Thikana News
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রগতিশীলতার ন্যারেটিভে টিকে যাওয়া ফ্যাসিজম এবং ফ্যাসিজম পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া

প্রগতিশীলতার ন্যারেটিভে টিকে যাওয়া ফ্যাসিজম এবং ফ্যাসিজম পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া
যদি দেখেন বাংলাদেশে খুব বেশি প্রগতিশীলতার আলাপ উঠছে, সাথে ইসলামিস্টদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, দেশে একটি রাজনৈতিক ক্যাচালের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে। না, এটা নতুন কোনো প্যাটার্ন নয়, বহুল ব্যবহৃত প্যাটার্ন। তবু এখনো এই দেশে তা চলে। কারণ এই দেশে কথিত প্রগতিশীলদের মধ্যে রয়েছে একপাল জ্ঞানপাপী, আর ইসলামিস্টদের মধ্যে একপাল অকাট। এই দুই পক্ষ মিলে বিগত দিনেও দেশটাকে দোজখ বানিয়ে ফেলেছিলো। আগামীতেও নরক বানানোর পরিকল্পনা করছে। 
ফুলের দোকানে হামলা হচ্ছে। ধর্মের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কনসার্ট। অন্যদিকে বইমেলায় কেন স্যানেটারি ন্যাপকিন বিক্রি করা যাবে না, তা নিয়ে চলছে মাতম। শতাব্দী ভব’র মতন একজন জোকার, যে ন্যাংটো হয়ে গিটার বাজিয়ে গানের নামে জোকারি করে, তাকে বানানোর চেষ্টা হচ্ছে বিপ্লবী। আর দুইপক্ষকে বাতাস দিচ্ছেন তসলিমা নাসরিনের মতন বিবেক বর্জিত, মগজ বিক্রিত মানুষগুলো। এই দুইপক্ষের কার্যকলাপ যদি লক্ষ্য করেন, তবে দেখবেনÑ সেই ক্যাচাল সৃষ্টির সব উপকরণ তারা জমা করেছে। এখন শুধু বড় একটা সুযোগের অপেক্ষা। তাহলেই যদি জুলাই বিপ্লবের সব অর্জন ঢেকে দিয়ে আবার ফ্যাসিস্ট রেজিমকে প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়। মূলত এগুলো হলো নাটকের স্ক্রিপ্ট, যা লেখা হয় প্রতিবেশী দেশে। 
বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই সাংবাদিক শফিক রেহমান ভালোবাসা দিবসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। তখন থেকেই ফুল বিক্রি হয়ে আসছিলো। প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানানো হচ্ছিল নানান প্রক্রিয়ায়। কিন্তু তখন কোনো ইসলামিস্ট সেভাবে তার বিরোধিতা করেননি। মাজার ছিলো তখনও, কিন্তু ভাঙার চেষ্টা হয়নি। কনসার্ট হতো সেসময় এবং সেটা ব্যান্ডগ্রুপগুলোর সোনালী যুগ। কিন্তু কোনো কনসার্টই বাধাগ্রস্ত হয়নি। অথচ তখন চারদলীয় জোটের ক্ষমতার অংশীদার ছিলো জামায়াতও। তাদের নেতারা মন্ত্রী ছিলেন। বিপরীতে যখন দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট রেজিমকে উচ্ছেদ করলো ছাত্র-জনতা ছাত্রদের নেতৃত্বে। যখন একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো, তখনই শুরু হলো ফুলের দোকান ভাঙা, মাজার ভাঙা, গানের অনুষ্ঠান বন্ধ করার মতন কাজ-কারবার। তবে কি বাংলাদেশ উগ্রপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে? 
