Thikana News
১৬ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪


 

দলীয় চাহিদা বনাম জাতীয় চাহিদা

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রম অবক্ষয়ের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক হত্যা, সেনাশাসন, স্বৈরশাসন জন্ম নিয়েছে। আর পর্যায়ক্রমে অভ্যুত্থান, গণ-অভ্যুত্থানে অনেক তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরশাসনের আকাশ-আড়াল করা সুরক্ষিত হর্মও তাসের ঘরের মতো হাওয়ায় মিশে গেছে
দলীয় চাহিদা বনাম জাতীয় চাহিদা


অবিভক্ত ভারতবর্ষে স্বরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ছিলেন একজন প্রথিতযশা ব্যারিস্টার ও ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভেন্ট। অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী ছিলেন দেশবরেণ্য নেতা ও আইসিএস। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুও ছিলেন একজন জাঁদরেল আইসিএস, ব্যারিস্টার ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা। পণ্ডিত জওহর লাল নেহরু এবং তৎকালীন ভারতীয় কংগ্রেসের অন্যান্য হিন্দু নেতাও ছিলেন শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞান-গরিমা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সৃজনশীল প্রতিভাগুণে দলীয় বলয়ের বাইরেও জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব। কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, শরাফত আলী, চৌধুরী রহমত উল্লাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী প্রমুখ মুসলিম নেতাও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী, অনলবর্ষী বক্তা, গতিশীল নেতৃত্বের অধিকারী ও অনন্যসাধারণ প্রতিভাধর। নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সততা, সদাচার, ন্যায়নিষ্ঠা, বিরল প্রতিভা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার সুবাদে তাঁরা দল-দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলেও সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
১৯২৩ সালে কংগ্রেস ত্যাগের পর কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেসের হিন্দু নেতাদের বিশেষ আশীর্বাদে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ছিলেন পূর্ব বাংলা মুসলিম লীগের সভাপতি। বাঙালি এবং বাংলার স্বার্থে জিন্নাহর সঙ্গে শেরেবাংলার চরম মন-কষাকষি ছিল। তবে ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপন এবং পাশের সভায় উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে ফজলুল হক অপরিসীম সাহসিকতা ও নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। সেই সুবাদে মুসলিম বীরদর্পী নেতা হিসেবে তিনি রাতারাতি শেরেবাংলা উপাধিতে ভূষিত হন এবং কায়েদে আযমের শৌর্য-বীর্য ও ঐতিহ্য শেরেবাংলার নিকট বহুলাংশে ম্লান হয়ে পড়ে। এসব নির্মোহ, নিবেদিতপ্রাণ, দূরদর্শী এবং যথাসর্বস্ব ত্যাগী রাজনৈতিক নেতার নিকট দলীয় চাহিদার চেয়ে জাতীয় চাহিদাই ঢের বেশি প্রাধান্য পেত। তাই তাঁরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও দলমত-নির্বিশেষে সবার আস্থাভাজন ও পূজনীয় ছিলেন। রাজনৈতিক মতাদর্শের বৈপরীত্য কিংবা ঘোরতর বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক নেতারা প্রতিপক্ষ এবং সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করতেন অকুণ্ঠ চিত্তে। তৎকালীন রাজনীতিতে যুক্তির জোর প্রাধান্য পেত।
দুর্ভাগ্যক্রমে হাল আমলের ঘুণে ধরা এবং কলুষিত রাজনীতিতে জোরের যুক্তিই প্রাধান্য পাচ্ছে। বস্তুত, অবিভক্ত ভারতবর্ষের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলীয় নেতা-নেত্রী কিংবা অনুসারী বা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থকেরা কস্মিনকালেও দেশ ও দশের স্বার্থের পরিপন্থী দলীয় প্রধান কিংবা কোনো নেতার আজ্ঞাবহ ছিলেন না। দেশের স্বার্থে নেতা-নেত্রীদের আদেশ পালনে হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গনে তৈরি থাকলেও কর্মীরা নেতাদের দেবতা, ঐন্দ্রজালিক শক্তির অধিকারী, সক্রেটিস-প্ল্যাটো-অ্যারিস্টটল কিংবা বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধদেব, হিন্দুদের ধর্মাবতার রাম কিংবা মুসলমানদের নবী-পয়গম্বর ভাবতেন না। কিন্তু হাল আমলের রাজনীতিকদের ভাষায় : একমাত্র আমি, আমার দলীয় নেতা-কর্মী-অনুসারীরাই নিখুঁত দেশপ্রেমিক। শুধু আমাদের দলই পারে বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, দেশে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও আইনের শাসনের জোয়ার বইয়ে দিতে। আমাদের বিরোধী সবাই দেশদ্রোহী এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষ-দুর্নীতিপরায়ণ-স্বেচ্ছাচারী-স্বৈরাচার ও কলুষিত।
