Thikana News
১৬ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪


 

একটি বিরল অভিজ্ঞতা

একটি বিরল অভিজ্ঞতা


আমি তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে তরুণ একজন লেকচারার। সেই সময়, বছরটি আমার ঠিক মনে নেই, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আসবেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। ইউনিভার্সিটির টিএসসিতে টিচারদের সঙ্গে তার দেখা করার জায়গা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক সেখানে আমন্ত্রিত। আমিও সেই মিটিংয়ে গেলাম। গেটে কয়েকজন শিক্ষক, কে কে ভেতরে যাচ্ছেন তা নিয়ন্ত্রণ করছেন। ওই শিক্ষকেরা তো আমাকে চেনেন না, আর আমি তখন দেখতে ছোটখাটো, আমার ওজন মাত্র ১০৪ পাউন্ড। তারা আমাকে বাধা দিলেন, বললেন, না না, এটা ছাত্রদের মিটিং নয়। শিক্ষকদের মিটিং। কী মুশকিল। আমি দেখতে পাচ্ছি, দূরেই আমাদের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসরকে দেখা যাচ্ছে, সেখানে আতাউর রহমান সাহেবের ভাই উদুদুর রহমান সাহ্বে, তিনি তখন ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান। তখন ধামরাই থানা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র দুজন শিক্ষক ছিলেনÑআমি আর উদুদুর রহমান সাহেব। সেই সময় আমি খুব ভীষণ জোরে চিৎকার করে বললাম, দেখতে আমাকে শিক্ষক মনে না হলেও আসলেই আমি একজন কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক। আমার এই চিৎকার শুনে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের দুজন প্রফেসর ছুটে এলেন এবং বললেন, হ্যাঁ, ওকে আসতে দেন, ও আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক।
প্রেসিডেন্ট জিয়া এলেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করল। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করল এবং একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। মাটিতে পড়ে গিয়ে তিনি হাতের ইশারায় বললেন, কোনো গোলাগুলি নয়। তিনি ঝাড়া দিয়ে উঠে ছাত্রদের দিকে আবার এগিয়ে গেলেন। বললেন, তোমরা কী চাও? আমার সঙ্গে কথা বলো। কিন্তু ছাত্ররা তখন দৌড়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে চলে গেল। তারপর প্রেসিডেন্ট জিয়া টিএসসিতে ঢুকলেন। প্রথমে একটা রুমে দাঁড়িয়ে ককটেল পার্টির মতো শিক্ষকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বললেন। আমিও দাঁড়ানো, প্রেসিডেন্ট যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমার কাছ থেকে মাত্র দেড়-দুই ফুট দূরে। আমি এতটা কাছ থেকে তাকে দেখতে পেয়েছিলাম। বড় বড় প্রফেসররা তার সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ব্যস্ত। আমার কথা বলার কোনো সুযোগ হয়নি কিন্তু আমি খুব কাছে থেকে তাকে দেখতে পেলাম। তারপর তিনি শিক্ষকদের সামনে বক্তৃতা দিলেন এবং ছাত্ররা কী ব্যবহার করল, সেটা বিস্তারিত বললেন। আর যারা টিএসসির বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ওনার জন্য, তারা তো পুরো ঘটনাটা দেখতেই পেয়েছেন। তিনি যে ছাত্রদের দুর্ব্যবহারের কারণে কিছুই করলেন না, বরং কথা বলতে চাইলেন, এটা জেনে যেসব শিক্ষক তাকে পছন্দ করেন না, তারাও সেদিন দেখতে পেয়েছিলাম প্রেসিডেন্ট জিয়া সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করেছিলেন।
সে সময় শিক্ষকদের মধ্যে ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেব উপস্থিত ছিলেন, তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ফের ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ক্যাবিনেটে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ওই সময় শেখ হাসিনা বিরোধী দলের প্রধান এবং সংসদে তিনি খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খুব অপমান করেছিল গণতন্ত্র হত্যা করার জন্য, আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। উত্তরে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়া সিকিউরিটি ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। হ্যাঁ, ছাত্ররা তার সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল, কিন্তু তিনি তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করেননি, আর সে জন্যই সেদিন প্রেসিডেন্ট জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জয় করেছিলেন।
আমি দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রেসিডেন্ট জিয়ার কট্টর বিরোধী ছিলেন, তারাও সেদিন মাথা নত করে ভালো মন্তব্য করেছিলেন এবং অনেকেই বলেছিলেন, তিনি সত্যিকারের একজন লিডার। ঘটনাটা শেখ হাসিনার আমলে ঘটলে অনেক রক্তপাত হতো, সন্দেহ নেই।

কমেন্ট বক্স