যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কনসাল জেনারেলের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ২১ এপ্রিল সোমবার বিকেল তিনটায় তারা কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। কনস্যুলেটের বাইরে তারা অবস্থান করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি প্রদান করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সহসভাপতি ডা. মাসুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক এম উদ্দিন আলমগীর প্রমুখ।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. হামিদ জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালে সকল অবৈধ বিচারপ্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও কনসাল জেনারেলের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাজ্যেও একই দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, আইসিটি ট্রাইব্যুনাল প্রহসনমূলক, ঘৃণ্যতম ও জঘন্যতম অসাংবিধানিক ও বেআইন কার্যক্রমের প্রতিবাদে স্মারকলিপি। ন্যায়বিচারের সকল রীতিনীতি লঙ্ঘন করে সেই ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনজীবীকে চিফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রহসনমূলক বিচারের লক্ষ্যে দলীয় ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ করা হয়। ঘৃণ্য রাজনৈতিক শক্তিকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে এই ট্রাইব্যুনালকে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরো বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালানো হয়েছিল, সেটি সারা বিশ্ব দেখেছে। সন্ত্রাসীরা পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কীভাবে হত্যা করেছে, সেটি আমরা সকলে দেখেছি। হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ যারা করেছে, তাদেরকে ইনডেমনিটি দিয়েছে এই তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনা এসব হত্যাকাণ্ড তদন্তে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তারা সেই তদন্ত বন্ধ করেছে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ, হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং দেশের অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, শিল্পীসহ অসংখ্য পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এসব মামলায় লক্ষ লক্ষ মানুষকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ ধরনের মিথ্যা মামলার মাধ্যমে সরকার দেশের বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে সারা দেশের লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করছে। এদের জেল-জুলুম ও অত্যাচারের হাত থেকে ৮০ বছর উত্তীর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী, শিশু এমনকি মুমূর্ষু রোগীরাও রক্ষা পাচ্ছে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থী।
৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, শেখ হাসিনা চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে সম্পূর্ণ বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। তিনি সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবং সকল ধরনের প্রাণহানি এড়ানোর জন্য তার পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
আরও উল্লেখ করা হয়, জনগণ দেশ ধ্বংসকারী এই অপশক্তির হাত থেকে বাঁচতে চায়। আমাদের মনে রাখা উচিত, স্বাধীন দেশে এ যাবৎ কয়েক দফা অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক শক্তি আমাদের ওপর চেপে বসেছিল। জনগণ এই অগণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই সংবিধান এবং ইতিহাস তাদের ক্ষমতা করবে না।
স্মারকলিপির শেষে লেখা হয় : জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
সকল অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচার-নির্যাতনের অবসান হোক।