Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্ব শান্তিদূত শ্রীচিন্ময়ের পাশ্চাত্যে আগমন

১৯৬৪ সাল ছিল আমেরিকায় জন এফ কেনেডির হত্যার জন্য শোক প্রকাশের বছর; যে বছর দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং যুদ্ধ আমেরিকার দৈনন্দিন সংলাপের অংশ হয়ে ওঠে। ২ জুলাই ১৯৬৪ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন কর্তৃক স্বাক্ষরিত নাগরিক অধিকার আইনটি জনসাধারণের সমাগমের স্থানে বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছিল, স্কুল এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধার একীকরণের ব্যবস্থা করেছিল এবং কর্মসংস্থান বৈষম্যকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল।
বিশ্ব শান্তিদূত শ্রীচিন্ময়ের পাশ্চাত্যে আগমন
শ্রীচিন্ময় ১৩ এপ্রিল ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্কে আগমন করেন। এর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী অনেকগুলো ঘটনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তখন চলছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঝড়-ঝঞ্ঝা। শ্রীচিন্ময়ের আগমনের মাত্র ৫ মাস আগে ২২ নভেম্বর ১৯৬৩-তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তারও কয়েক মাস আগে ১৯৬২ সালের অক্টোবরে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট শীতল যুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে কাজ করেছিল। এই শীতল যুদ্ধের রাজনীতির উত্থান, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, ছাত্র বিক্ষোভ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ-এসবই আমেরিকান সমাজ ও সংস্কৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

১৯৬৪ সাল ছিল আমেরিকায় জন এফ কেনেডির হত্যার জন্য শোক প্রকাশের বছর; যে বছর দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং যুদ্ধ আমেরিকার দৈনন্দিন সংলাপের অংশ হয়ে ওঠে।

২ জুলাই ১৯৬৪ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন কর্তৃক স্বাক্ষরিত নাগরিক অধিকার আইনটি জনসাধারণের সমাগমের স্থানে বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছিল, স্কুল এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধার একীকরণের ব্যবস্থা করেছিল এবং কর্মসংস্থান বৈষম্যকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। পুনর্গঠনের পর এটি ছিল সবচেয়ে ব্যাপক নাগরিক অধিকার আইন। আইনটি আমেরিকার আইনি দৃশ্যপটকে গভীরভাবে পুনর্গঠন করেছিল, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিল। জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ বা জাতীয় উৎসের ওপর ভিত্তি করে বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে আইনটি আইনের অধীনে সমতার দিকে একটি নির্ণায়ক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

১৯৬০-এর দশক ছিল এমন এক দশক, যখন লাখ লাখ সাধারণ আমেরিকান জাতির গণতান্ত্রিক আদর্শকে নতুন করে প্রাণ জুগিয়েছিল। আফ্রিকান আমেরিকানরা বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অবস্থান ধর্মঘট, স্বাধীনতা যাত্রা এবং প্রতিবাদ মিছিল ব্যবহার করেছিল।

কিছু তরুণ রাজনৈতিক সক্রিয়তার ওপর মনোনিবেশ করলেও অন্যরা একটি ‘প্রতি-সংস্কৃতি’ তৈরি করেছিল, যা মূলধারার আমেরিকান মূল্যবোধ এবং জীবনধারাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই ‘হিপ্পিরা’ বস্তুবাদ, প্রতিযোগিতা এবং ঐতিহ্যবাহী ক্যারিয়ারের পথ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। পরিবর্তে শান্তি, প্রেম এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রচার করেছিল।

নতুন বামপন্থীদের প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠন ছিল এসডিএস। ঝউঝ ছিল তিন শতাধিক কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদের একটি শিথিল ফেডারেশন। বেশির ভাগ সদস্য ছিলেন এমন ছাত্র, যারা বিশ্বাস করতেন, তাদের জাতিগত বৈষম্য, দারিদ্র্য, সামরিকবাদ এবং বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমূল পদক্ষেপ নিতে হবে।

