Thikana News
০১ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

অদম্য ঠিকানা, অদম্য এম এম শাহীন

অদম্য ঠিকানা, অদম্য এম এম শাহীন



 
‘Indomitable willpower is the stepping stone to success.’ অর্থাৎ, অদম্য ইচ্ছাশক্তি সাফল্যের সোপান। অদম্য মানে দুর্দান্ত, দুর্দমনীয়, অজেয়, প্রবল। এককথায় দমন করা বা বশ মানানো কঠিন, এমন। ‘ঠিকানা’র পথচলার ক্ষেত্রে অদম্য শব্দটি পুরোপুরি প্রযোজ্য। কারণ, প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন যুগে ঠিকানাকে ডিঙাতে হয়েছে পাহাড়সম নানা বাধা-বিপত্তি। টর্নেডো-স্নোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর করোনার মতো মহামারি যেমন পথরোধ করেছে, তেমনি মনুষ্যসৃষ্ট নানা প্রতিরোধে ঠিকানার পথচলা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বাধার সকল প্রাচীর ডিঙিয়ে ঠিকানা বরাবরই থেকেছে অজেয়। ঠিকানার এই দুর্দান্ত অগ্রযাত্রার মূল শক্তি পাঠকের অবিরাম ভালোবাসা ও সহযোগিতা। আর এর পেছনের প্রাণপুরুষ পত্রিকাটির ফাউন্ডার, সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, সাবেক এমপি এম এম শাহীন; যার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই ঠিকানা আজ সাফল্যের চূড়ায়।
আমেরিকান লেখক ও শিল্পী ফ্র্যাঙ্ক লয়েড বলেছেন, ‘সাফল্যের জন্য তোমাকে তিনটি মূল্য দিতে হবে : ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।’ আর বিশ্বখ্যাত লেখক ও মোটিভেটর ডেল কার্নেগির মতে, ‘যার মাঝে সীমাহীন উ‌ৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’ দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে একেবারে কাছ থেকে দেখছি, কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য উল্লিখিত দুই মনীষী যেসব গুণের কথা বলে গেছেন, তার সব কটি এম এম শাহীনের মধ্যে বিদ্যমান। শুধু তা-ই নয়, তার সজ্জন ব্যক্তিত্ব, সদা হাস্যোজ্জ্বল কথাবার্তা, বিনয়, সরলতা যে কাউকে এক দেখায় মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। দেশের প্রতি, বাংলা ভাষার প্রতি, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি তার ভালোবাসা অকৃত্রিম। দেশ ও প্রবাসের সুপরিচিত মুখ এম এম শাহীন সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণেও নিবেদিতপ্রাণ।
তবে অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী এই মানুষটি কাজের ক্ষেত্রে খুবই কঠোর, অবিচল। পরিচ্ছন্ন, নিখুঁত, নির্ভুল, আকর্ষণীয় যেকোনো কাজের প্রশংসায় যেমন পঞ্চমুখ হন; তেমনি অগোছালো, মানহীন কাজে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন। নিজে কাজপাগল, তাই কর্মঠ লোকেরা তার কাছে ভীষণ প্রিয়। কাজপাগল লোকদের বাহবা দিতে যেমন কার্পণ্য করেন না, তেমনি অকর্মণ্য লোকদের ভর্ৎসনা করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। তার ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা বরাবরই উচল। গতানুগতিক যেকোনো কাজের বাইরে গিয়ে সর্বদা চেষ্টা করেন এতে নতুনত্ব আনতে। তাই তো ৩৫ বছর বয়সী ঠিকানাকে প্রতি সপ্তাহেই পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চান একেবারে নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে, নতুন অবয়বে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠিকানাকে সর্বদা বিশ্বমানের গণমাধ্যম হিসেবে ধরে রাখতে এম এম শাহীনের গবেষণার যেন শেষ নেই। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে একজন সংবাদপত্রসেবী হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করেন। যতদূর জেনেছি, বাংলাদেশের হানাহানি, প্রতিহিংসাপরায়ণ, ঘুণে ধরা রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় সরে গিয়ে নিজেকে ঠিকানা ও তার পাঠকের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ করতে চান বাকি জীবন। কারণ, ঠিকানাই এখন তার মননে, মগজে, বিশ্বাসে, নিঃশ্বাসে, অস্তিত্বে। ঠিকানা আর এম এম শাহীন যেন সমার্থক।

ঢাকায় ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীনের সম্মানে দেয়া মধ্যাহ্নভোজে বাম থেকে- সাংবাদিক আকরব হায়দার কিরণ, কবি সালেম সুলেরী, এম মে শাহীন, মরহুম আকবর ইমাম, সেলিম নজরুল হক, মোবারক হোসেন খান, ফারুক হোসেন, শফিউল করিম সাবু, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও কবিতা দেলোয়ার।

