একদিকে অভিসংশনের তোড়জোড় অন্যদিকে মামলার বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড টাম্পের কাছে পিছিয়ে থাকার সংবাদটি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভয়ানক শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তার দৌড়ে জো বাইডেনকে পেছনে ফেললেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে সিবিএস নিউজের সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আপনি কাকে ভোট দেবেন? এতে ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ট্রাম্পের নাম বলেছেন, আর বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৪৯ শতাংশ ভোটার।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন নেতার উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে জরিপের আরো কিছু তথ্য। যেমন- পরবর্তী নির্বাচনে জিতলেও বাইডেন পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবেন, এটি খুব কম মানুষই বিশ্বাস করেন। তার তুলনায় এদিক থেকেও এগিয়ে ট্রাম্প।
জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ ভোটারের ধারণা, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন। বাইডেনের ক্ষেত্রে এর হার ৩৪ শতাংশ। ৪৪ শতাংশ ভোটার মনে করেন, বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন না। ট্রাম্পকে নিয়ে এমন সন্দেহ রয়েছে মোটে ১৬ শতাংশ মানুষের।
যদিও দুই নেতার বয়সের পার্থক্য মোটে দুই বছর, তবে তাদের বয়স বড় প্রভাব ফেলতে পারে নির্বাচনের ফলাফলে। যেমন- ৪৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক সুস্থতা রয়েছে কেবল ট্রাম্পের। বাইডেনের ক্ষেত্রে এর হার মাত্র ১৬ শতাংশ। ১২ শতাংশ ভোটার মনে করেন তারা উভয়েই যোগ্য, আর ২৯ শতাংশ মনে করেন তাদের কেউই পুরোপুরি সামর্থ্যবান নন।
দুই নেতার মানসিক সুস্থতা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে অনেকের। জরিপের ৪৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো মানসিক সুস্থতা রয়েছে কেবল ট্রাম্পের। বাইডেনের এমন সমর্থক রয়েছেন ২৬ শতাংশ। সাত শতাংশ ভোটার মনে করেন, তারা উভয়েই যোগ্য। আর ২৩ শতাংশ ভোটার মনে করেন, তারা কারোরই পর্যাপ্ত মানসিক সুস্থতা নেই।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কেমন প্রেসিডেন্ট দরকার? জবাবে ৬৭ শতাংশ বলেছেন কঠোর, যত্নবান বলেছেন ৬৬ শতাংশ, সোজাসাপটা হওয়ার কথা বলেছেন ৬২ শতাংশ, শান্ত চরিত্রের কথা বলেছেন ৬১ শতাংশ এবং ৫৮ শতাংশ বলেছেন কর্মচঞ্চল হওয়ার কথা।
জরিপে বাইডেনকে শান্ত, অনুমানযোগ্য, সহনশীল এবং যত্নশীল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অপরদিকে ট্রাম্পকে বর্ণনা করা হয়েছে উস্কানিমূলক, কঠোর, উদ্যোমী, সোজাসাপটা এবং বিনোদনমূলক হিসেবে।
প্রেসিডেন্টের কী কী যোগ্যতা থাকা দরকার? : জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কেমন প্রেসিডেন্ট দরকার? জবাবে ৬৭ শতাংশ বলেছেন কঠোর, যত্নবান বলেছেন ৬৬ শতাংশ, সোজাসাপটা হওয়ার কথা বলেছেন ৬২ শতাংশ, শান্ত চরিত্রের কথা বলেছেন ৬১ শতাংশ এবং ৫৮ শতাংশ বলেছেন কর্মচঞ্চল হওয়ার কথা।
জরিপে বাইডেনকে শান্ত, অনুমানযোগ্য, সহনশীল এবং যত্নশীল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর ট্রাম্পকে বর্ণনা করা হয়েছে উসকানিমূলক, কঠোর, উদ্যোমী, সোজাসাপটা এবং বিনোদনমূলক হিসেবে।
ট্রাম্পকে যারা ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এর কারণ কী? জবাবে ৯৭ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ট্রাম্পের আমলে পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল। বাইডেন ফের ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগের কারণ দেখিয়েছেন ৮১ শতাংশ ভোটার। ৭৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তার ব্যক্তিগতভাব বাইডেনকে পছন্দ করেন না এবং ৫৪ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্পকে তাদের ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগে।
মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষায় রাজি ট্রাম্প : ট্রাম্প এবং বাইডেন দুই জনেরই বয়স নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি উভয়কে সরে দাঁড়িয়ে তরুণদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ট্রাম্প জানালেন যে তিনি মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা করাতে রাজি।
ট্রাম্প এনবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে বয়স বেঁধে দেয়া উচিৎ নয়। ট্রাম্প বলেন, ‘মানসিক সক্ষমতা আমার আছে কিনা সেই বিষয়ে যে কোনো পরীক্ষা করাতে আমি রাজি আছি।’
ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের অনেক মহৎ প্রেসিডেন্টের বয়স ৮০ পেরিয়েছিল। ট্রাম্প জানান, তিনি ২০২০ সালে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মেডিক্যাল মিলিটারি সেন্টারে পরীক্ষা করিয়েছিলাম। সেখানে আমার সবকিছুই ভালো ছিল। ৭৭ বছর বয়সি ট্রাম্প বলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বয়সই বেশি। ২০২৪ সালে তার বয়স ৮০ বছর হবে। সম্প্রতি রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি উভয় দলেই বাইডেন এবং ট্রাম্পের প্রার্থিতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও ট্রাম্প তার দলে অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
‘নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল’ : ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নস্যাৎ করার জন্য এবং ফলাফল পরিবর্তন করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার জন্য অসদাচরণের জন্য বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘প্রবৃত্তির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ‘ভোটে জালিয়াতি হয়েছে’।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে আরো বলেন, ‘তিনি তার আইনজীবীদের মতামত প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি তাদের সম্মান করেন না।’
এনবিসি নিউজ মিট দ্য প্রেসের সাথে তার সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নির্বাচনী কারচুপি সম্পর্কে তার মিথ্যা দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘এটি আমার সিদ্ধান্ত ছিল।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, এই উপসংহারে আসার জন্য তার নিজের প্রবৃত্তির ওপর নির্ভর করেছিলেন।
২য় বিতর্কেও ট্রাম্পের না : পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে দ্বিতীয় বিতর্কেও অংশ নেবেন না সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরিবর্তে একটি সমাবেশে ভাষণ দেবেন তিনি।
এর আগে গত আগস্টে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বিতর্কও এড়িয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নেবেন না বলে সোমবার তার একজন সহকারী জানিয়েছেন। এর পরিবর্তে ট্রাম্প আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ডেট্রয়েটে ইউনিয়ন কর্মীদের একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
আর এর মাধ্যমে মূলত ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের এবং আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে চলমান বিরোধে ট্রাম্প নিজেকে প্রবেশ করাতে চলেছেন। সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এমন এক সময়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈদ্যুতিক যানের নীতির কঠোর সমালোচনা করার পাশাপাশি অটোওয়ার্কারদের তার প্রার্থিতাকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।
মেলানিয়ার দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প : একের পর এক ফৌজদারি মামলার কবলে পড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বহুদিন প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তার স্ত্রী সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে। এসব মামলা নিয়ে একেবারেই নীরব মেলানিয়া। তার এই নীরবতার প্রসঙ্গ সংবাদমাধ্যমের খবর হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। ওই দম্পতির বিচ্ছেদের গুঞ্জনও শোনা গেছে। তবে এনবিসি নিউজ মিট দ্য প্রেসকে দেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প তার সঙ্গে ‘খুব শিগগির’ প্রচারে ফিরবেন।
গত এপ্রিলে এক পর্ণ তারকাকে ঘুষ দেয়ার মামলায় অভিযুক্ত হন ট্রাম্প। এরপর জুনে তার বিরুদ্ধে গোপন নথি অব্যবস্থাপনার জেরে মামলা হয়। জুলাইয়ে ট্রাম্প নির্বাচনি ফল বদলে দেয়ার চেষ্টায় অভিযুক্ত হন। আগস্টে একই ধারার অভিযোগে জর্জিয়ায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তিনি। তবে এসব আইনি লড়াইয়ে মেলানিয়াকে ট্রাম্পের পাশে দেখা যায়নি একদিনও। দুই মাস আগে মেলানিয়ার প্রাক্তন সহযোগী পেজ সিক্সকে বলেছিলেন, সম্ভবত তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।
তবে ট্রাম্প মিট দ্য প্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সুনির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ না জানালেও শিগগির মেলানিয়ার প্রচারে ফেরার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, তিনি নিজেই আসলে মেলানিয়াকে এসব (মামলা) থেকে দূরে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।