অনেকের দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেহাত হঠকারী বা একগুঁয়ে। অথচ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অটল সংকল্পবদ্ধ। জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব আইন বাতিলে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ট্রাম্প ৮ ডিসেম্বর এনবিসির ক্রিস্টেন ওয়েলকেরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিক্সড ইমিগ্রেশন (মিশ্র অভিবাসন) স্ট্যাটাসধারী (অর্থাৎ আমেরিকায় জন্ম নেওয়া অবৈধ ভিনদেশি পিতামাতা নিয়ে গঠিত) পরিবারগুলোর ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ট্রাম্পের এই অনড় অবস্থানে মিশ্র অভিবাসীদের কপালে দুর্গতির পূর্বাভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ওই সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প বলেন, সন্তান-সন্ততির জীবনে পিতা-মাতার স্নেহ-বাৎসল্যের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই কোনো পরিবারকে ভাঙতে চাই না বিধায় আমেরিকায় জন্ম নেওয়া সন্তান-সন্ততিসহ নথিপত্রহীন পিতা-মাতাদের আমি তাদের নিজ নিজ দেশে পুনরায় প্রেরণ করব। এ ছাড়া চতুর্দশ সংশোধনী দ্বারা সুরক্ষিত জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিল প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, নির্বাহী ক্রিয়ার মাধ্যমেই উল্লিখিত অধিকার বাতিল করা হবে। ট্রাম্প বলেন, একমাত্র আমাদের দেশেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অধিকার আইন কার্যকর রয়েছে। অবশ্য সিএনএন জানায়, বিশ্বের কমপক্ষে ৩৬টি রাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন অধিকার কার্যকর রয়েছে।
ড্রিমারদের জন্য আশার ঈষৎ বিদ্যুৎ ঝলক : উন্নতমানের ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের স্বপ্নসৌধকে সামনে রেখে ১৫ বছর বয়সে পদার্পণের পূর্বে ভিনদেশি যেসব শিশু-কিশোর, বালক-বালিকা আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পদার্পণ করেছিল, তাদের বলা হয় ড্রিমার। আমেরিকায় বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ না পেলেও ড্রিমারদের অনেকেই বর্তমানে মাঝারি বয়সে পা রেখেছেন এবং আমেরিকায় সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ২০১৬ সালে প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ড্যাকা (ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাভালস) কর্মসূচির ইতি ঘটাতে চাইলেও ড্রিমারদের সুরক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের ওই উদ্যাগকে অবরুদ্ধ করে দেন।
যাহোক, যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে আগতদের ঢালাও বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে ট্রাম্প অটল থাকলেও অতি সম্প্রতি ড্রিমারদের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প। ক্রিস্টেন ওয়েলকেরের প্রশ্নোত্তরে ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটদের সমভিব্যাহারে ড্রিমারদের রক্ষায় আমাদের কিছু করা উচিত বলে মনে করি। কারণ শৈশব ও কৈশোরে আমেরিকায় আগত এসব ড্রিমার বর্তমানে মাঝারি বয়সে পা রেখেছে। তারা নিজ নিজ দেশের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি কিছুই জানে না। তাই ড্রিমারদের সুরক্ষায় আমি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সঙ্গে আলাপ করে একটি পন্থা উদ্ভাবন করতে চাই। আবার ঢালাও বহিষ্কার প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, শুরুতে চিহ্নিত ক্রিমিনাল এবং পর্যায়ক্রমে অন্য অবৈধদের বহিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, আমেরিকা আইন এবং ন্যায়-নীতির দেশ। আইনের মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব।