Thikana News
০১ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

যেকোনো সম্পর্কে আত্মসম্মান থাকাটা জরুরি

যেকোনো সম্পর্কে আত্মসম্মান থাকাটা জরুরি



 
‘মানুষ সামাজিক জীব’-মহামতী অ্যারিস্টটলের এই উক্তির সঙ্গে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। সমাজে বসবাস করলে সমাজের সবার সঙ্গে আমাদের মিলেমিশে চলতে হয়। কিন্তু অতিরিক্ত মিলেমিশে চলতে গিয়ে যদি সুবিধার চেয়ে সমস্যা বেশি হয়, তাহলে যাদের সঙ্গে সহজে যায় না, তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাটা স্বাস্থ্যকর। এখনকার মোটিভেশনাল ভিডিওতে প্রায়ই শোনা যায়, ‘যে যেতে চায় তাকে যেতে দাও। এখন তুমি নিজের দিকে ফোকাস করো।’ কথা হচ্ছে, কেউ যখন জীবনে আসতে চায়, সে কি বলে-কয়ে আসে? অথবা কাউকে যখন আমরা মনে জায়গা করে দিই, খুব কি হিসাব-নিকাশ করে দিই। তা-ই যদি হতো, তাহলে কোনো ভুল মানুষ আমাদের জীবনে প্রবেশের সুযোগ পেত না। ঠিক তেমনি যে যেতে চায়, তাকে আমরা যেতে দেব কি না, সেও তার ধার ধারে না। যাওয়ার সময় হলে বা থাকার ইচ্ছেটা হারিয়ে গেলে ব্যক্তি আপনাতেই চলে যাবে। নিজের দিকে ফোকাস সবকিছুর আগেই করতে হয়। জীবনে কেউ না এলেও করতে হয় শুধু নিজের জন্য।
আবার জীবনে কেউ এসে পড়লে ভুল মনে করার যেমন দরকার নেই, তেমনি কারও চলে যাওয়াটাও দোষের কিছু নয়। বরং কাউকে জোর করে আটকে রাখাটাই অসুন্দর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে মানুষকে পাল্টাতে হয়। কে কোন পরিস্থিতিতে কেন পাল্টায়, ব্যক্তিই ভালো জানে। মোটিভেশনাল ভিডিওগুলোর সঙ্গে দ্বিমতের জায়গাটা এখানেই। ওরা মোটিভেশনের নাম করে উল্টো মানুষকে চাপের মধ্যে রাখে। বেশির ভাগ কথাই এমন, ‘কেউ তোমাকে ইগনোর করছে? পাত্তা দিচ্ছে না? দামি জিনিসের কদর মানুষ সহজে বোঝে না। তুমিও তাকে ইগনোর করে, নিজেকে এমনভাবে উন্নত করে বুঝিয়ে দাও, সে তোমার যোগ্য নয়।’
এ ধরনের কথা একটু উল্টো দিক থেকে দেখলেই বোঝা যায় ভুলটা কোথায়। কাউকে যদি ভালো না-ই লাগে, তো সে উন্নত হলেই ভালো লাগবে, এমন কোনো কথা নেই। শুধু অনুন্নত হওয়ার কারণেই যদি কাউকে খারাপ লাগত, তাহলে অনুন্নত মানুষদের বন্ধু বা প্রেমিক/প্রেমিকা থাকত না। আর যেই মানুষ অন্যের কাছ থেকে উপেক্ষিত বা ইগনোর হয়েছে, সে এমনিতেই মানসিকভাবে যন্ত্রণায় থাকে। তার ওপর আবার নিজেকে উন্নত করে দেখিয়ে দেওয়ার আলাদা চাপ নিতে হবে এখন। এতে করে আরও স্পষ্ট হয়, যেই ব্যক্তি পাত্তা দেননি, তিনি ঠিক কাজটিই করেছেন। কারণ, ব্যক্তিটি সত্যিই আগে অযোগ্য ছিলেন। তাই যোগ্য হওয়ার দরকার পড়েছে এখন। কমদামি ছিলেন, তাই দামি হয়ে ওঠার এত আকুলতা। যিনি এই বুদ্ধি দিলেন, তাকে তুমি ইগনোর করে দেখিয়ে দাও...তখন ইগনোর করা তো হলোই না, বরং তাকে দেখানোর জন্য এত পরিশ্রম করে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করতে হলো।
