Thikana News
২০ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

ভোটসামগ্রী কিনতে গলদঘর্ম হচ্ছে ইসি

ভোটসামগ্রী কিনতে গলদঘর্ম হচ্ছে ইসি



 
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটসামগ্রী কেনাকাটা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। আগামী দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এগুলোর কাজ ও প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার জন্য নির্বাচনী পথনকশায় নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অতি দরকারি স্ট্যাম্প প্যাড কিনতেই বেশি গলদঘর্ম হচ্ছে ইসি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্যটি কীভাবে কেনা যায়, সে জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম বাতিল হওয়ায় এবার ৩০০ আসনেই ব্যালটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। সেই লক্ষ্যে ব্যালট পেপারসহ ভোটসামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছে ইসি। তফসিল ঘোষণার আগেই প্রায় ৭০ কোটি টাকার কেনাকাটা সারবে তারা। তবে এর পরিমাণ বাড়তেও পারে।
ভোটসামগ্রী কেনাকাটার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ট্যাম্প প্যাড। ক্রয় বিষয়ে অতি স্বচ্ছতা এই সংকটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন নির্বাচনী মালামাল ক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়ায় এখন তারা পড়েছেন বিপাকে। তারা জানান, চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে এসব প্রতিষ্ঠানের গড়িমসির কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের জামানত এরই মধ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আরও চারটি প্রতিষ্ঠানের নমুনা বিএসটিআইয়ের মান যাচাই পরীক্ষায় অযোগ্য হয়েছে। এর আগে আরও আটটি প্রতিষ্ঠান নমুনা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যালটে ভোটের কাজে সুই, সুতা, মোমবাতি, দেশলাই থেকে শুরু করে অন্তত ২৩ ধরনের জিনিসের দরকার হয়। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় বিশেষ খামসহ ১৭ ধরনের প্যাকেটের। জানা গেছে, ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের জন্য ক্রয়তালিকায় থাকা ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের লক, ব্যালটের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, প্যাকিং বক্স, অমোচনীয় কালি ও কলম, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি, ব্যালট বাক্সের সিল, গানি ব্যাগ, অফিশিয়াল সিল ইত্যাদি উপকরণের কোনটি কী পরিমাণ ইসির ভান্ডারে রয়েছে, সেগুলোর তালিকা করা হয়েছে। পর্যালোচনা করে নতুন করে প্রয়োজন অনুযায়ী কেনার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী উপকরণের অন্যতম ব্যালট বাক্স, স্ট্যাম্প প্যাড, সিলগালা, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ক্যালকুলেটর, চার্জার লাইট, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ ইত্যাদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাতে পাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে গত মাসের বৈঠকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি বৈঠকে কার্যাদেশপত্রের চাহিদা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে। ইতিমধ্যে ইসির চাহিদামতো কিছু কিছু সামগ্রী তারা হাতেও পেয়েছে। ইসির লক্ষ্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু প্রস্তুত রাখা।
ইসির দায়িত্বশীল সূত্রমতে, এসব পণ্যের মধ্যে ৯টিতে এ বছর ব্যয় কমেছে। এসব পণ্যের কোনো একটিতে দেখা গেছে খরচ সাশ্রয়ী হচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি টাকা। এমন একটি পণ্য হচ্ছে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে এই পণ্যটি কিনতে ইসি খরচ দেখিয়েছিল ৭ টাকা ৪৮ পয়সা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ওই একই পণ্য কিনতে প্রতিটির জন্য কমিশনের ব্যয় হচ্ছে ৩ টাকা ২০ পয়সা। শুধু এটাতেই দ্বিগুণ সাশ্রয় করছে কমিশন। এ ছাড়া ১ কোটি ২৬ লাখ মনোনয়ন ফরম কেনায় কমিশনের সাশ্রয় হয়েছে আরও দুই কোটি টাকা।
কিন্তু স্ট্যাম্প প্যাড কিনতেই গলদঘর্ম হচ্ছেন ইসির কর্মকর্তারা। কারণ ইসির চাহিদা অনুযায়ী এই পণ্যের বাজারদর ৬৯ টাকা। সংসদ নির্বাচনের জন্য দরকার ৮ লাখ ১৫ হাজার পিস স্ট্যাম্প প্যাড। দেখা যাচ্ছে, দেশের কিছু কিছু দরদাতা প্রতিষ্ঠান বাস্তব দাম যাচাই না করে কাজটি পেতে সর্বনিম্ন দাম দরপত্রে উল্লেখ করে টেন্ডার ড্রপ করে। দরপত্র উন্মুক্ত হওয়ার পর সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পেয়ে যায় তারা।
সূত্র জানায়, বাস্তবতার নিরিখে এটা সম্ভব নয় কিন্তু টেন্ডার ও দরপত্র বিষয়ে দুর্নাম গায়ে না মাখতে কাজটি এসব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন পণ্য সরবরাহের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নানা বাহানায় পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এ অ্যান্ড এ’। এই প্রতিষ্ঠান ১৫ লাখ টাকা জামানতের শর্তে স্ট্যাম্প প্যাড সরবরাহ করার জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। তারা প্রতিটি স্ট্যাম্প প্যাড ইসিকে সরবরাহের জন্য মূল্য দিয়েছিল মাত্র ২৫ টাকা। কাজে নেমে জানতে পারে, তাদের দেওয়া দরমূল্যের সঙ্গে বাজারে ওই পণ্যের দামের বিস্তর পার্থক্য। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বাজার যাচাই করে জানতে পারে, পণ্যটি সরবরাহ করলে লাভের বদলে তাদের অতিরিক্ত ৩৩ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই পণ্যটি সরবরাহ না করার বিষয়ে ইসিকে জানালে তাদের দেওয়া চুক্তির জামানত রাখা ১৫ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, স্ট্যাম্প প্যাড সরবরাহের জন্য আরও চারটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়। পরে তাদের আগাম নমুনা পাঠাতে ইসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া নমুনা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটে (বিএসটিআই) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষায় চারটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া পণ্যের নমুনা ইসির স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি অর্থাৎ পরীক্ষায় অযোগ্য হয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে ডিজাইন ডেভেলপার, আইকন ইলেকট্রনিক লিমিটেড, সফট বাংলা ও এম/এস বেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স। এর আগে আরও আটটি প্রতিষ্ঠান তাদের দেওয়া নমুনা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, কেনাকাটায় শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক পণ্যের কেনাকাটা সম্পন্ন হওয়ার পথে থাকলেও স্ট্যাম্প প্যাড কিনতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতাকে নির্বাচন করাটাই ভুল হয়েছে। একটি মানসম্মত স্ট্যাম্প প্যাডের মূল্য ৬৯ টাকা। দেখা যাচ্ছে, দরপত্রে সর্বনিম্ন হয়ে যিনি কাজটি পেয়েছেন, তার দেওয়া মূল্যের সঙ্গে বাজারের বাস্তবতার মিল নেই। গণমাধ্যমের সমালোচনা এড়াতে টেন্ডারে সর্বনিম্ন হওয়া প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিয়ে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের। প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যাম্প প্যাড কিনতে ২৫ টাকা মূল্য উল্লেখ করেছিল দরপত্রে। এই প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আরও চারটি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের নমুনা ইসির স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি, তারাও অযোগ্য হয়েছে। এখন নতুন প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। আশা করি, যথাসময়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পারব।
কমেন্ট বক্স