বঙ্গোপসাগরে ২২টি ব্লকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৫টি ব্লক চেয়েছে। এসব ব্লকে তারা ব্যাপক অনুসন্ধান চালাবে। এ জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, যন্ত্রপাতি আনা, গভীর সমুদ্রে ও উপকূলে স্থাপন, অনুসন্ধান, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, উত্তোলন করতে তারা গভীরভাবে আগ্রহী।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্থলভাগে, উপকূলে এবং গভীর সমুদ্রে মোট ২২টি ব্লকে বিভক্ত করে বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন এসব প্রকল্পে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানে বিদেশিরা আগ্রহী হলেও কোনো প্রস্তাব দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দুটি কোম্পানি প্রস্তাব দেয় প্রায় ৯ বছর আগে। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই ও বিবেচনায় না নিয়ে ফেলে রাখা হয়। বিদেশিরাও বিষয়টি নিয়ে এগোয়নি। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে অনুসন্ধান, খনন ও গ্যাস-তেল আহরণে সচেষ্ট হয়। কিন্তু রিগ সংগ্রহ, স্থাপন করা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় ও সংস্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে সরকার এ প্রকল্প নিয়ে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নেয়নি। এদিকে বিদেশিরাও বঙ্গোপসাগরে জরিপ, অনুসন্ধান কাজ চালানো ও প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে ব্যাপক উৎসাহ দেখায়। তাদের অতিরিক্ত আগ্রহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তোলে। মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের সরকারের মাধ্যমে রীতিমতো চাপ ও প্রভাব সৃষ্টি করে।
মিয়ানমার বাংলাদেশ-সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। তেলও পেয়েছে তারা। মিয়ানমারে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ করছে চীনা কোম্পানি। মিয়ানমারে প্রাপ্ত তেল, গ্যাস তারা সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে চীনে টেনে নিচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলনে চীনের অস্বাভাবিক বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রকে গভীরভাবে আগ্রহী করে তোলে। ভারতও বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। তারা দক্ষিণ তালপট্টিসহ গভীর সমুদ্রে প্রচুর গ্যাস ও তেল থাকার নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে। নিজেদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস-তেল মজুদ রয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পেয়েছে। এর পরই মার্কিন কোম্পানিগুলো বঙ্গোপসাগরে মজুদ গ্যাস-তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। তারা এ কাজে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করবে। দীর্ঘদিন ফেলে রাখলেও সরকার সম্প্রতি তাদের প্রস্তাবের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করছে। বিদেশি কোম্পানির ব্যাপারে সরকার খুব বেশি আগ্রহী না হওয়ার কারণ তারা আহরিত গ্যাস, তেল বিদেশে যে মূল্যে বিক্রি করবে, সেই মূল্যেই বাংলাদেশকেও কিনতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ তেমন একটা লাভজনক অবস্থায় থাকবে না। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ মার্কিন কোম্পানিকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলনের দায়িত্ব দিতে আগ্রহী ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২২টি ব্লকের মধ্যে ১৫টিই চাচ্ছে। বাণিজ্যিক স্বার্থই সাম্রাজ্যবাদী এই মহাশক্তি সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে স্বার্থ আদায় করছে।