যা-ই হোক, অন্যকে দেখানোর উদ্দেশ্যে যদি কেউ নিজেকে জেদের বশে উন্নত করতে পারেন, সেখানে বলার বেশি কিছু নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ইগনোর মানুষ বহু কারণেই করে। কোনো সম্পর্ক থেকে যদি শান্তি না পাওয়া যায়, আনন্দ না পাওয়া যায়, নিজেকে ইনসিকিউরড লাগে, ভয় লাগে, বিরক্তি লাগে, একঘেয়ে লাগে, অপর মানুষটি যদি বুঝতেই না পারে তার সঙ্গী, বন্ধুটি বা কাছের মানুষটি কী চায়, কেমনভাবে চায়, তো সেই সম্পর্ক জোর করে ধরে রাখা কঠিন। বহু সফল ব্যক্তিদেরও বন্ধু থাকে না, মনের মতো সঙ্গী তারা খুঁজে পান না। এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। অথচ আজকালকার এই ভিডিও মেকাররা মোটিভেশনাল ভিডিওর নাম করে কাউকে ইগনোর করা হলেই তাকে নায়ক বা মহান বানিয়ে দেন। আর যারা টক্সিক বা বিরক্তিকর সম্পর্ককে ইগনোর করে বা বাদ দিয়ে আগে বাড়তে চান, তাদেরকে বানিয়ে দেয় ভিলেন।
সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভিলেন আমরা নিজেরাই। যা আমাদের জন্য নয়, আমরা তার পেছনে ছুটি। যার জীবনে আমাদের প্রয়োজন নেই, তাদেরকে অযথা বিরক্ত করি। যারা অযোগ্য, বিরক্তিকর, নিম্ন বুদ্ধির, দুর্বলদের ইগনোর করে একটু শান্তিতে থাকতে চান, তাদের ওপর প্রত্যাশা করে বসি। শুধু আমরা তাদেরকে চাই বলেই তাদের মনের ওপর জোর খাটানোর অধিকার আছে ধরে নিই। এটা তখনই সম্ভব, যখন আমরা নিজের প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলি। নিজের প্রতি সম্মান আমরা তখনই হারাই, যখন আমরা ভেতর থেকে দুর্বল থাকি। সে গেলে আর তার মতো কাউকে পাব না। সে গেলেই একা হয়ে যাব। সে চলে গেলে সমাজে মুখ দেখাব কী করে। প্রতিটি চিন্তার সঙ্গে যেখানে ব্যক্তির স্বার্থ জড়িত, সেটা কখনো প্রকৃত ভালোবাসা হতে পারে না। কোনো মানুষের খুব কাছাকাছি থাকলে সেই মানুষ আমাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, দুর্বল দিক-সবল দিক সবই জেনে যান। যার জন্য সেই সব ব্যক্তির ওপর আমরা এতটাই নির্ভরতা অনুভব করি, নিজের আত্মসম্মান বাদ দিয়ে তাদের আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। ভুলে যাই, কোনো সম্পর্কে যদি দায়িত্ববোধ না থাকে মনের গভীর থেকে, সম্পর্ক যদি স্পর্শ না করে উভয় দিক থেকে, তো সে সম্পর্ক ধরে রাখা কঠিন।
মনে রাখতে হবে, কাউকে ভালো লাগলে, ভালোবাসলে বা পছন্দ হলেই ব্যক্তির ঘাড়ে চড়ে বসতে নেই। অযৌক্তিক দাবি বা প্রত্যাশা নিয়ে বায়বীয় দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে নেই। তাকে নিজের জন্য সব সময় অ্যাভয়েলেবল ভাবতে নেই। প্রতিটি সম্পর্কে (সে যেকোনো ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) একটা দূরত্ব মেনটেইন করে চলা উচিত, যাতে করে সম্পর্কের চাপে ব্যক্তির দমবন্ধ অবস্থা না হয়। অথচ আমরা সম্পর্ক চিপে তিতা রস বের করে ছাড়ি, যা পরবর্তী সময়ে বিরক্তি বা ঘৃণার জন্ম দেয়, কখনো কখনো শত্রুতে পরিণত হয়। একসময় কেউ আর কারও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাই, হ্যালো বলার অবস্থাটাও আর থাকে না। কোনো শূন্যস্থানই বেশি দিন খালি অবস্থায় থাকে না, কেউ না কেউ এসে দখল করে নিয়েই নেয়। তবে আমাদের সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেকোনো সম্পর্ক যেন হয় চাপমুক্ত। ইচ্ছে হলে ‘না’ বলার ও সরে যাওয়ার জায়গাটা যেন থাকে। দায়িত্ব নিয়েই যেন ভালোবাসতে পারি, সম্মান দিয়েই যেন কাছে রাখতে পারি প্রিয়জনকে।
লেখক : কথাশিল্পী


 
কমেন্ট বক্স