Thikana News
১৪ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
আইসের অভিযানের প্রভাব

ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা রেমিট্যান্সে ধাক্কা

ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা রেমিট্যান্সে ধাক্কা সংগৃহীত
আইসের অভিযানের কারণে এখন সর্বত্র ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। যাদের নথিপত্র আছে তারাও     ভয় পাচ্ছেন, যাদের নথিপত্র নেই তারা তো ভয়ে আছেনই। সিটিজেন ও গ্রিনকার্ড আছে, এমন মানুষেরাও ভয়ে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। এমনকি রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারি শপেও প্রয়োজন ছাড়া যাচ্ছেন না। যে কারণে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ যাচ্ছে। সেখানে বেচাকেনা কমেছে। রেস্টুরেন্ট খাবারের ব্যবসা ২০ জানুয়ারির পর আগের তুলনায় ৭৯ শতাংশ কমেছে। রুটি ফ্যাক্টরির ইনকাম ২০ শতাংশ কমেছে। এমনকি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগের চেয়ে ব্যবসা ৩০-৪০ শতাংশ কমেছে। এর ধাক্কা লেগেছে রেমিট্যান্সেও। আগে মানুষ যে পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠাতেন, এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা আরও অনেক খারাপ হবে। আগামী দিনে ব্যবসার স্বাভাবিক গতি চালিয়ে রাখাও কঠিন হবে।
এ ব্যাপারে সানম্যান গ্লোবালের এমডি ও সিইও মাসুদ রানা তপন বলেন, আগে আমরা যে পরিমাণ অর্থ দেশে রেমিট্যান্স হিসাবে পাঠাতাম, এখন তার চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছি। আইসের অভিযান চলমান থাকলে এটা আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, এখান থেকে যারা দেশে অর্থ পাঠান, এর মধ্যে সিটিজেন ও গ্রিনকার্ডধারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। কারণ যারা সিটিজেন, তারা এখানেই বেশি অ্যাসেট করেন। এখানেই বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেন। এখানে ইনভেস্ট করার পর বেশি থাকলে দেশে সেগুলো বিনিয়োগ করেন এবং বিভিন্ন মানুষকে সেবা ও সহযোগিতা করেন। গ্রিনকার্ডধারীরাও কম রেমিট্যান্স পাঠান। তারা এখানে আসার পর টিকে থাকার জন্যই প্রথম কয়েক বছর লড়াই করেন। নিজের একটি বাড়ি কেনার চেষ্টা করেন। নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থায়ী হওয়ার পর দেশে অর্থ পাঠান। এ ছাড়া যেসব গ্রিনকার্ডধারীর পরিবার-পরিজন দেশে থাকেন, তাদের জন্য অর্থ পাঠান। তবে এখান থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাঠান স্টুডেন্ট, ভিজিট ভিসায় আগতরা এবং যারা অ্যাসাইলাম করেছেন, তারা। কারণ তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আছে। স্টুডেন্টরা এখানে পড়তে আসেন। পড়ার পাশাপাশি কাজ করেন। তারা তাদের পরিবারের জন্য দেশে অর্থ পাঠান। অনেক স্টুডেন্ট লোন করে এখানে আসেন। আসার পর কাজ করে নিজের লোন পরিশোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে ভিজিট করতে এসে অনেকেই থেকে যান। তারাও অনেক অর্থ পাঠান। কারণ তারা এখানে আসার পর সপরিবারে থাকা-খাওয়ার খরচ মিটিয়ে যেটুকু বাড়তি থাকে, সেটি তার বাবা-মা, ভাই-বোনদের জন্য পাঠান। কেউ কেউ এখানে বিনিয়োগ না করে দেশে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের জন্য অর্থ পাঠান। ফলে তারা এখান থেকে রেমিট্যান্স পাঠান। আইসের অভিযানের কারণে অনেকেই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, বিশেষ করে যারা অনুমতি ছাড়া কাজ করেন। সেই সঙ্গে ব্যবসা খারাপ হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ অনেককে কাজ থেকে বাদ দিয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে যারা বেশি অর্থ পাঠাতেন, এখন তারা তেমন অর্থ পাঠাচ্ছেন না।
এদিকে খলিল বিরিয়ানি হাউস নিউইয়র্কের একটি খ্যাতনামা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা ক্যাটারিং করে থাকে। খলিল বিরিয়ানির সিইও ও প্রেসিডেন্ট খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক কাস্টমার ছিল। ২০ জানুয়ারির পর থেকে ব্যবসা ৭০ শতাংশ কমে গেছে। শীতকাল হওয়ার জন্য ৫০ শতাংশ আয় কমেছে। কারণ এই সময়ে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। আর বাকি ২০ শতাংশ ইনকাম কমেছে আইসের অভিযানের কারণে। কেবল যে নথিপত্রহীনরা রেস্টুরেন্টে খেতে আসছে না তা নয়, আউট স্টেট থেকে যারা আসতেন তারাও আসছেন না।
ফ্রেশ রুটি পরোটার কর্ণধার ডা. আল আমীন রাসেল বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের ব্যবসা ২০ ভাগ কমেছে। আগে যেখানে মানুষ রুটি ও পরোটা কিনত অনেক, এখন তা কমছে। এটি হয়তো আরও কমতে পারে। কারণ মানুষ কাজ করার কারণে রেডিমেট খাবার বেশি খেত। রুটি-পরোটা বানানোর সময় নেই। এ জন্য তারা তৈরিকৃত রুটি ও পরোটা খেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ভয় ও আয় কমে যাওয়ার কারণে মানুষ রেডিমেট ফুড কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমরা লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছি। এই ব্যবসা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। শুধু আমাদের রুটি-পরোটাই নয়, আমরা যেসব গ্রোসারিতে রুটির সাপ্লাই দিচ্ছি, সেখানেও আমরা দেখতে পাচ্ছি দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারি অনেকটাই ফাঁকা। সবাই ভয়ে আছেন।
কমেন্ট বক্স