নারীবাদী আন্দোলন পশ্চিমা সমাজের পরিবর্তনের ওপর প্রভাব ফেলেছে; যার মধ্যে রয়েছে নারীদের ভোটাধিকার, শিক্ষার বৃহত্তর সুযোগ, পুরুষদের সঙ্গে আরও ন্যায্য বেতন, বিবাহবিচ্ছেদের মামলা শুরু করার অধিকার, গর্ভাবস্থার বিষয়ে মহিলাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার (গর্ভনিরোধক ও গর্ভপাতের অ্যাক্সেসসহ), আর মেয়েদের বিপুল অংশ বিটলস নামের খুব জনপ্রিয় একটি সংগীত দলের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তিকে জাতি, বর্ণ বা জাতীয় উৎসের ভিত্তিতে, ফেডারেল আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো প্রোগ্রাম বা কার্যকলাপে অংশগ্রহণ থেকে বা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে না অথবা বৈষম্যের শিকার করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা দিয়েছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী মনোভাবও তীব্রতর হয়। বিশেষ করে, ১৯৬৫ সালের পর, যখন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন নাটকীয়ভাবে ভিয়েতনামে মার্কিন সেনা উপস্থিতি এবং বোমা হামলা অভিযান বৃদ্ধি করেন। তখন যুদ্ধ ছাত্র রাজনৈতিক সক্রিয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ১৯৬৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে।

আমেরিকান তরুণদের জন্য রক অ্যান্ড রোল নতুন এক পরিবর্তনের প্রতীক ছিল। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে অনুপ্রেরণা ও অবদান রেখে রক বিদ্রোহ এবং তরুণদের তাদের পিতামাতার সংগীত, মনোভাব এবং প্রত্যাশা প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দেয়। এটি জাতি, শ্রেণি, ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে একটি সেতুবন্ধও প্রদান করে।

গৃহযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক রাজনৈতিক সত্তা নিশ্চিত করে, চার মিলিয়নেরও বেশি দাসত্বপ্রাপ্ত আমেরিকানকে স্বাধীনতা এনে দেয়, আরও শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত ফেডারেল সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং বিশ শতকে বিশ্বশক্তি হিসেবে আমেরিকার উত্থানের ভিত্তি স্থাপন করে। নিউইয়র্কে আগমনের পর শ্রীচিন্ময় এখানকার বিক্ষুব্ধ ছাত্র ও যুবসমাজের মাঝে স্রষ্টার সঙ্গে মেডিটেশনের মাধ্যমে একাত্ম হওয়ার মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জনের পথ দেখান এবং বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষের মাঝে শান্তি ও সংহতির বাণী তুলে ধরেন। তাঁর অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য, ধীর-স্থির প্রশান্ত মূর্তি ছাত্র ও যুবসমাজকে গভীরভাবে আকর্ষিত করে। আর তাঁর ক্রীড়া ও সৃজনশীল কাব্য ও সংস্কৃতিচর্চা বিভিন্ন ধারার দিকপাল ও শ্রেষ্ঠ মানুষকে তাঁর চারপাশে একত্রিত করে। তাঁর নিরহংকার ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলা, গর্বাচেভ, মাদার তেরেসা, ডেসমন্ড টুটু, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী ক্লে, সর্বোচ্চ অলিম্পিক সোনা বিজয়ী দৌড়বিদ কার্ল লুইস, এমি বিজয়ী সংগীতজ্ঞ রবার্তা ফ্লেকসহ জ্ঞানী, গুণী ও বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ককে তাঁর শান্তি ও একাত্মতার বাণীতে আকর্ষিত করে।

এবার রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ইন্দোনেশিয়ার বালির রাজপুত্র ও তার পরিবারসহ বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এবারের উৎসবে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ভাস্কর কৈবল্য টর্পির ব্রোঞ্জে 
তৈরি শ্রীচিন্ময়ের একটি ভাস্কর্য এসপিরেশন গ্রাউন্ডে স্থাপন 
করা হয়।
কমেন্ট বক্স