নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা ও শাসনকাঠামোর পরিবর্তন আনতে চায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার পক্ষে। আরও কিছু সাংবিধানিক সংশোধনী তাদের দাবি। বাহাত্তরের সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনা অথবা নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব তাদের। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল এনসিপি এসব প্রস্তাব ও দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেছে। এসব বিষয়ে তারা গণভোট অনুষ্ঠানের পক্ষে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর বিষয়গুলো ছেড়ে দেওয়ার কথাও কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা তার বিপক্ষে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর না করে সরাসরি রেফারেন্ডাম দেওয়ার প্রস্তাব তাদের। বিকল্প হিসেবে গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। তারা গণপরিষদ সংশোধনীসমূহ সংবিধানভুক্ত করার যথাযথ সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেবে অথবা নতুন সংবিধান রচনা করবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এরপর গণপরিষদ আইনসভা বা সংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার প্রশ্ন উঠলে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠানের বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাসহ নিয়ামক ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছেও তোলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরই একটা সম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্পর্শকাতর, সাংবিধানিক বিষয়াদি নিয়ে সরকার দ্রুত একতরফা বা কোনো পক্ষীয় সিদ্ধান্তে আসতে চায় না। জানা যায়, বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থার নামে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর অর্থাৎ এক ব্যক্তির শাসনের অবসান চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এমনকি বিএনপি ও তার অনুগামী দলগুলো। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার পক্ষে তারা। প্রধানমন্ত্রীর ও সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছরের স্থলে চার বছর করা, প্রতিরক্ষা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পররাষ্ট্র, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসনসহ সাত-আটটি মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখার প্রস্তাব রয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম সীমিত রাখা যাবে না। শাসনকাঠামোর প্রস্তাবিত আরও কিছু পরিবর্তনের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী লাগবে। পাঁচ বছরের স্থলে সরকারের মেয়াদ চার বছর করা, বর্তমান ৩০০ আসনের সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করে ২০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ, আইনজীবীরা থাকবেন। সাংবিধানিক সংশোধনীর পাশাপাশি বর্তমান সংবিধান রহিত করে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিও জোরালোভাবে উত্থাপিত হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে। তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থলে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নিদেনপক্ষে ‘গণ’ শব্দটি পরিহার করে প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামকরণের পক্ষে। এই প্রস্তাবের পক্ষাবলম্বনকারীরা মনে করেন, বিগত অভ্যুত্থান যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তার যথার্থ ব্যবহার করে বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার উৎকৃষ্ট সময় এখন। কোনো কোনো মহল এর পক্ষে না হলেও অধিকাংশই এই সুযোগ হাতছাড়া করার পক্ষে নয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন থেকে। তারা আওয়ামী লীগকে সমূলে উৎখাত করার দাবি করছে। বিএনপি এর বিরোধী হলেও জামায়াত পক্ষে। আওয়ামী লীগের মূলোৎপাটন করতে এ সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা জরুরি বলে তারা মনে করে।