লাগে না। এ ছাড়া যখন ফ্লাড হয়েছিল, তখন ছাদ দিয়ে বাসায় পানি ঢুকে গিয়েছিল। কোনো সমস্যার কথা বললে ম্যানেজমেন্ট তা সহজে ঠিক করে না। দিনের পর দিন বলে যেতে হয়।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন ২২ জুন শনিবার যে লোকটি প্রবেশ করার চেষ্টা করে, সে ব্ল্যাক। আমরা এখন পর্যন্ত বাসার ভিডিও ফুটেজ দেখিনি। সুপার এলে বলছে দেবে। সেটি দিলে আমরা পুলিশকে দেব। পুলিশ ছবি দেখে ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেখে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করবে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাসার জানালা দিয়ে কেন মানুষ প্রবেশ করবে, সেটা আমি জানি না। দুটি কারণে হতে পারে- এক হতে পারে সাধারণ চুরি করার জন্য এসেছে অথবা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করার জন্য এসেছে। বাচ্চারা চিৎকার করার কারণে তা করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমার বাসার উপরে ছাদ। এমনও হতে পারে, ছাদ দিয়ে উপরে উঠেছে। এরপর ফায়ার এক্সিট দিয়ে নিচে নেমে চুরি করার চেষ্টা করছিল। তবে আমার কিংবা আমার পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই যে আমাদেরকে টার্গেট করেই চুরি কিংবা ডাকাতি করাতে পারে।
তিনি বলেন, বাসায় তেমন কোনো নগদ অর্থ নেই। স্বর্ণালংকারও নেই। ফলে চুরি বা ডাকাতি করতে এলে তেমন কিছুই পাবে না। তবে একটা বিষয় আমার কাছে সন্দেহ লাগছে, তা হলো আমাদের এখানে একটি দোকান আছে। যেটি কনভিনিয়েন্ট স্টোর হলেও তাতে স্মোক শপ এবং গাঁজাও বিক্রি হয়। এই দোকানটি হওয়ার পর থেকে অনেক অপরিচিত মানুষ এখানে আসে। তাদেরকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আগে এলাকায় বাসার সামনে বহিরাগত মানুষ দেখা যেত না, এখন দেখা যাচ্ছে। ফলে এখানে যারা সন্দেহজনকভাবে চলাচল করে কিংবা ঘোরাফেরা করে, তাদের কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে কি না, সেটি দেখতে হবে। এখন ভীষণ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। কারণ আমার সন্তানেরা ভয় পেয়েছে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও তা প্রভাব ফেলছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর আমি সুপারকে ফোন করার পর তিনি বলেন, তিনি বাসায় নেই। তিনি লং আইল্যান্ড গেছেন। পুলিশে কল করলে ১১৪ নম্বর প্রিসিঙ্কট থেকে দুজন পুলিশ সদস্য আসেন। তারা পুরো ঘটনার বিবরণ শোনেন। সেই সঙ্গে তারা যে জায়গা দিয়ে লোকটি প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে, সেটিও দেখেছেন। জানালায় যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছিল, সেটিও সংগ্রহ করেছেন। আমরা ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার পর তাদের সরবরাহ করব।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সুপার সোমবার ফিরে আসার পর আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। এরপর সুপার সন্দেহ করছেন ওই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তিনি চেনেন। এই জন্য তিনি আমাদের পাশে ফ্ল্যাটে একজন থাকেন। যিনি মাসে এক দুইবার আসেন। তাকে সুপার ফোন করে অনুপ্রবেশকারীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুপারকে জানান যে ওই অনুপ্রবেশকারী তার পরিচিত। তিনি তার পরিচিত হলে ফায়ার এক্সিট দিয়ে কেন? এই প্রশ্ন উঠেছে। নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনাটি পুলিশকে আপডেট জানিয়েছি। পুলিশ ঘটনার অনুসন্ধান করছেন। কেন তিনি, কি কারণে এসেছিলেন? আর ফায়ার এক্সিট দিয়ে কেন আসবে? তিনি বলেন, যত কিছুই হোক না কেন এখন আমরা সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে আছি। 
কমেন্ট বক্স