সাম্প্রতিককালে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত কয়েকটি মনিটরিং প্রতিবেদনের একটিতে ফিলিস্তিনের গাজায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ইসরায়েলি হামলায় কয়েকজন সাংবাদিকদের নিহত হওয়ার ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। গত বছরের ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর উত্তর ও মধ্য গাজায় তিনজন গণমাধ্যমকর্মী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। তারা হলেন আল-জাজিরার ক্যামেরাম্যান আহমদ আল-লুত, আমিরাতের টিভি চ্যানেল আল মাশহাদের রিপোর্টার মোহাম্মদ বালুশা ও করেসপন্ডেন্ট মোহাম্মদ জারের। শেষোক্তজন তার স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইসরায়েলি বিমানের গোলায় নিহত হন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের অপর একটি রিপোর্টে বাংলাদেশের দৈনিক কক্সবাজার বাণীর সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফার ওপর পরিচালিত অকথ্য নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি এই ঘটনার যথাযথ বিচার ও প্রতিকার নিশ্চিত করার আবেদন জানানো হয়। রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, জনাব ফরিদ তার পত্রিকায় ২০১৯ সালে স্থানীয় টেকনাফ থানার পুলিশের সহযোগিতায় মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার এলাকায় ব্যাপক মাদক চোরাচালান ও চাঁদাবাজির ওপর একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এসব প্রতিবেদনে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে টেকনাফ থানার তদানীন্তন ওসি প্রদীপ কুমার দাসের জড়িত থাকা ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ ওসি প্রদীপ জনাব ফরিদকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। হুমকি বন্ধের জন্য তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইজিপি বরাবর নিজের প্রটেকশন চেয়ে আবেদন জানান। এটা জানতে পেরে প্রদীপ জনাব ফরিদের বিরুদ্ধে ভুয়া চাঁদাবাজি মামলা করেন। এ সময় ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এলে ওসি প্রদীপ ও তার কয়েকজন সহযোগী ঢাকা থেকে জনাব ফরিদকে অপহরণ করে টেকনাফে নিয়ে আসেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় জনাব ফরিদের জীবনের দুঃস্বপ্নের (Nightmove) এক ভয়াবহ অধ্যায়। টেকনাফ থানাহাজতে রেখে তিন দিন ধরে তার ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। নির্যাতনের মাধ্যমে তার হাত-পা ভাঙা, হাত ও পায়ের কয়েকটি আঙুলের নখ তুলে ফেলা, চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটানো ও তাকে নর্দমার পানি পান করানো হয়। জনাব ফরিদকে কারাগারে প্রেরণের জন্য তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা-প্রাপ্তির সাজানো নাটক তৈরি করে ভুয়া মামলায় তার সাজার ব্যবস্থা করা হয়। ওসি প্রদীপের এসব অপকর্মে স্থানীয় সরকারদলীয় সাবেক এমপি ও কয়েকজন নেতাকর্মীর মদদ ছিল বলে অভিযোগে বলা হয়। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর জনাব ফরিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হাইকোর্ট কর্তৃক জামিন লাভের পর দীর্ঘ ১১ মাস কারাবাস শেষে তিনি কক্সবাজার জেল থেকে মুক্ত হন। দুর্নীতি, নানা অপকর্ম ও জনৈক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে কুড়ি বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত ওসি প্রদীপ বর্তমানে জেলে বন্দী জীবনযাপন করছেন।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জনাব ফরিদের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা বাতিলপূর্বক তার সুচিকিৎসার সব ব্যয় নির্বাহ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আবেদন জানিয়েছে, যে আবেদনের প্রতি মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে প্রত্যাশা করি।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এই পেশায় নিয়োজিত সাংবাদিকেরা দেশ ও সমাজের নানা দুর্নীতি, অসংগতি, অপকর্ম এবং এসবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড উন্মোচনের মাধ্যমে জনগণ তথা সরকারের চোখ ও কান (eyes and ears of the public) হিসেবে কাজ করে থাকেন। The Pen is mighter than the sword, এ কথাটি মনে রেখে সেন্সরশিপ, নির্যাতন ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যেসব সাংবাদিক সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় নিয়োজিত, তারা নিঃসন্দেহে প্রশংসার হকদার, যেমনটি তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছেন। জনৈক মার্কিন মনীষী বলেছেন, ‘The Point of Journalism is to hold people in Positions of power accountable.’
ঠিকানার ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পত্রিকাটির সঙ্গে জড়িত সবার জন্য রইল অপার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ঠিকানা দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক : কলামিস্ট