শুরুতেই উল্লেখ করেছি, ঠিকানার চলার পথটা মসৃণ ছিল না। নব্বইয়ের একুশে ফেব্রুয়ারি ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন থেকেই পদে পদে বাধার প্রাচীর ডিঙাতে হয়েছে। দেশের সাথে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনা করতে গিয়ে শুরুতেই পড়তে হয় তথ্যপ্রযুক্তির খরায়। ৩৫ বছর আগে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে সংবাদ পরিবেশন করার কাজটি ছিল প্রায় দুঃসাধ্য। আর নিউইয়র্কে পত্রিকায় কাজ করার মতো সাংবাদিক কিংবা সংবাদকর্মী ছিলেন না বললেই চলে। ঠিকানার কর্ণধার এম এম শাহীনের বিচক্ষণতা আর আপ্রাণ প্রচেষ্টায় দুরূহ এসব কাজ সংঘটিত হতে থাকল। ঠিকানার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা। শত প্রতিকূলতা, চোখ-রাঙানি সত্ত্বেও ঠিকানা সব সময় এ ক্ষেত্রে অটল, অবিচল। প্রিয় স্বদেশ, দেশবাসী আর প্রবাসীদের স্বার্থের বাইরে ঠিকানা অন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেনি কখনো। এই বস্তুনিষ্ঠতা অক্ষুণ্ন রাখতে গিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন মহলের বিরাগভাজন হয়েছে ঠিকানা। হামলা-মামলার ভয়ভীতি, পত্রিকা পোড়ানোসহ নানা বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। আবার যারা একসময় ঠিকানার একান্ত কাছের মানুষ ছিলেন, এমনকি ঠিকানায় দীর্ঘ ১০-২০ বছর কর্মরত ছিলেন, তাদের কেউ কেউ সামান্য একটু স্বার্থে আঘাত লাগায় ঠিকানা থেকে দূরে সরে গেছেন। শুধু দূরেই সরে যাননি, ঠিকানার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এর ক্ষতি করারও চেষ্টা করেছেন। অতি আপন মানুষের কাছ থেকে দুঃখ পেলে ব্যথাটা অন্তরে প্রচণ্ড আঘাত হানে। শাহীন ভাইও এ ধরনের মনঃকষ্ট  পেয়ে অনেকবারই আবেগপ্রবণ হয়েছেন, কিন্তু পরক্ষণেই প্রচণ্ড মানসিক শক্তির জোরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
আসলে ঠিকানা ও এম এম শাহীনের মূল শক্তি পত্রিকাটির পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীরা। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশকের পথচলায় ঠিকানা যখনই কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে, পত্রিকটির পাঠকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আর এর জ্বালানি সরবরাহে অকৃপণ হাতে সহযোগিতা করেছেন বিজ্ঞাপনদাতারা। যে কারণে কোনো প্রতিবন্ধকতাই ঠিকানার পথচলা থামাতে পারেনি।
পাঠক-বিজ্ঞাপনদাতাদের পাশাপাশি কিছু মহৎপ্রাণ ব্যক্তির সাহচর্যও পেয়েছে ঠিকানা, যাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সহযোগিতায় আজকের এই ঠিকানা। তাদের মধ্যে ঠিকানার একেবারে ঘরের মানুষেরা যেমন আছেন, তেমনি আছেন দীর্ঘ সময়ের সহযোদ্ধারা। সময়ের প্রয়োজনে ঘরের মানুষদের অনেকে ঠিকানা থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও তারা গড়ে দিয়ে গেছেন এর ভিত। তাদের অন্যতম সাঈদ-উর-রব, জাবেদ খসরু, আবুল হাসনাত, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ মিতুল প্রমুখ। আর ঠিকানার সহযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ কেউ জন্ম থেকে, কেউবা ২৫-৩০ বছর ধরে আবার কেউ কেউ ১৫-২০ বছর ধরে মায়ার বন্ধনে পত্রিকাটিকে এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নিউইয়র্ক অফিসে ফজলুর রহমান, শামসুল হক, শহীদুল ইসলাম, মমতাজুল আহাদ সেলিম, নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী, মাসুদুর রহমান, নাহিদুর রব এবং ঢাকা অফিসে আমিসহ আশরাফ খান, মোস্তফা কামাল, বিনয় রায়, আবদুস সালাম, কামরুজ্জামান, কামরুল হক, তুহিন আহমেদ পায়েল, এজাজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, শামস রহমান,  আব্দুল ছালিক প্রমুখ।
ঠিকানার জন্য পরম সৌভাগ্যের দিক হলো পত্রিকাটি পেয়ে গেছে যোগ্য উত্তরসূরি। প্রতিষ্ঠাতা এম এম শাহীনের সুযোগ্য কন্যা মুশরাত শাহীন অনুভা, জামাতা রুহিন হোসেন ও একমাত্র পুত্র রাফীদ শাহীন প্রায় ৫ বছর ধরে পত্রিকাটির সার্বিক দেখভাল করছেন। নিউইয়র্কের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও মার্কিন সংস্কৃতিতে নিজেদের গা না ভাসিয়ে তারা নিজ ভাষা ও নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ঠিকানার সমৃদ্ধি তথা বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। এটা তাদের বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। তাদের নব নব চিন্তা-চেতনা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা ঠিকানার কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস। এ জন্য তাদের তিনজনকেই আন্তরিক ধন্যবাদ।
এই মুহূর্তে মনে পড়ে গেল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার বিখ্যাত দুটি চরণ :
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
ঠিকানা নামের এই মহান সৃষ্টির পেছনেও পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীনের সঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসে একজন মহীয়সী নারীর নামÑনাজনীন শাহীন। তিনি আর কেউ নন, শাহীন ভাইয়ের সহধর্মিণী। ঠিকানার এই দীর্ঘ পথচলায় ছায়ার মতো সঙ্গ দিয়ে চলেছেন নাজনীন ভাবি। ঠিকানার জন্মদিনে ওনাকে সশ্রদ্ধ সালাম।
দেশের সাথে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনাকারী ঠিকানা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রিয় মুখপত্র। প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক ঠিকানা। সকল শ্রেণির পাঠকের আস্থা ও ভরসাস্থল ঠিকানা। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সকল প্রতিকূলতা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে অদম্য ঠিকানা তার পথচলা অব্যাহত রাখুক যুগ-যুগান্তর- ৩৬ বছরে পদার্পণের ক্ষণে রইল এই কামনা।
লেখক : অনলাইন-প্রধান, ঠিকানা।
 
কমেন্ট বক্স