হ্যাঁ, এমন প্রশ্ন উঠানোর জন্যই এই কার্যক্রম। যে উগ্রপন্থার অজুহাতে বাংলাদেশের মানুষ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে অত্যাচারিত হয়ে আসছিলো এক দানবীয় শাসনব্যবস্থার কাছে। সেই অজুহাত আবার ফেরানোর চেষ্টা চলছে এসব কর্মকাণ্ডে। 
এই কথিত ইসলামিস্টদের উস্কাছে কারা? এই প্রশ্নের সেই পুরোনো জবাব, সো-কল্ড সেক্যুলাররা। আমার এক বন্ধু ড. নাজিম উদ্দিন। দেশের বাইরে থাকেন। একজন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান গবেষক। তিনি বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির ব্যাপারে যে ক্যাওজ, তা নিয়ে লিখেলেন, ‘নারীর জরুরি প্রয়োজন বইমেলায় এসে মনে হবে? তাহলে তো সব প্রতিষ্ঠানে রাখতে হবে। যার ঋতুকাল তার খোঁজ নেই, পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই’ এমন কথা। আমি তার কথায় সায় জানালাম। কিন্তু আমার সেই সায়ে আপত্তি জানালেন, আমার আরেক নারীবাদী নারী বন্ধু। তিনি মানুষের ভেতরের রূপ খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অথচ তাকে যদি প্রশ্ন করি, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ‘ব্রেস্টফিডিং সেন্টার’, জানাবেন কী কয়টা আছে মেলায়? যিনি ঋতুমতী তিনি জানেন, কখন তার ঋতুর সময়। কিন্তু একজন মা জানেন না, তার শিশুর কখন ক্ষুধা লাগবে। কখন বাচ্চা কান্না শুরু করবে মার বুকের দুধের জন্য। আব্রু বাঁচিয়ে তাকে দুধ খাওয়াতে হবে, ক’জায়গায় সুযোগ রয়েছে এত বড় মেলায়? জানি, উনি জানেন না। কিংবা জানলেও মানুষকে বুক দেখিয়ে দুধ খাওয়ানোটাকে হয়তো তিনি প্রগতিশীলতা ভাবেন। যেমন ক্লিভেজ দেখিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান কেউ কেউ, ঠিক তেমনি। অ্যাটেনশন সিকার এদেরকেই বলে। 
শতাব্দী ভব’র কথা বলি, যিনি ন্যাংটো হয়ে গান করেন। মাতলামিকে প্রমোট করেন। এমন একজন ডিস্টার্বিং অ্যালিমেন্ট কারো কারো কাছে প্রগতিশীল। অর্থাৎ ন্যাংটো থাকা আর মাতলামি করাটা প্রগতিশীলতা। বলিহারী এদের চিন্তায়। সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করার পরও এদের কিছু বলা যাবে না। ধরলেই প্রগতিশীলতার বারোটা। সম্ভবত এদের প্রগতিশীলতা থাকে মেয়েদের খোলা বুকে এবং ভব’দের শিশ্নে। এরা এসব করেই উস্কে দেয় কথিত ইসলামিস্টদের। 
যদি প্রশ্ন করেন, এদের পেছনে কি কেউ বা কোনো শক্তি রয়েছে? উত্তর নিশ্চিত, হ্যাঁ। কিন্তু এই হ্যাঁ শুনেই থেমে যাবেন না, চমকে ওঠার মতন তথ্য হলো, দুইপক্ষের শক্তির উৎস একই। এদের দু’পক্ষেরই ফান্ডিং আসে সীমান্তের ওপার থেকে। প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে। দেখবেন যখনই প্রতিবেশীর স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়, তখনই আমাদের দেশে কথিত সেক্যুলারিস্ট ও ইসলামিস্টদের তৎপরতা বেড়ে যায়। কিংবা কখনো যদি স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপার থাকে, তখনও একই কাণ্ড ঘটে। প্রতিবেশীর নির্বাচন কিন্তু সাম্প্রদায়িক ঝামেলা লাগে আমাদের দেশে। মন্দির ভাঙে, ঘরবাড়ি পোড়ায়, হিন্দু-মুসলিমের মারামারি হয়। পুলিশ গুলি ছুঁড়ে, মারা যায় মানুষ। আর ওপারে উগ্রপন্থীদের পোয়াবারো। তারা জিতে যায়। তেমনি যখন ওপারের স্নেহধন্য এপারের কেউ ক্ষমতা হারায়, তাদের ফেরাবার জন্য সেই একই কার্ড খেলা হয়। চলমান সে খেলা তো দেখতেই পাচ্ছেন। সেই কথিত সেক্যুলারদের অ্যাকটিভ করা হয়েছে, সাথে কথিত ইসলামিস্টরা তো আছেনই। একে তো নাচুনে বুড়ি, তার উপর ঢাকের বাড়ি। 
বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমেও তারা ঠিক একইভাবে অ্যাকটিভ হয়েছেন এবং তদের অ্যাকটিভিটি’র পুরো ফসলটাই উঠেছে সেই রেজিমের ঘরে। ফ্যাসিজম টিকে গেছে শুধুমাত্র সেক্যুলার ও ইসলামিস্টদের মধ্যে তৈরি দ্বন্দ্বের ন্যারেটিভে, বয়ানে। আর এই বয়ান নির্মাণ হয়েছে ওপারের প্রতিবেশীদের আলাপে। কোন প্রতিবেশীদের আলাপ, সেই কথাও বলা উচিৎ। সেই প্রতিবেশীরা আবার ধর্মান্ধ। যাদের বলা হয় হিন্দুত্ববাদী। সেই ধর্মান্ধদের আলাপে এপারে বয়ান তৈরি করে সোকল্ড সেক্যুলাররা। সেই একই বয়ান ধারণ করে সো-কল্ড ইসলামিস্টরা। অনেকটা ইসরায়েলের বিষয়ে ইরান আর ভারতের যে রসায়ন সেরকম। ইরান অস্ত্র দেয় হামাস আর হিজবুল্লাহকে। ভারত অস্ত্র দেয় ইসরায়েলকে। আবার ভারত ও ইরান সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। অর্থনীতিতে দুজন দুজনের পরিপূরক। আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দুজনে পার্টনার। অদ্ভুত না! ঠিক একই রসায়ন বাংলাদেশের সোকল্ড সেক্যুলার ও সোকল্ড ইসলামিস্টদের। তারা একই বৃন্তে দুটো ফুল। আর এ দু’ফুলই নিবেদিত হয় প্রতিবেশীর পাদপদ্মে।  
লেখক : কলামিস্ট।
কমেন্ট বক্স