যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট লেভেল, পিএইচডি করার জন্য স্টুডেন্টরা ফাফসার আবেদন করেন। যাদের অর্থ সাহায্য প্রয়োজন, তারা আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের জন্য নিড বেইজ সহায়তা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া লোন পেয়ে থাকেন। প্রয়োজন অনুযায়ী ও অবস্থা বিবেচনা করেই স্টুডেন্টদের লোন দেওয়া হয়। ওয়ার্ক স্টাডিও রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার জন্যও ফাফসা থেকে সহায়তা মেলে। এই ফাফসার সুবাদে স্বল্প, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত, ডিজঅ্যাবলসহ বিভিন্ন শ্রেণির স্টুডেন্টের আমেরিকায় লেখাপড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। এটি স্টুডেন্টদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ।
আগামী ২০২৫-২০২৬ শিক্ষা বছরের জন্য ইতিমধ্যে বেশির ভাগ স্টুডেন্ট ফাফসার ফর্ম পূরণ করেছেন। এর মাধ্যমে স্টুডেন্টদের কে কেমন সহায়তা বা লোন পাবেন, তা নির্ধারিত হয়। ফাফসা ফর্ম পূরণ করার পর একটি প্রাথমিক ধারণা মেলে স্টুডেন্টের জন্য তার পরিবার কত ডলার কন্ট্রিবিউট করবে আর তিনি কত ডলার ফেডারেল এইড, লোন ও গ্র্যান্ট পাবেন। ফাফসা ফর্ম পূরণ করার মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার একেকজন স্টুডেন্টের জন্য গ্র্যান্ট, লোন ও ওয়ার্ক স্টাডি নির্ধারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের এইড প্যাকেজ দিতে শুরু করবে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে মার্কিন শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বার্তায় জানানো হয়েছে, ২০২৫-২০২৬ শিক্ষা বছরের জন্য ৮ মিলিয়নেরও বেশি স্টুডেন্ট ফাফসা (আর) ফর্ম পূরণ করেছেন। তারা আরও জানিয়েছে, আগামী ২০২৬-২০২৭ শিক্ষা বছরে ফাফসার ফর্ম আরও উন্নত করা হবে, যাতে স্টুডেন্টরা সহজেই তা পূরণ করে জমা দিতে পারেন।
সম্প্রতি মার্কিন শিক্ষা বিভাগ ঘোষণা করে, ২০২৫-২৬ সালের জন্য ৮ মিলিয়নেরও বেশি ফেডারেল স্টুডেন্ট এইডের জন্য বিনা মূল্যে ফাফসার ফর্ম সফলভাবে জমা দিয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ সালের ফাফসা রোল আউটের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের মিসম্যানেজমেন্টের পরে এটি একটি বড় মাইলফলক।
আরও জানানো হয়, ফেডারেল স্টুডেন্ট এইড (এফএসএ) সাধারণত একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্টুডেন্ট তথ্য রেকর্ড (আইএসআইআর) সরবরাহ করে, যাতে ভর্তি কর্মকর্তারা আর্থিক সহায়তা অফার গণনা করার জন্য যে তথ্যের ওপর নির্ভর করেন, শিক্ষার্থীদের ফাফসা আবেদন জমা দেওয়ার এক কর্মদিবসের মধ্যে। তারা ২-৩ দিন সময় নিতে পারেন বললেও এর আগেই তারা কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন, যদি প্রার্থী অনলাইনে ফর্ম জমা দেন, তার কন্ট্রিবিউটর ফর্ম জমা দেন এবং আইআরএস থেকে ট্যাক্স ফাইলে থাকা তথ্য নেওয়ার অনুমতি দেন। স্টুডেন্ট ফর্ম পূরণ করার সময় তিনি তার কন্ট্রিবিউটর বা কন্ট্রিবিউটরদের তাদের অংশটি পূরণ করার জন্য আহ্বান জানানোর জন্য ইমেইল অ্যাডড্রেস দেন। ফাফসা থেকে সেই ইনভাইটেশন লেটার ইমেইলে ফাফসা কর্তৃপক্ষ কন্ট্রিবিউটরের ইমেইলে পাঠায়। সেখানে ক্লিক করে কন্ট্রিবিউটরকে তার নিজের এফএসএ অ্যাকাউন্টে লগইন করে ফাফসার জন্য তার অংশ পূরণ করতে হয়। বাবা-মা ম্যারিড ফাইলিং জয়েন্টলি হলে একজন করলেই হয়। আর আলাদা ফাইল করলে, আলাদা থাকলে বা বিচ্ছেদ হলে অথবা বিচ্ছেদের পর বিয়ে করলে সেভাবে কন্ট্রিবিউটরের ফাইল করতে হয়। তারা তাদের অংশ জমা দেওয়ার পর একটি পূর্ণাঙ্গ ফর্ম জমা হলেই সেটি প্রসেস করা হয়।
শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেমস বার্গেরন বলেন, বাইডেন প্রশাসনের ফাফসা ব্যর্থতার ফলে লাখ লাখ আমেরিকান পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেবল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের ভর্তির সময়সীমা পিছিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়নি বরং শিক্ষার্থীদের তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে ফাফসা ফর্ম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পথ সংশোধন করেছি, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। আমেরিকান শিক্ষার্থীদের সেরা সরঞ্জাম ও সংস্থানগুলোতে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ ফাফসা ফর্মের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসনের ব্যাচ সংশোধন একাধিকবার বিলম্বিত করার বিপরীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা বিভাগ ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ ফাফসা চক্রের জন্য ব্যাচ সংশোধনের সাধারণ প্রাপ্যতা ঘোষণা করে, প্রক্রিয়াটির সফল বিটা পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর। ব্যাচ সংশোধন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও দক্ষতার সঙ্গে তথ্য আপডেট করার সুযোগ দেয়, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের ফাফসা সংশোধনের জন্য ব্যয় করা সময় কমিয়ে দেবে। শিক্ষা বিভাগ ২০২৬-২৭ ফাফসা ফর্ম সম্পর্কে জনসাধারণের মতামতের জন্য ৬০ দিনের মন্তব্যের সময়কাল খুলেছে। মন্তব্যের সময়কাল ৭ এপ্রিল শেষ হবে। এ ছাড়া বিভাগ ১ অক্টোবরের মধ্যে সফলভাবে ফাফসা ফর্ম প্রকাশের পথে রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন বন্ধ করার জন্য এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেছেন। এর পর থেকে কীভাবে ফাফসার ফর্ম প্রক্রিয়া ও জমা দেওয়া হবে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আদেশ আসেনি। যদিও স্টুডেন্ট লোন দেওয়ার বিষয়টি এসবিএর হাতে নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।