ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ টানা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজপথে থাকা বিরোধী দল বিএনপি। দলটির টার্গেট তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জনমত গড়ে তোলা এবং সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে শামিল করে সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান সৃষ্টি করা।
কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না। তারা কখনোই বিরোধী দল বিএনপিকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত তারা। বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ দলীয় ফোরামে সভা করে ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি শেষ হবে ৩ অক্টোবর আর আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি শেষ হবে ৪ অক্টোবর।
এরপর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে রাজপথে থাকা বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি নজরে রেখে আওয়ামী লীগও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে। সে কারণে তফসিলের আগের পুরো সময়টাই উত্তাল থাকছে রাজপথ।
কর্মসূচি বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ করবে বিএনপি। ওই দিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ করবে বিএনপি, ঠিক একই দিন দুপুর আড়াইটায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ উত্তরায় এবং মহানগর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে।
২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চ এবং ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন করবে বিএনপি, এদিন কেরানীগঞ্জে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জনসমাবেশ করবে বিএনপি, একই দিন টঙ্গীতে সমাবেশ করবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। একই দিনে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ঢাকার মিরপুরের কাফরুলে সমাবেশ করবে। ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ করবে বিএনপি, এদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ।
পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন করবে বিএনপি, একই দিন আড়াইটায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক লীগের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরে ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ। পরদিন ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চ করবে বিএনপি, অন্যদিকে আগামী ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে মুখোমুখি অবস্থান করবে।
চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘোষণা দিলে ওইদিন জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষার ঘোষণা দিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং দলটির অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর পর থেকে বিএনপি যত কর্মসূচি দিয়েছে, যথারীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ‘পাল্টা’ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে অবস্থান করেছে। বেশির ভাগ সময়ই গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শান্তি সমাবেশ’-এর আয়োজন করছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশগুলোতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সূত্রে জানা গেছে, এখন রাজপথে বৃহৎ কোনো শক্তি প্রয়োগের ইচ্ছা নেই দলটির। আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচন মাথায় রেখে এগোচ্ছে। কীভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়, তা নিয়ে বেশি চিন্তিত। আগের দুটি নির্বাচনের চাইতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে, এমন আভাস দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই দিয়ে রেখেছেন। ওই আভাস মাথায় রেখেই দলটি কাজ করছে। তবে বিএনপি রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে অবস্থান করলে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিএনপির পাল্টা কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কোনো কাউন্টার কর্মসূচি নয়, নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের এই ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, তারা কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছেন না। এসব তাদের নিয়মিত কর্মসূচিরই অংশ। নির্বাচন পর্যন্ত তারাও মাঠে থাকবেন।