দল ক্ষমতায় নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলের প্রধান শেখ হাসিনা এখন ভারতে। সেখান থেকে টেলিফোনে দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। কিন্তু এই মহাসংকটেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। বরং নেতৃত্বের কোন্দল যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে।
গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার উডসাইডে কুইন্স প্যালেসে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং নিউইয়র্ক স্টেট ও মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই আয়োজন করতে গিয়েও নানামুখী কোন্দল দেখা দেয়। এ কারণে দলের অনেক নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি এ অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নেতা বলেন, যতদিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব না আসবে ততদিন কোন্দল থাকবেই। কারণ বর্তমান নেতৃত্ব গত এক যুগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে গ্রাস করেছে। এমনকী নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি।
আরেকজন নেতা বলেন, দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। ভবিষ্যতেও করে যাব। তিনি বলেন, গত এক যুগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ব্যস্ত ছিলেন সরকারি দলের সুবিধা ভোগ করতে। যারা অব্যাহতভাবে এসব সুবিধা নিয়েছেন তারা এক গ্রুপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্য গ্রুপে নেতৃত্ব দিয়েছেন কমিটির নেতৃস্থানীয়রা। কিন্তু এখন দল যে সংকটে, তারপরও নেতাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ রয়েছে।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যারা বর্তমান সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের অনুসারী, তারা শেখ হাসিনার টেলিফোনে দেওয়া বক্তব্যের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এসময় সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব মানতে নারাজ, অথচ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তাদের অনেকেই ছিলেন দর্শকসারির একেবারে পেছনে।
দর্শকসারির একেবারে পেছনে থাকা একজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সেই সুযোগটি কেউ কাউকে দেয়নি। বরং নেতৃত্ব ধরে রাখার প্রতিযোগিতা হয়েছে। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে যত উপস্থিতি ছিল, বেশিরভাগই এসেছেন নিউইয়র্কের বাইরের স্টেট থেকে।
বোস্টন থেকে আসা একজন নেতা বলেন, অনুষ্ঠানটি সফল হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাদের বিভক্তি স্পষ্ট ছিল। কারণ অনেকেই ছিলেন না অনুষ্ঠানে। আমরা নেত্রীর কথা শুনতে দূর থেকে এসেছি। দলের যে কোনো সংকটে ছুটে আসবো। তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পদধারী অনেক সিনিয়র নেতাকে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি, এটা দুঃখজনক। দেশ ও দলের এই সংকটে ঐক্যের বিকল্প নেই।
দলের এই সংকটে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সদ্য অন্তর্ভূক্ত) নূরুল আমিন বাবু বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। নেত্রী আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে অনেক কর্মসূচি আসবে। সেই কর্মসূচি পালনে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
নেতৃত্বের কোন্দল প্রসঙ্গে নূরুল আমিন বাবু বলেন, নেতৃত্ব চিরস্থায়ী নয়। নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে। দলের আদর্শ মেনে কাজ করাটাই আসল কথা। তিনি বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবার সহযোগিতায় সফল অনুষ্ঠান হয়েছে।