যাহোক, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রম অবক্ষয়ের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক হত্যা, সেনাশাসন, স্বৈরশাসন জন্ম নিয়েছে। আর পর্যায়ক্রমে অভ্যুত্থান, গণ-অভ্যুত্থানে অনেক তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরশাসনের আকাশ-আড়াল করা সুরক্ষিত হর্মও তাসের ঘরের মতো হাওয়ায় মিশে গেছে। আর হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে সাবেক বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা প্রাণসজীবতা ফিরে পেয়েছেন। কয়েক মাস আগে যেসব কারারুদ্ধ নেতার মুখে সর্বদা মেঘ উড়ত, বর্তমানে সেসব কারামুক্ত নেতা হাসিমুখে দলীয় জনসভা ও কর্মসূচি উপলক্ষে সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। বর্ণাঢ্য সভামঞ্চ থেকে তারা সদম্ভে ঘোষণা দিচ্ছেন : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘস্থায়ী হলে জনরোষ উথলে উঠবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও হয়তো-বা এক-এগারো সরকারের পরিণতি বরণ করতে হবে। জানতে চাওয়া হচ্ছে অমুক বাইরে কেন? তমুক কারাগারে কেন? কারও মামলা প্রত্যাহার কিংবা সাজা মওকুফে বিলম্ব হচ্ছে কেন, সংস্কারের রোডম্যাপ কই ইত্যাদি ইত্যাদি। ধ্বংসোন্মুখ আইনশৃঙ্খলা এবং বিপন্ন পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো, ভেঙে পড়া বিচারব্যবস্থা ও বিপর্যস্ত নির্বাচন কমিশন পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে জোরদার করা অপরিহার্য হলেও অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে নারাজ রাজনৈতিক দলগুলো। দুর্নীতি, কালোবাজারি ও মাদকের মহাসাগরে গোটা দেশ-জাতি, ব্যবসায়ী, উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা প্রায় নিমজ্জিত হলেও তাদের উদ্ধারে বিরোধী দলগুলোর গঠনমূলক কোনো পরামর্শ নেই। অতি সম্প্রতি কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ঢাউসমার্কা বিশদ সংস্কারের দীর্ঘায়িত রূপরেখা প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনাকালে সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আর অত্যন্ত জোরালো ভাষায় জাতীয় প্রয়োজনীয় সংস্কার/কুসংস্কারের নামে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ না করেই চটজলদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলা হয়েছে। তাদের প্রধান ও প্রথম দাবি হচ্ছে : পতিত স্বৈরাচার সরকারের লোকজনকে গ্রেপ্তারপূর্বক বিচারে সোপর্দ করা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের সকল মামলা প্রত্যাহার করা, চটজলদি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সাদামাটা ভাষায় বলা যায় : নতুন মদে পুরোনো বোতল ভর্তি করে সাবেক আমলের যাবতীয় অনাচারকে স্থায়িত্ব দেওয়া এবং নব্য স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ সৃষ্টির সনাতনী পদ্ধতি বহাল রাখা। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যের প্রতি দোষারোপ এবং বিষোদ্্গারে অভ্যস্ত এবং ক্ষমতার দিবাস্বপ্নে বিভোর দেশের দুই শতাধিক লব্ধপ্রতিষ্ঠ, প্যাডসর্বস্ব, নাম ও ঠিকানাসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেড় মাস বয়সী অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনায় আরামের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গোটা দেশ ও জাতি সমস্যা ও অনিয়মের অতলস্পর্শী মহাসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। সম্প্রতি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও অদ্যাবধি কোটি কোটি দেশবাসী মানবেতর জীবন পার করছেন। নিত্য-নতুন আন্দোলন-সংগ্রাম, বাঙালি-পাহাড়ি সংঘর্ষ, নতুন রাজনৈতিক লেবাসধারী বখাটেদের চাঁদাবাজি-দুর্বৃত্তপনা, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ দমনে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রীতিমতো গলদঘর্ম হয়ে উঠছেন।
ভুলে গেলে চলবে না, সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী হাসিনা তার মসনদের ভিত চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের যাবতীয় কাঠামোকে ধ্বংস, বিশেষত নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। ফলে সচেতন ভোটার এবং দেশবাসী ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং ভোট বর্জন ও বিমুখতার আশ্রয় নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা, নগদ অর্থের বিনিময়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে হাজির করা ও বলপ্রয়োগে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়ানো সত্ত্বেও আমি-ডামির জাতীয় নির্বাচনে ৮% ভোট পড়েছিল। মূলত বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অত্যাচার-নির্যাতন-শাসন-শোষণের সঙ্গে দিনের ভোট রাতে নেওয়া, মিডিয়া ক্যু, গায়ের জোরে ভোট