Thikana News
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অমসৃণ গণতান্ত্রিক পথ

অমসৃণ গণতান্ত্রিক পথ
একটি স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েমের প্রত্যাশা ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। ড. ইউনূস পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন এবং তিনি তা অনুধাবন করে একটি নির্বাচিত সরকার আনতে এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন দিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু কোনো এক রাজনৈতিক কারণে জামায়াতে ইসলামী দলটি দ্রুত নির্বাচন চায় না এবং তারা বিএনপির সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছে, যা জাতির জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের দায়িত্ব পেয়ে উল্লসিত ভারতের বিজেপি মিডিয়া সেল ও আওয়ামী সোশ্যাল মিডিয়া। ট্রাম্প কী বলেছেন, মোদী কি করতে পারেন এবং জামায়াতের চরিত্র নিয়েই আজকের আলোচনা।
মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে একজন ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাদেশের পটপরিবর্তনে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একটি অপেশাদারি প্রশ্ন করলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে উত্তরটি দিয়েছিলেন, তা নিয়ে বেশ বিতর্কের জন্ম নিয়েছে। এর রেশ ধরে শেখ হাসিনাও ইউনূস সরকারের মেয়াদ এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন আর আওয়ামী-বিরোধী অংশ তো এর কোনো গুরুত্ব দিতেই রাজি নয়। দুই মতাদর্শের লোকেরা যেভাবেই ভাবুক, ওয়াশিংটন ডিসির ওই এপিসোড থেকে দুটি বিষয় পরিষ্কার : ১. ড. ইউনূস বাংলাদেশের প্রায় ৫৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো পরাশক্তি বা বৃহৎ প্রতিবেশী, কাউকে তোয়াক্কা না করে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করেছেন, যার কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে পঞ্চম দেশ ভারত আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে বাধ্য হয়েছেন (এ জন্য তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে অ+ পেতে পারেন); ২. ভারত বাংলাদেশকে একটি সমস্যার দিকে নিয়ে যাবে।
ভারতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, আমেরিকার ডিপ স্টেট (পেন্টাগন বা সিআইএর পলিসি নির্ধারকেরা) বাংলাদেশে যে পরিবর্তন করেছে, তাতে আপনার মন্তব্য কী? ওই সাংবাদিক যে বিজেপির মিডিয়া সেলের বাংলাদেশ-বিরোধী বা শেখ হাসিনার সমর্থক, তা সহজেই বোধগম্য। তিনি ট্রাম্পের যেকোনো বিষয়ে আগের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সমালোচনা করার অভ্যাসটি জানতেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, বাইডেনের এই অপকর্মটির কথা শুনলেই ট্রাম্প বাইডেনের সমালোচনায় মেতে উঠবেন এবং তিনি বাইডেনের বিপরীত কিছু করার কথা বলবেন। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বললেন, আমেরিকার ডিপ স্টেট এ কাজ করেনি, বরং প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এ কাজটি করছেন অনেক বছর ধরে, এমনকি শত বছর, যা তিনি কোথাও পড়েছেন এবং বাংলাদেশের বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এই উত্তরটুকু বিশ্লেষণ করলেই পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে না। এই উত্তরের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির চেহারার লক্ষণীয় পরিবর্তন এবং তিনি দ্রুত বাংলাদেশ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ।
শেখ হাসিনার পতনে আমেরিকার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই বা তারা কখনো প্রমাণ রাখেও না। সম্প্রতি সিরিয়ায় যে পরিবর্তন, তাতে কি কোনো প্রমাণ রেখেছে? অথচ সবাই জানে, বছরের পর বছর সিআইএ আসাদ-বিরোধী গেরিলাদের অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। উইকিপিডিয়ার হিসাবে, ১৯৪৬ সাল থেকে আমেরিকা ৮১টি দেশে সরকার পরিবর্তন করেছে, কিন্তু কোথাও কোনো প্রমাণ রাখেনি। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, আমেরিকা কোনো দেশের সরকার পরিবর্তনে কোনো ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নেই-সেটা হয় জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের আমলে ঘটলে পরবর্তী ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট সে পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে না। ভারতীয় সাংবাদিকের এই তথ্যটুকু জানা থাকলে বা প্রশ্নটি অন্যভাবে করলে মোদিকে অস্বস্তিতে পড়তে হতো না। কারণ ভারতীয় গোয়েন্দাদের বা ভারতীয় ডিপ স্টেটের কাজ সম্পর্কে ট্রাম্প অবশ্যই জানেন। বেশি দিন আগে নয়, কানাডায় একজন শিখ নেতাকে হত্যা, আমেরিকার মাটিতে আরেকজন শিখ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা এবং তাতে একজন ভারতীয় গোয়েন্দা অফিসার বিকাশ যাদবকে আমেরিকার আদালতে দোষী সাব্যস্ত এবং জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধান অজিত দেখভালের দিকে ইঙ্গিত করে গোপন রিপোর্ট, পাকিস্তানের মাটিতে, ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত-বিরোধী ছয়জন গেরিলাকে হত্যা, যা ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের সঙ্গে শেয়ার করেছে, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ঘটানো-কোনো কিছুই ট্রাম্পের অজানা নয়। শেখ হাসিনার পতনে ডিপ স্টেটের জড়িত থাকার কথা জোরালো অস্বীকার করা মানে, থাকলেও সেটা চীন ঠেকাও বা জাতীয় নিরাপত্তার অংশ এবং সে বিষয়ে ট্রাম্পের কোনো মাথাব্যথা নেই, বরং ওটা অতীতের বিষয়। মোদির চেহারার পরিবর্তন শুধু ট্রাম্পের উত্তরের জন্য হয়নি, তার আগে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে ভারতের অজিত দোভালের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠকে হাসিনার বিষয়ে (যদি ভারত উঠিয়ে থাকে) আগাম তথ্য অবশ্যই দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের বাংলাদেশকে ভারতের কাছে তুলে দেওয়ার কিছুটা তাৎপর্য অবশ্যই আছে। ২০০১ সালে জর্জ বুশ জুনিয়র ক্ষমতায় এসে একদল নিওকনদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ওয়ার অন টেরর শুরু করেন। নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরম বন্ধু হওয়ার সুবাদে ওয়াশিংটনেরও পরম মিত্র হয়ে যান। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের তেমন কোনো গুরুত্ব না থাকায় বুশ প্রশাসন ভারতের কাছেই বাংলাদেশের ভালো-মন্দ দেখভালের দায়িত্ব দেয়। সেই সুযোগ নিয়ে ভারত বিএনপি-জামায়াতকে শায়েস্তা করতে ১/১১ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায় এবং ২০২৪ পর্যন্ত রাখতে সমর্থ হয়। কিন্তু ওবামা শাসনের মধ্যভাগে চীন ঠেকাও নীতির কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ে। বাইডেন ক্ষমতায় এসেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশকে ভারত ডেস্ক থেকে আলাদা করে নতুন বাংলাদেশ ডেস্ক খুলে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে আফরিন আক্তারকে নিয়োগ দেন এবং ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর কেলি কিন্ডালি নামের এক কর্মকর্তাকে ঢাকা পাঠিয়ে বলা হয়, এখন থেকে ভারত বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না, আমেরিকা সরাসরি সেটা দেখভাল করবে (ডেইলি স্টার, ২১/১১/২০২১)। এবার ট্রাম্প এসে সরকারের খরচ সাশ্রয় করতে আবার হয়তো সেই বাংলাদেশ ডেস্ক তুলে দিয়ে ভারতের ওপর সে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। প্রথমত, বাংলাদেশ আমেরিকার কোনো অঙ্গরাজ্য নয় যে ট্রাম্প চাইলেই বাংলাদেশ সব শুনবে। দ্বিতীয়ত, এই দায়িত্ব পেয়ে ভারত কী করতে পারে? ভারত ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের তিন দিকে অবস্থানের কারণে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে অথবা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনীকে যেভাবে মিজোরামে অস্ত্র ও ট্রেনিং দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। বাংলাদেশিরা যেভাবে পাকিস্তান, এরশাদ ও হাসিনাকে উৎখাত করে স্বাধীনচেতার স্বাক্ষর রেখেছে, তাতে ভারত সামরিক অভিযান চালিয়ে একটি পুতুল সরকার বসানো বা টেকানো খুব কঠিন বলে সেদিকে যাবে না, এটা নিশ্চিত। কিন্তু ড. ইউনূস সরকার বা পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় আসুক, ভারতের আনুগত্য না করলে দেশকে অস্থিতিশীল করার পথটাই বেছে নেবে তারা। এ ক্ষেত্রে তো আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যক নেতাকর্মী এ কাজে অতি সহজলভ্য হিসেবেই আবির্ভূত হবে। তবে আমেরিকার সঙ্গে চীনের একটি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ভারত এ কাজে হাত দেবে বলে মনে হয় না।
জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটি শুরু থেকেই বেশ বিতর্কিত। কথাবার্তা, চালচলনে ইসলামের কথা বললেও তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ইসলামিক আদর্শের পরিপন্থী। ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ইমানের বা ইসলামের প্রতি আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সাহস বা সামর্থ্য এ লেখকের নেই, সেটা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তারই এখতিয়ার। এ লেখক শুধু দৃশ্যমান কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবে, যা কোনোভাবেই ইসলামের আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
১৯৭১ সালের ভূমিকা : ‘ইনসাফ’ ইসলামের একটি প্রধান অঙ্গ। পবিত্র কোরআনের সুরা ৫৫, আর-রাহমানের ৭-৯ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, 'আমি আকাশকে সমন্বিত করার পর দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করেছি, যাতে তোমরা ইনসাফ কায়েম করতে পারো এবং কারও প্রতি অবিচার করে না।' তিনি সেই আয়াতে কোনো মানুষ সৃষ্টি বা নামাজ কায়েমের কথা বলেননি-সর্বপ্রথমে ইনসাফের কথা বলেছেন। পাকিস্তানের শাসকেরা কি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ইনসাফ কায়েম করেছিল? ইনসাফ কায়েম না করে থাকলে কোন ধর্মরক্ষার কারণে তারা পাকিস্তানের প্রতি অনুষ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল?

