Thikana News
০১ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

অস্বাভাবিক ধকল কাটিয়ে উঠার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে

অস্বাভাবিক ধকল কাটিয়ে উঠার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে



 
বিশ শতকের শেষ দশকের প্রতিকূল পরিবেশে ঝিনুক দিয়ে সাগর সেচার দুরূহ প্রচেষ্টা হিসেবেই নিউইয়র্ক থেকে ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম সাপ্তাহিক ঠিকানার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সাবেক এমপি এম এম শাহীনের বক্তব্য অনুসারে, স্বদেশের সাথে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনা, মহান একুশের অবিনশ্বর আদর্শকে প্রবাসে উপস্থাপন, ক্রমবর্ধিষ্ণু বাঙালি কমিউটি বিনির্মাণে গঠনমূলক অবদান এবং মেইন স্ট্রিম রাজনীতিতে প্রবাসীদের অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করাসহ নানাবিধ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গরুর গাড়িযোগে চন্দ্রে অভিযান চালানোর আদলে তিনি পত্রিকা প্রকাশের দুঃসাধ্য ঝুঁকি নিয়েছিলেন। সূচনালগ্নের মূলধন সংকট, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মুদ্রণযন্ত্রের অভাব, পেশাজীবী সাংবাদিক ও জনবলে প্রচণ্ড ঘাটতি, সনাতনী যোগাযোগব্যবস্থা ইত্যাদি ঠিকানার প্রাণপুরুষ জনাব শাহীন ও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের অন্তরকে অহর্নিশ রাবণের চিতাসম অশান্তির অনলে দগ্ধ করত। অবশ্য স্বল্পসংখ্যক পরহিতব্রতী, শুভাকাক্সক্ষী, পারিবারিক সদস্যবর্গ, সমঝদার পাঠক, কর্মরত সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের অকৃত্রিম সাহচর্য ঠিকানা কর্তৃপক্ষের চলার পথে যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা ও প্রতিবন্ধকতার দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর সাফল্যের সঙ্গে মাড়াতে বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। সেই চরম যুগসন্ধিক্ষণেও ১৯৯১ সাল থেকে ঠিকানা কর্তৃপক্ষ সাধ্যানুযায়ী বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান একুশ উদ্্যাপন এবং বর্ধিত কলেবরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের শুভ সূচনা করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বরাবরের মতো চলতি বছরের মহান ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ধিত কলেবরে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ঠিকানার ৩৬তম বর্ষের মাইলফলক স্পর্শে কর্তৃপক্ষ এবং শুভাকাক্সক্ষীদের মতো আমিও আবেগ-উদ্বেলিত এবং পত্রিকার উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। সংগত কারণেই উল্লেখ করতে হচ্ছে, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঙ্গে বিশ্ববাঙালির জাতিসত্তা ও নাড়ির স্পন্দন একই সূত্রে গাঁথা। মহান একুশের রক্তঝরা পথ বেয়েই উনসত্তরের গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরের ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মোৎসর্গ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে। অধিকন্তু, বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের সূতিকাগার হিসেবেও একুশে ফেব্রুয়ারির অনুপ্রেরণা ও অবদান অনস্বীকার্য। অনবদ্য কারণে জাতিসংঘভুক্ত অপরাপর দেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিশ্ব বাঙালিও স্বদেশে ও প্রবাসে বিচিত্র আয়োজনে এবং সাড়ম্বরে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্্যাপন করে থাকে প্রতিবছর। এ ক্ষেত্রে সহস্র প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ঠিকানা কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে নেই বললে সত্যের অপলাপ হবে না।
ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বস্তুত ঠিকানার সঙ্গে আমার যোগসূত্র স্থাপিত হয় সম্ভবত ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে। সেই সুবাদে ঠিকানার অন্যান্য দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একজন নগণ্য সহযোগী সম্পাদক হিসেবে আমিও ঠিকানার দীর্ঘ পথপরিক্রমার সমভাগী ও সমব্যথী বললে সম্ভবত বাড়িয়ে বলা হবে না। অবশ্য ঠিকানায় আমার কর্মজীবনের প্রথম দিনের সহগামীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন কারণে অন্যত্র পাড়ি জমালেও অদ্যাবধি ঠিকানার সঙ্গে আমার সম্পৃক্তি রয়ে গেছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মানদণ্ডে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানা চলার পথে যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাত সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা এবং যুগ ও কালের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাপ্তাহিকী। করোনা নামক শতাব্দীর ভয়াবহতম প্রাণঘাতী মহামারিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মতো ঠিকানার প্রকাশনার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটেছিল। সাময়িকভাবে