Thikana News
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নোবেল লরিয়েট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প?

নোবেল লরিয়েট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প?
লেখাটার শিরোনাম দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। অবাক হতে পারেন এই ভেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার পেলেন, অথচ তার এই পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর কেউ জানলো না বা সে খবর কোথাও প্রকাশ বা প্রচারিত হতে দেখা গেল না, সেটা কী করে সম্ভব, যদিও এই পুরস্কার তিনি পেলে তা বিশ্ব মিডিয়ায় লিড নিউজ হওয়ার কথা। তা ছাড়া, বহু গুরুতর অভিযোগে (Felony) অভিযুক্ত, যৌন নির্যাতনকারী (লেখক ই.জীন ব্যারল, পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস প্রমুখ) হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে আদালত কর্তৃক বিপুল অঙ্কের অর্থদণ্ডপ্রাপ্ত, একনায়ক সুলভ খামখোয়ালিপূর্ণ নানাবিধ আচার-আচরণের জন্য বহুল সমালোচিত এবং সর্বোপরি গত দু’বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইতিহাসের নৃশংস ও বর্বরতম হত্যাযজ্ঞে নিয়োজিত ইসরাইয়ের মদদদাতা ও সমর্থক হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো একজন বিতর্কিত রাজনীতিক নোবেল পুরস্কারের মতো একটি সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কীভাবে পেতে পারেন, তা নিয়েও বহু মানুষের মধ্যে ধাঁধা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু উপরে বর্ণিত ন্যারেটিভের বাইরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে এমন সব কিছু কাজ করেছেন, যা অদূর ভবিষ্যতে তার নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে বেশ উজ্জ্বল করে তুলেছে বলা যায়।

এক্ষেত্রে প্রথমেই ধরা যাক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে গত সাড়ে তিন বছর ধরে চলমান দীর্ঘতম রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুদিন ধরে বিশেষ করে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেশ সক্রিয় ও সোচ্চার রয়েছেন। এমনকি তিনি এমনটাও বলেছেন, যুদ্ধ শুরুর (২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে) সময় তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এই যুদ্ধ আদৌ শুরু হতো না। যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ ছাড়াও মস্কোতে তিনি বিশেষ দূত পাঠিয়ে প্রচেষ্টা নেন। এসব উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় তার উদ্যোগে ১৫ আগস্ট আলাস্কায় তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি উপস্থিত না থাকলেও বৈঠকের পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেলেনস্কিসহ অন্য কয়েকজন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে জেলেনস্কি বৈঠকের বিষয়ে কথা বলার জন্য ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউজে আসবেন বলে জানানো হয়। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চলা আলোচনায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃক দখলকৃত এলাকা যার যার দেশকে ফেরত এবং রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশ ভাষাভাষী কিছু এলাকায় (খেরসন, জাপরোজিয়া, ডনেৎস্ক ইত্যাদি) রুশ দখল বহাল রাখার বিনিময়ে রাশিয়া পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে আর কোনো আগ্রাসন চালাবে না এই মর্মে রাশিয়ার কাছ থেকে ইউক্রেনের সিকিউরিটি গ্যারান্টির দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর দু’নেতা সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়ে বৈঠকের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে জানালেও দু-তিনটি বিষয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান, যদিও কোনো কোনো বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, সেটা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু জানান, ‘There is no deal until there is a deal’ পুতিন পরবর্তী বৈঠকের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মস্কো আসার আমন্ত্রণ জানান।

যুদ্ধ বন্ধ বা যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে কোনো চুক্তি না হওয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও অন্য কিছু মহলকে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৌশলের সমালোচনা করতে দেখা যায়। বৈঠকের পূর্বে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিলেও বৈঠকে সে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা (অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি) গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়নি। অবশ্য এটাও সত্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বৈঠকটিকে মূলত শোনার (Listening) বৈঠক উল্লেখ করে দ্বিতীয় বৈঠকে জেলোনস্কির উপস্থিতিতে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে সম্ভাব্য একটি শান্তি চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি যা হলেও দুই নেতার মধ্যকার আলোচনাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই এবং এই বৈঠকের সূত্রে পরে ইতিবাচক কিছু ঘটার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না বলেও কেউ কেউ মনে করেন। যুদ্ধ বন্ধে এই বৈঠকে প্রত্যাশিত চুক্তি না হলেও এই লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগ যে প্রশংসার দাবি রাখে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা ছাড়াও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি যুদ্ধ বন্ধে সফল হয়েছেন। সেগুলো হলো- পাক-ভারত, ইসরাইল-ইরান, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া রুয়ান্ডা-কঙ্গো ও থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধ। এরইমধ্যে পাকিস্তান, ইসরাইল, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার নেতারা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

নিকট অতীতে একাধিক মার্কিন নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, বারাক ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। ১৯৭৮ সালে মিশর-ইসরাইল শান্তি চুক্তিসহ শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক সংঘাত সমাধানে তার ভূমিকার জন্য জিমি কার্টার, ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সহযোগিতা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টার জন্য বারাক ওবামা এবং ২০০৭ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তার কাজ ও ভূমিকার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট আলগোর নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। অতীতে বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র নেতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো এতগুলো যুদ্ধ বন্ধে সফল হয়েছেন, সে রকম কোনো দৃষ্টান্ত নেই। সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
লেখক : কলামিস্ট
 
কমেন্ট বক্স



9