দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা থাকা জামায়াতে ইসলামী ফের ঘুরে দাঁড়াতে চায়। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন আশায় বুক বাঁধছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তার সরকারের পতনের পর তারা খুশি। অতীতে তাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে নিজেদের জনগণের কাছে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে চান নেতাকর্মীরা।
জামায়াত সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরসহ বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসব নৈরাজ্য প্রতিরোধ, জনমনে স্বস্তি ফেরানো এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের খোঁজ নেওয়া ও মন্দির পাহারার পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাইকিং, শান্তি সমাবেশ, মতবিনিময় সভা, লিফলেট বিতরণ, সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ঢাকা মহানগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে খাওয়ার পানি, দুপুরের খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড করছে দলটি। পাশাপাশি আতঙ্কিত নাগরিকদের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে সচেতনতামূলক প্রচার ও গণসংযোগ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ছাত্রশিবিরও সারা দেশে হিন্দুদের মন্দির পাহারা, শহর পরিষ্কারসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার লক্ষ্য নিয়ে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে আসছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে তারা শরিক হয়েছিল। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই যোগ্য, জনপ্রিয় প্রার্থী দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা তাদের। তারা এমনও আশা করছে, দেশের জনগণ তাদের সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী করতেও পারে। তাদের এই প্রত্যাশার ভিত্তি প্রধানত বিগত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সরকার নিয়ে দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা সাধারণভাবে সুখকর ছিল না। সব সরকারের সময়ই তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে দেশের মানুষ। অবশিষ্ট আছে কেবল জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতৃত্বাধীন ইসলামি দলগুলো। ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে জামায়াত আগেই জোট গঠন করে। অবশ্য এই জোট ছিল বিগত সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনের। সরকারের পতন ঘটার পর আগামী দিনের রাজনীতি, বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন জামায়াতের নেতারা। সমমনা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সূত্র জানায়, দলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক অভিযোগ এবং শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও বিগত সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে ব্যাপক কোণঠাসা হয়ে যায় জামায়াত। এরপর প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দেয়। পরে গোপনেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে জামায়াতে ইসলামী। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে জামায়াত। দলটির নেতাদের মতে, একসময় বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা থাকলেও সেসব ছাপিয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন তারা। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা সারা দেশে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী সব সময় জনকল্যাণে কাজ করেছে এবং এখনো করছে। আমরা এত দিন স্বাভাবিকভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ পাইনি। আল্লাহ দীর্ঘদিন পর হলেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্ত করেছেন। আমরা দেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই এগিয়ে যাব, ইনশা আল্লাহ।