কয়েক সংখ্যা প্রকাশনা বন্ধ থাকার পর পত্রিকার প্রাণপুরুষ এম এম শাহীন শিরে সংক্রান্তি নিয়ে পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছেন এবং ধড়ে প্রাণ ধরে রাখার মতো কায়ক্লেশে প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। তবে বাইরে পুরোপুরি নিরুত্তাপ মনে হলেও নানা সমস্যার অন্তর্দহে কর্তৃপক্ষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তা ছাড়া ছন্দপতন এতটাই অস্বাভাবিক ছিল যে প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়ও ধকল কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না বললে অত্যুক্তি হবে না। বর্তমানে ঠিকানা কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপনের সীমিত আয়ে স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালনের স্থলে স্যালাইন-কোরামিনের সাহায্যে ধড়ে প্রাণ ধরে রাখার আদলে অদ্যাবধি নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে। ফলে লাখো প্রতিকূলতার মাঝেও ঠিকানার বিনা মূল্যের মুদ্রিত কপি প্রতি বুধবার নিয়মিতভাবে বাজারে আসছে এবং ইলেকট্রনিক কপি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
যাহোক, ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিযোগিতা-প্রতিহিংসাপূর্ণ ও স্বার্থের মোহাবিষ্ট বিশ্বচরাচরে কুসুমশয্যা বলতে কিছুই নেই। ঠিকানার পথপরিক্রমার ক্ষেত্রেও এর বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটেনি। গ্রাম-বাংলার সহস্র বছরের কৃষ্টি এবং প্রচলিত সমাজব্যবস্থা অনুসারে পান থেকে চুন খসে পড়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই মান্ধাতার আমল থেকে মনোমালিন্য-ঝগড়াঝাঁটি-আইন-আদালতে ভুরি ভুরি নজির ইতিহাসের পাতায় মেলে। ঠিকানায় আমার প্রায় ২৬ বছরের কর্মজীবনে অসংখ্য ঘনিষ্ঠজন, শুভাকাক্সক্ষী, অকৃত্রিম হিতৈষী এবং নিখুঁত দরদিকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আবার ব্যক্তিস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সামান্যতম ব্যত্যয় কিংবা অসন্তুষ্টির কারণে অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী ও ঘনিষ্ঠজনকে রাতারাতি ঠিকানাবিদ্বেষী হওয়ার দৃষ্টান্তও বহুবার আমার নজর কেড়েছে। জানা এবং দেখামতো যাদের পরিতুষ্ট করতে গিয়ে ঠিকানা কর্তৃপক্ষ অন্যের বিরুদ্ধে মসি চালনা করেছে, সময়ের ব্যবধানে তারাও ঠিকানার প্রতি খড়গহস্ত হয়ে উঠেছেন। যারা একসময় ঠিকানার বিপণন এবং সরবরাহের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন, তাদের অনেকেই আবার সময়ের ব্যবধানে ঠিকানা পোড়ানোর মতো অশোভনীয় কাজেও লিপ্ত হয়েছেন। একসময় যারা ঠিকানার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ও সর্বেসর্বা হিসেবে কমিউনিটিতে ব্যাপক পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন, সময়ের ব্যবধানে তাদের সিংহভাগও ঠিকানার জঘন্যতম শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। এ ছাড়া ঠিকানার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাউস মার্কা ক্যামেরা নিয়ে যারা একসময় চৌকস গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতো সারাক্ষণ অনুষ্ঠানস্থল চষে বেড়াতেন, মঞ্চ-কাঁপানো বক্তৃতার মাধ্যমে যারা রাশি রাশি প্রশংসা কুড়াতেন, তাদের বেশির ভাগকেই আজকাল ঠিকানার অনুষ্ঠানাদিতে দেখা যায় না। পক্ষান্তরে সাবেক ঠিকানা-বিদ্বেষী অনেককে বর্তমানে ঠিকানার অনুষ্ঠানমালা এবং বক্তৃতা মঞ্চে বীরদর্পে চষে বেড়াতে দেখা যায়। যাহোক, কবিগুরুর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে ইতি টানছি। মানবচরিত্রের বিচিত্র অভিজ্ঞতার নিখুঁত চরিত্র চিত্রণে সিদ্ধহস্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মনুষ্যের এই অপূর্ণ বিকশিত রুগ্্ণ সমাজে প্রীতির আশা বৃথা।’ যাহোক, ঠিকানা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সর্বদা সঠিক ছিলÑএটি হলফ করে বলার সুযোগও একেবারেই কম।
অনস্বীকার্য যে কর্মপ্রবণ বিশ্বচরাচর এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ। জীবদ্দশায় আমরা প্রত্যেকেই এর অভিনেতা-অভিনেত্রী। নিজ নিজ অভিনয় শেষে প্রত্যেককে মঞ্চ ত্যাগ করতে এবং নবাগতদের অভিনয়ের সুযোগ দিতে হয়। জগৎ-সংসারের চিরায়ত আগমন-নির্গমন পদ্ধতির প্রতি কটাক্ষ করে (সম্ভবত) প্রাতঃস্মরণীয় মুসলিম দার্শনিক ওমর খৈয়াম বলেছিলেন, ‘গৃহিণী হাঁড়ি নিয়ে কাজ করতেছে। হঠাৎ কোনো আঘাতে সেটি ভেঙে গেলে গৃহিণী তা সুদূরে নিক্ষেপ করে। কবে ভগ্ন খোলার জন্য গৃহিণী সুবর্ণ মন্দির তৈরি করেছিল। তুমি-আমিও বিধাতার চোখে ভগ্ন খোলার মতো। জাগতিক নিয়মে তোমাকে-আমাকে বিদায় নিতে হলে অপর লাখ লাখ কোটি কোটি জীব এসে তোমার/আমার শূন্যস্থান পূরণ করবে। বিশ্ববিধাতার এমন কী ঠেকা পড়েছে যে পরপারে তোমার আর আমার জন্য সুবর্ণ মন্দির তৈরি করে রাখার।’ ঠিকানার ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না। একসময় যাদের তথ্যসমৃদ্ধ রচনাবলি ঠিকানার পাতাগুলোকে সুসমৃদ্ধ করত এবং পাঠকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে গিয়েছিল, আজ তাদের অনেকের লেখাই দৃষ্টিগোচর হয় না। কালেভদ্রে দু-একজনের রসে টইটম্বুর এবং আদর্শমণ্ডিত রচনা চোখে পড়লে প্রতিষ্ঠালগ্নে কিংবা একুশ শতকের প্রথম দশকের সিংহভাগ সৃজনশীল লেখক-কবি-সাহিত্যিক-ঔপন্যাসিক-নাট্যকার-প্রবন্ধকারের সিংহভাগই হয়তো-বা অনন্তলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। কিংবা বয়সের ভারে ন্যুব্জদেহ ও কুব্জপৃষ্ঠ হয়ে পড়ায় লেখালেখির জগৎ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। ঠিকানা কর্তৃপক্ষ কারও অবদানকে অস্বীকার না করলেও সকলকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন কিংবা উপস্থাপন করার সুযোগ একেবারেই সীমিত। অগত্যা প্রায় দুই দশক সাহিত্য সম্পাদনার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যস্ত থাকায় আজ কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের অবদান স্মরণ করছি, প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার চিরপ্রশান্তি এবং নবাগত ও বর্তমানের নিয়মিত কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকার-প্রাবন্ধিক-ঔপন্যাসিক ও লেখকদেও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
স্মর্তব্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ ও সহজলভ্যতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, রুচিবোধ, মেধা-মনন ও চিন্তাচেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করেছে। যান্ত্রিক নির্ভরতা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ছড়াছড়ি প্রিন্ট মিডিয়ার ভিত্তিমূলে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালিরাও এ ধরনের অভিশাপমুক্ত নন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচিবোধে আমূল পরিবর্তন নেমে এসেছে এবং নেহাত প্রয়োজন ছাড়া তারা বাংলা ভাষায় মুদ্রিত পত্র-পত্রিকার ওপর চোখ বোলাতেও নারাজ। অথচ নব্বইয়ের দশকে আটলান্টিকের এ পাড়ে বসতিগড়া প্রবাস কমিউনিটির জীবনে প্রিন্ট মিডিয়া ছিল স্বদেশের সাথে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনা, অভ্যন্তরীণ খবরাখবর, লেনদেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার দুর্ভেদ্য বর্ম; ভাষা-ভাব-লেখা প্রকাশের একমাত্র বাহন; অমর একুশে, স্বাধীনতা দিবস এবং সামাজিক-জাতীয়-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, পণ্যের বাজারজাতকরণ, বাসা ভাড়া ইত্যাদি চাহিদা মেটানোর প্রধান অবলম্বন। তৎকালে প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম, লোকবল ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে পত্রিকা প্রকাশও ছিল বহুলাংশে কল্পনাবিলাস সামগ্রী। জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালে প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত পারিবারিক-সামাজিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করা হতো না। অথচ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রাজত্ব, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন মিডিয়ার আবিষ্কার, উদ্ভাবন; ইউটিউব, ব্লগারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর কবিতা-গল্প ও লেখা প্রকাশের সুযোগ এবং আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিস্তার প্রিন্ট মিডিয়ার অস্তিত্ব বিপন্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়া বহুলাংশে অনাদৃত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত। তা ছাড়া মুদ্রণযন্ত্রের উন্নয়ন এবং কাট ও প্রিন্টের সুবিধা, পত্রিকা প্রকাশের অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপও প্রিন্ট মিডিয়ার ধ্বংসযজ্ঞে গোদের উপর বিষফোঁড়া গজাচ্ছে। ফলে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার সাপ্তাহিকীগুলো বর্তমানে প্রতিকূলতার অতলস্পর্শী সাগরে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে এবং যেকোনো মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।
যাহোক, পবিত্র কোরআনের সুরা আর-রাহমানে বলা হয়েছে, একদা সবকিছুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে; শুধু টিকে থাকবে বিশ্বপ্রতিপালক মহান আল্লাহর অস্তিত্ব। তাই সৃষ্টি-ধ্বংসের নশ্বর পৃথিবীতে প্রিন্ট মিডিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত অধৈর্য কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো যুক্তিসিদ্ধ কারণ নেই। হয়তো-বা সদাশয় বিজ্ঞাপনদাতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের অকৃত্রিম পৃষ্ঠপোষকতা ও সহানুভূতির বারিতে অবগাহন করে সহস্র প্রতিকূলতার মাঝেও ঠিকানা টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। ঠিকানার ৩৬তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে সকলকে একরাশ উষ্ণ শুভেচ্ছা।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 
কমেন্ট বক্স