বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে একটি চক্র।
ওই চক্রটি প্রতিবেশী দেশ ভারতে বসে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে নতুন পরিকল্পনা করছে। তারা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারির পর ভয়ংকর নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে পুরোদমে মাঠে নেমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করবে। সম্প্রতি দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে এরই মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকেরা অনুপ্রবেশ করে শিক্ষার্থী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সংঘবদ্ধ করছে। তাদের এই পরিকল্পনায় রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে এখনো যারা পালাতে পারেনি বা আত্মগোপনে রয়েছে আওয়ামী লীগের এমন সব নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০ জানুয়ারির পর ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী, যারা প্রতিবেশী দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে লেখাপড়া করছেন এবং বাংলাদেশে যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিপিএন ব্যবহার করে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।
সম্প্রতি তদন্তে আরও বেশ কিছু ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও কিছু স্থানে বাংলাদেশি হিন্দু শিক্ষার্থীদের জমায়েত। সেখানে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. প্রেরণা মালহোতরা রয়েছেন, যিনি বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বিষয়ে জুলাই-আগস্ট থেকে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। গত ৩০ নভেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে একটি সমন্বয়মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ প্রকল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন আরএসএস ও সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাসি, বহুত্ববাদ এবং মানবাধিকার নামের একটি এনজিও। মূলত ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অর্থায়নেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। এখানে বাংলাদেশ থেকে পড়তে যাওয়া হিন্দু শিক্ষার্থীদের জমায়েত করা হচ্ছে। কয়েকটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কোনো মুসলিম শিক্ষার্থীকে এ কাজে বা এই দলে সম্পৃক্ত করা হয়নি। জানা গেছে, ড. প্রেরণা মালহোতরার টিমে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন দুজন হিন্দু সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।
সম্প্রতি সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে নানা কটূক্তি করেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, যা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সেই বক্তব্য আবার নিজেই ছড়িয়ে দিতে বলছেন। সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা আগে যত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা সব মাধ্যম থেকে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন আদালত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
এদিকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নাশকতার যে নীলনকশা তৈরি করা হচ্ছে, তার প্রতিরোধে কার্যক্রমও শুরু করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে কোনো জমায়েত না করার জন্য দিল্লিকে অনুরোধ জানানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী কাজের সঙ্গে বাংলাদেশি হিন্দু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখার জন্য অনুরোধ করা হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশি হিন্দু শিক্ষার্থীদের দেশবিরোধী কার্যক্রমে তার ক্যাম্পাসকে ব্যবহৃত হতে না দিতে অনুরোধ করবে। এ ছাড়া হাইকমিশনের সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভারতে পড়তে যাওয়া সব শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তাদের কার্যক্রমের রিপোর্ট চাইবে।