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের দৈন্যরা রাজনৈতিক কারণে, ধর্মীয় নয়, বিনা উসকানিতে নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়, যা পরবর্তী নয় মাস কমবেশি অব্যাহত ছিল। কোরআনের ৫ নং সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতের আল্লাহ পাক বলেন, 'আমি বনি ইসরাইলের কিভাবে লিখে নিয়োছি কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ বা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করার কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করলে, সে যেন সময় মানবজাতিকে হত্যা করল,..।' বিনা অপরাধে মানুষ হত্যার পর ভার প্রতিবাদ তো দূরের কথা, জামায়াতে ইসলামী তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আলবদর বাহিনী সৃষ্টি কয়ে ওই পাকিস্তানিদের আরও হত্যায় সহায়তা করা কি ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

ভুল করলে তওবা করা ইসলামিক আদর্শ এবং ততব্যকারীকে আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। জামায়াত ক্ষমা তো চাইনি, বরং গর্ব করে বলে, একাত্তর সালে আমরা কোনো ভুল করিনি।

১৯৯৬ সালে নীতিগত ও রাজনৈতিক পরিবর্তন। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের পতনের পর দলটি জনসমর্থনে বেশ কাবু হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯১ সালে জাভির সবচাইতে নিরপেক্ষ নির্বাচনে যে দলটির পরাজয়ে তা স্পষ্ট হয়। এরপর আওয়ামী লীগের চানকরে নেয়া তোফায়েল আহামদ শেখ হাসিনাকে বোঝাতে সক্ষম হব, জামায়াতকে কাছে টেনে নিয়ে বিএনপি থেকে আলাদা করতে পারলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম হবে। হাসিনা রাজি হয়ে তোফায়েলকে সে দায়িত্ব দেন। তোফায়েল জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে বিএনপি থেকে আলাদা করতে সক্ষম হন। পরবর্তী নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি ত্যাগ করে আলাদা নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে তোফায়েলকে পুরস্কারস্বরূণ সবচেয়ে বড় দুটি শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রঘালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামী দলটি কোনো ধর্মীয় কারণে নয়, নিজেদের রাজাকার তকমা থেকে উঠে আসার জনা

আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ দেয়। অনেজ বিশ্লেষক বলেন, সে সময় যদি জামায়াত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়িটি দেখিয়ে না দিত, তাহলে হয়তো গত ১৬ বছরের স্বৈরশাসন জাতিকে দেখতে হতো না। শুধু তা-ই নয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে মইন উদ্দিন গংয়ের সঙ্গে ভারতের মাধ্যমে শেখ হাসিনার একটি আঁতাত হয়, যা খালেদা জিয়া বুঝতে পেরে নির্বাচন বয়কট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আনারও সেই জামায়াতে ইসলামী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে টেনে নিয়ে যায়। ফলে শেখ হাসিনা দানব হয়ে জাতির খাড়ে ১৬ বছর চেপে ছিল।

আর্থিক স্বচ্ছতা। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি করতে হলে প্রচুর অর্থ ছাড়া টেকা যায় না। যেমন কমিউনিস্ট পার্টি যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আর্থিক সহায়তা পেত, তখন দলটির কী রমরমা অবস্থা। কিন্তু এখন ঢাকা শহরে একটি কমিটি টিমটিম করে ভুলা এবং টকশোতে গণ্যবাজি ছাড়া আয় কিছুই নেই। জামায়াতকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমাদের অর্থ আসে কোথেকে, তারা বলবে, আমরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে ঢালাই। কত অস্বচ্ছ তাদের এই বয়ানা তাদের ৯০ শতাংশ কর্মী নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা, যাদের নিয়মিত চাষা দেওয়ার সক্ষমতা নেই। সবাই জানে, কোথেকে অর্থের জোগান আসে, কিন্তু নির্বাচন কমিশান ভারা যেসব তথ্য দেয় না। জামায়াতের এত সব কর্মকাণ্ডের কোনোটাই ইসলামের চেতনার সঙ্গে মেলে না। তা ছাড়া হাসিনার পতনের পর জামায়াত নেতাদের আঞ্চালন চোখে গড়ার মতো। যে দলটি একা নির্বাচন করলে ৭-৮ সিট পায়, আরা এত দাপট দেখায় কেমন করে? যে করেই হোক, আরা দায়িত্ব পেয়েছে বিএনপি যেন ক্ষমতায় না যেতে পারে। আওয়ামী লীগও চাইছে না বিএনপি ক্ষমতায় যাক। কারণ ড. ইউনুসের চেয়ে জনবল ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বহুগুণ শক্তিশালী বিএনণি এবং তারা ক্ষমতায় যেতে পারলে আওয়ামী লীগের উঠে দাঁড়ানো কঠিন হবে। সুতরাং আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে ভারতের মাধ্যমে অতীতের মতো গোপন আঁতাত হওয়াটা অবাস্তব নয়। গণতন্ত্রে ফিরতে হলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া জরুরি। এই নির্বাচনের পথে ট্রাম্প বা মোদি জোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না, যেটা পারবে জামায়াতে ইসলামী। ট্রাম্পের করবো এটা পরিষ্কার, হাসিনার পতনে যেহেতু আমেরিকার কোনো ভূমিকা নেই, সেহেতু হাসিনাকে পুনর্বাসন করার প্রশ্নই ওঠে না। আর হাসিনার আত্মাধন একেবারেই মূল্যহীন। সুতরাং যত বাধাই আসুক, ইউনুস সরকারকে ন্যূনতম নির্বাচনী সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
-নিউইয়র্ক
 
কমেন্ট বক্স