একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভারত সরকার তার পররাষ্ট্রসচিবকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল কেবল সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন সম্পর্কে তাকে প্রভাবিত করার জন্য। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিতে তার স্থলাভিষিক্ত এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদেরকে ভারত সরকার নয়াদিল্লিতে ডেকে নিল। কারণ একটাইÑবাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে কাদের ও তার জাতীয় পার্টিকে প্রভাবিত করা। এরশাদ তার জীবদ্দশায় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে বিরত থেকে বিএনপির সহযোগী হয়ে সরকারবিরোধী সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিল। সরকারের দিক থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল, প্রলুব্ধও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এরশাদ তার অবস্থানে অনড় থাকেন। উপায়ন্তর না দেখে সরকারের অনুরোধে ভারত সরকার তার পররাষ্ট্রসচিবকে এরশাদের কাছে পাঠায়। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রতিবেশীর এ ধরনের ভূমিকা নজিরবিহীন, সম্ভবত এই প্রথম ছিল। শেষ পর্যন্ত এরশাদ তার জাতীয় পার্টি নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। এতে এরশাদের ভাবমূর্তি দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকার এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়ে যায়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন আবার অনেকটা একই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে সরকার। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার এবং নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। সমমনা এবং সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বিএনপি। সরকারের তরফ থেকেও জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে আনার এবং বিএনপির সমমনা অনুগামী দলগুলোকে রাজপথে নির্বাচনবিরোধী অবস্থান থেকে সরিয়ে রাখার। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বরাবরই রয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কাদেরের বিভিন্ন সময়ে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। একপর্যায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও জিএম কাদেরের মোবাইলে কথা হয়। কাদেরকে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এমনকি বিএনপি সরকার গঠনের মতো আসন পেলেও কাদেরকে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার এবং জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্যকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার অঙ্গীকারও করা হয়। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার শর্তে এসব আগাম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জিএম কাদেরের প্রতি শীর্ষ পর্যায় থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আস্থার ঘাটতি রয়েছে। এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যথেষ্ট বিশ্বাস, আস্থা রয়েছে। রওশনের শারীরিক দুর্বলতা এবং তার নেতৃত্বের সাংগঠনিক প্রচণ্ড সীমাবদ্ধতাও আছে। কাদেরের মনোভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারি মহলের সন্দেহ-সংশয় থাকায় রওশনকে দিয়ে পার্টির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে সরকার। উদ্দেশ্য দলের নির্বাচনী প্রতীক লাঙ্গল রওশনের হাতে আনা। সরকারি এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও কর্মতৎপরতা শতভাগ সফল না-ও হতে পারে এমন সন্দেহ, শঙ্কা সরকারি মহলে রয়েছে। জিএম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সম্পর্কে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে বিশ্বাসযোগ্য খবর রয়েছে। বিশেষ করে, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ভারতের পরম বিশ্বস্ত সম্পর্ক রয়েছে। মোসাদের সঙ্গে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। ভারত সফরকালে জিএম কাদেরকে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্কোন্নয়ন করে ভবিষ্যতে পথচলার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা যায়।