চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকী আর মাত্র ৪-৫ দিন। আর এ কারণে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত প্রবাসীরা। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিভিন্ন দোকানে ততই ক্রেতা সমাগম বাড়ছে।
ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পোশাকের দাম কিছুটা বেশি। তারপরও পরিবারের ঈদ আনন্দের কথা ভেবে কিনতেই হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেকে ঈদের কেনাকাটা শেষ করেছেন।
এবারের ঈদে নিউইয়র্কের বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে নিত্য-নতুন সব পোশাকের সমাহার। বাংলাদেশের পোশাকের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তান থেকেও নানা ধরনের পোশাক আসছে। আসছে অন্যান্য দেশ থেকেও। নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন ও ওজোনপার্কের এলাকার দোকানগুলিতে ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। এসব এলাকার দোকানপাটে পরিবারের সবার পছন্দের পোষাক পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে কিনছেন টুপি, জায়নামাজ, আতর ও সুরমা।
এবার ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কাঞ্জিবরণ, সুতি, জামদানি, স্লিক, পাইনিসিল, হুসকি, জর্দান, কাতান, চেন্নাই সিল্ক শাড়ি, ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, মেয়েদের থ্রি পিস, ভিভেক থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ, শেরওয়ানি, লেহেঙ্গা, কুর্তা, শাল, কটি প্রভৃতি।
জ্যাকসন হাইটসে আসা ক্রেতারা জানান, ঈদের ২-৩ দিন আগে দোকানে প্রচুর ভিড় হয়। তাই আগেভাগে চলে এসেছি। পছন্দের পোশাক কিনতে। তবে দাম খুব বেশি মনে হচ্ছে। তারা জানান, নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। মনে হয় না একদিনেই হয়ে যাবে। লাগাম ছাড়া দাম।
নিউইয়র্কে ঈদ সামনে রেখে শুধু পোশাকের দোকানে নয়, গহনার দোকানেও ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া ঈদের দিনে রান্নার জন্য সেমাই, পায়েস রান্নার উপকরণ, মাছ, মাংস, পোলাও-এর চাল, মসলাপাতি, দুধ, ডিমসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের গ্রোসারি সামগ্রীও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কুইন্সের জ্যামাইকার সাটফিনে হিলসাইড সংলগ্ন একটি পার্টি হলে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ‘কুইন্স ঈদ বাজার ২০২৫’। অনলাইনভিত্তিক গ্রুপ দ্য বিউটিফুল লেডিস অব ইউএসএ এই মেলার অন্যতম আয়োজক। সহযোগিতায় ছিল আল-আকসা পার্টি হল ও ফ্যাশন হাউজ ‘টুয়েলভ’।
দেশি-বিদেশি পণ্য নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী নারী উদ্যোক্তা এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। ছুটির দিন থাকায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। শেষ মুহূর্তের প্রচণ্ড ভিড় এড়িয়ে কেনাকাটার জন্য অন্যান্য স্টেট থেকেও ক্রেতারা এসেছেন কেনাকাটার জন্য। চারদিন ব্যাপী চলা এই মেলা দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। বাংলাদেশী নারী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানি নারী উদ্যোক্তারাও এই মেলায় অংশগ্রহন করেন।
দ্য বিউটিফুল লেডিস অফ ইউএসএ গ্রুপ বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তর আমেরিকার বাঙালি কমিউনিটিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখে আসছে। এই গ্রুপের অ্যাডমিন নাদিয়া চৌধুরী, শাম্মী সাইফ ও সিলভী আকন্দ বলেন ‘পুরুষদের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে। নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণে এবং তাদের পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গ্রুপের অ্যাডমিন সিলভী আকন্দ আরো বলেন ‘আমাদের মূল লক্ষ্য, এই গ্রুপটি নারীদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশের এক সুন্দর ও প্রাণচঞ্চল প্ল্যাটফর্মে পরিণত হোক এবং নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রা সহজ ও নির্বিঘ্ন হোক’।
অ্যাডমিন শাম্মী সাইফ বলেন ‘নারীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য, যাতে তারা নিজের অগ্রগতির কথা নির্ভয়ে ভাবতে পারে’। অ্যাডমিন নাদিয়া চৌধুরী বলেন ‘আমরা বিশ্বাস করি, সম্মান ও সহনশীলতার মাধ্যমে একে অপরকে অনুপ্রাণিত করলে শক্তিশালী একটি বন্ধন তৈরি হবে’।
মেলায় শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ ও জুয়েলারি সরঞ্জামসহ আকর্ষণীয় নতুন ডিজাইনের বিভিন্ন পোশাকের স্টল দেওয়া হয়। নারীদের পোশাকের পাশাপাশি ছিল ছেলেদের পাঞ্জাবি। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি পোশাক মেলায় স্থান পেয়েছে। অনেক স্টলেই ক্রেতাদের জন্য ছিল বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।
মেলায় ঘুরতে আসা ক্রেতারা জানান, এ ধরনের আয়োজন শুধু ঈদের কেনাকাটা নয়, এই প্রবাস জীবনে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হওয়ারও সুযোগ করে দেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলায় প্রায় ৯০টি স্টল ছিল, যেখানে বাহারি পোশাকের সমাহার ছিল। একই ছাদের নিচে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কেনার সুযোগ করে দিয়েছিল এই মেলা।
মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন হাউজ ‘টুয়েলভ’-এর কর্ণধার ও জনপ্রিয় অভিনেতা টনি ডায়েস বলেন, মেলায় অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে শতভাগ বাংলাদেশি পোশাকের সমাহার ছিল এবং সুলভ মূল্যে এসব বিক্রি হয়েছে।