আদায় ইত্যাদি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষময় প্রতিক্রিয়া হিসেবেই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। হাসিনার পতন থেকে অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে তারা উল্টো পথে হাঁটছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। আর বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে কাক্সিক্ষত জাতীয় সংস্কারের পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যা সমাধানের দাবি মূলত সমস্যাবলিকে চিরস্থায়িত্ব প্রদান করার অভিনব ষড়যন্ত্র। কারণ বাকশাল প্রতিষ্ঠা, সেনাশাসন, স্বৈরশাসন, দিনের ভোট রাতে হওয়া, মিডিয়া ক্যু, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ইত্যাদি বস্তুত জনকল্যাণের মুখোশধারী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংস্কার/কুসংস্কারের ফসল। তাই কাক্সিক্ষত সংস্কারের পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করলে কার্যত তা হবে পুনঃ মূষিক ভবঃ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কাক্সিক্ষত সংস্কারের পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি বেশি জোরদার হলে দেশবাসী বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাজনীতিবিদদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। পরিণতিতে চরম রাজনৈতিক বিমুখতা বা শূন্যতা নিশ্চিতভাবে জন্ম নেবে এবং জনগণ কায়মনোবাক্যে তৃতীয় শক্তির উত্থান কামনা করবে। আর জাতীয় সমস্যাবলির সমাধানের পূর্বে প্রচণ্ড চাপের মুখে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে অনাগত ভবিষ্যতে আবার নতুন স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদ জন্ম নেওয়ার পুরোপুরি আশঙ্কা রয়েছে। তেমন পরিস্থিতিতে নতুন গণ-অভ্যুত্থান অপরিহার্য হয়ে ওঠার আশঙ্কাও অমূলক নয়। উল্লেখ্য, এবারের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা সপরিজনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে গণ-অভ্যুত্থান অপরিহার্য হয়ে উঠলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্তদের সঙ্গে কর্মরত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, পেশাজীবীরাও অংশ নেবেন। ফলে সরকার পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রাণ নিয়ে পালানোরও সুযোগ থাকবে না। তাই জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই কাক্সিক্ষত সংস্কার সাধনের পরই নির্বাচন অনুষ্ঠান যুক্তিসংগত বলে বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় বিশ্বাস। অধিকন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জাতীয় স্বার্থেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের কাজে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করা। এক-এগারো এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বলা যায় : এক-এগারোর সরকার ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের পটভূমিতে উচ্চাভিলাষী সেনাকর্মকর্তাদের ক্ষমতা গ্রহণজাত সরকার। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত এবং প্রায় ২৫ হাজার পঙ্গুর পরম আত্মত্যাগের ফসল। তাই চর্বিত চর্বণ মনে হলেও উপসংহারে শ্রদ্ধাভাজন প্রধান উপদেষ্টা এবং স্বনামধন্য উপদেষ্টামণ্ডলীর উদ্দেশে বলছি : প্রায় দেড় হাজার তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় সংস্কার ও পুনর্গঠনের গুরুদায়িত্ব জাতি আপনাদের কাঁধে ন্যস্ত করেছে। তাই যাবতীয় আপসকামিতা এবং ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে পালনে আপনারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন। অনবদ্য কারণে একদিকে প্রাতঃস্মরণীয় হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যেমন হাতছাড়া করা যাবে না; তেমনি বৈষম্যমুক্ত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার গুরুদায়িত্ব পালনে হতাশ হলেও চলবে না। বিদগ্ধজনদের দৃঢ়মূল বিশ্বাস, প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ক্ষমতা হস্তান্তর দেশ ও জাতিকে অনাগত ভবিষ্যতে অধিকতর ভয়াবহ পরিণতির মুখে ঠেলে দেবে। কারণ দেশের স্বার্থে প্রাণ উৎসর্গকারী ছাত্র-জনতা ভবিষ্যতেও যেকোনো স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মরণসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করবে না। দেশজুড়ে ফের অনাকাক্সিক্ষত রক্তবন্যা বয়ে যাক, সেটা কারও কাম্য নয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রদ্ধাভাজন প্রধান উপদেষ্টা/উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রতি সবিনয় অনুরোধ, দলীয় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠান না করে জাতীয় চাহিদার পটভূমিতে যুগোপযোগী সংস্কার সাধনে বজ্রকঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 

কমেন্ট বক্স