Thikana News
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বমোড়ল না অভিভাবক

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বমোড়ল না অভিভাবক
খবরটি হচ্ছে : ‘আমেরিকা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে/ মোদির কপালে চিন্তার ভাঁজ’। খবরটি জানা যায় গত ৬ আগস্ট ঠিকানায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে। খবরটি এ রকম : ‘ট্যারিফ কিং খ্যাত ট্রাম্প ভারতের ওপর কড়া শুল্ক বসিয়ে নজর ঘুরিয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের দিকে। ... পাকিস্তানের সঙ্গে একটি জ্বালানি চুক্তির খবরও প্রকাশ করেন।’ পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ খনিজ তেল রিজার্ভ ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হওয়ার খবরও সেই সঙ্গে চাউর হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কে জানে, একদিন হয়তো পাকিস্তান ভারতেও তেল বিক্রি করবে।’ অথচ গত সফরে এই ট্রাম্পই পাকিস্তানকে বলেছিলেন, ‘মিথ্যা আর ধোঁকার উৎস’। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক শক্তি সব দিক থেকে। অন্যদিকে ট্রাম্প কোন ছুতোয় কখন যে কী করে বসেন, সেই ভাবনায় ভারত শুধু নয়, ভারতের মতো সব দেশকেই কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে চলতে হচ্ছে।

এ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ তত্ত্বের প্রভাব। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোজগতে শুধু নয়, বহির্জগতেও একজন ইচ্ছাচারী শাসককে দেখা যায়। তাকে যে করেই হোক পৃথিবীর দখল নিতে হবে, এ জন্য তিনি যা-ই করেন, সব শর্ত তার অনুকূলে রেখেই করেন। তার অনুকূলে শর্ত এবং পরিবেশ থাকে। তবে তিনি সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রাখেন না। সবার উপরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এটাই প্রক্রিয়া। এ হচ্ছে মোড়লগিরি প্রতিষ্ঠিত করার পথ। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর বিকল্প নেই।

কিন্তু ‘মেইক আমেরিকা গেট অ্যাগেইন’-এটাই কি আমেরিকার শেষ এবং একমাত্র পরিচয়? বিশ্ব ভূখণ্ডের প্রতি কি যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো পরিচয় বা দায়িত্ব নেই। বটবৃক্ষের পরিচয় কি বুক ফুলিয়ে শুধু ছোট ছোট বৃক্ষকে ভয় দেখানো? তাদের ওপর খবরদারি করা? বড় হিসেবে বুক চিতিয়ে ছোট ছোট বৃক্ষকে রক্ষা করার দায়িত্ব তো তাকেই পালন করতে হয়, যাকে আমরা বলে থাকি অভিভাবকের দায়িত্ব। অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হলে সব ক্ষেত্রে জিততে চাইলে হয় না। কখনো কখনো ছোট ছোট দেশের কল্যাণে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। তাকেই তো বলে অভিভাবক। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সে সবকিছু দেখতে পারে। সেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রায় দিতে পারাটাকেই অভিভাবকের দায়িত্ব পালন বলে।

যুক্তরাষ্ট্র কি সেই দেশনিরপেক্ষ অবস্থান নিতে পারছে? না, পারছে না। পরিষ্কার দৃষ্টিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষভাবে অভিভাবকের সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। তার রাজনীতি-কূটনীতির মধ্যেই সেটা নেই। দৃশ্যমানভাবে যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র পৃথিবীর দিকে একরকম দায়িত্ব পালন করে, আর ইসরায়েলের প্রশ্নে আরেক রকম। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কারও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। কারও মুখে হাসি বা স্বস্তির রেখা ফুটে ওঠে। এই রাজনীতি ও কূটনীতি বড় ভয়ংকর বিষয়। একটি দেশের রাজনীতির মধ্যে তার অবস্থান পরিষ্কার ফুটে ওঠে।
রাজনীতি আসলে সব দেশেরই মৌলিক শক্তি। রাজনীতি শক্তিশালী হলে দেশটাও শক্তিশালী আর রাজনীতির শক্তি জনগণের শক্তি। যে দেশ তার শক্তিকে জনগণ থেকেই উৎসারিত শক্তির মূল ধরে নিয়ে রাজনীতির কৌশল সাজায়, সেই দেশ হয়ে ওঠে অনেকটাই অপরাজেয়। অপরাজেয় শক্তির দেশ যত দিন নিজ দেশের জনগণের শক্তিকে দেশের শক্তির আধার ভাবে, সে দেশ তত দিন বিশ্বশক্তির অংশ হয়ে থাকতে পারে।

একটি দেশের রাজনীতির রশি যাদের হাতে জনগণ অর্পণ করে, তারা যত দিন জনগণকে সব শক্তির উৎস মনে করবেন, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্নকে মূল্য দিয়ে চলবেন, তত দিন সেই দেশ অপরাজেয়। সেই শক্তিকে কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না। সেই দেশকে কেউ পরাভূত করতে পারবে না। এর উদাহরণও আছে অনেক। কিউবা, ভিয়েতনামকে সে রকম দেশের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। অতীতে জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন এমনকি ভারতকেও তেমন সব দেশের নামের সঙ্গে উচ্চারণ করা হতো। তারও আগে উদাহরণ হিসেবে ব্রিটেনকেও অপরাজেয় বলে গণ্য করা হতো।

কোনো দেশের মানুষই যুদ্ধ পছন্দ করে না। সাধারণ মানুষ জানে, যুদ্ধ কেবল ধ্বংস করে। মানুষ মারে, শান্তি হরণ করে। সভ্যতার বিনাশ ঘটায়। যুদ্ধ কেবল ভাঙে, গড়ে না। যে কেউ এ সময় চট করে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে বলতে পারে, কেন, তারা তো যুদ্ধ করেই আজ বিশ্বের এক নম্বর শক্তি। কিন্তু আমেরিকা যত না নিজে যুদ্ধ করে, তার চেয়ে অধিক যুদ্ধের উসকানি দেয়। যুদ্ধ লাগায়, যুদ্ধ থামায়। জনগণের শক্তি ছাড়াও প্রকৃতিপ্রদত্ত দুটি শক্তি আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। কোনো কারণে আমেরিকার সঙ্গে কারও যদি যুদ্ধ বেধেও যায়, তবে জনগণের ঐক্যের সঙ্গে সেই প্রাকৃতিক শক্তি যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এখন পর্যন্ত কোনো শক্তিই টিকতে পারেনি। দুটি মহাসাগর আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর ডিঙিয়ে আসতেই শত্রুপক্ষের অর্ধেক শক্তি নাই হয়ে যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র একটা পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তি যে কত ভয়ংকর, ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক, তা কোনো দেশেরই কোনো ধারণা নেই। এককথায় জনশক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, সমর শক্তি এবং প্রাকৃতিক শক্তিÑসব শক্তি মিলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি পরিমাপ করাই অকল্পনীয়।

তাই তো পাকিস্তানের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকে পড়ার খবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দেওয়ার খবর মেলে। যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে যুদ্ধ বেধে যেতেও পারে। আবার যুদ্ধ থেমেও যায়। যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যি সত্যি চায় যুদ্ধ থামুক। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি না করলেও পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির শক্তি। আর এই রাজনীতি দিয়ে সবার ওপর প্রভাব ফেলতে হলে চাই অন্য আর সব ক্ষেত্রেও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন। যুক্তরাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। সেই শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই বিশ্বের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। কখনো সে বিশ্বমোড়ল, কখনো বিশ্বের অভিভাবক।
 
কমেন্ট বক্স



9