৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু দেশ ছেড়ে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর নিউইয়র্কে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের কতিপয় নেতা তাকে সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা ও প্রটোকল দিচ্ছেন।
অবাক করা বিষয় হলো - যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে এসে ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর নিউইয়র্কের অভিজাত এলাকা লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টির ফ্লোরাল পার্কে নগদ অর্থে বাড়ি কিনেছেন গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু। বাড়িটির মূল্য ৭ লাখ ৬৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৯ কোটি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির বাড়ি কেনার বিষয়টি এখন নিউইয়র্কে টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছে। এই নেতার এত অর্থের উৎস্য কোথায় তা নিয়ে সর্বত্র কানাঘুষা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একজন নেতা ঠিকানাকে জানান, গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু শত কোটি টাকার মালিক। নিউইয়র্কে তার বাড়ি কেনার খবরে বিস্মিত হইনি। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের করুণ পরিণতি হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ফ্লোরাল পার্কের বাড়িটির দাম চাওয়া হয়েছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ ডলার। পরিচিত একজন রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে সাচ্চু বাড়িটি কিনেছেন। তবে সূত্রটি বলছে, সাচ্চু তার স্ত্রীর নামে বাড়িটি কিনেছেন। এক্ষেত্রে একজন কো-সাইনার সাথে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে এই বাড়িতে উঠেছেন।
অন্য একটি সূত্র বলছে, বাড়িটি কেনার জন্য ৫০ শতাংশ অর্থ নগদ পরিশোধ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সাচ্চু। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই দুঃসময়ে তিনি একসঙ্গে মোটা অংকের ডলার কোথায় পেলেন তা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, সাচ্চু যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই সপরিবারে আসা-যাওয়া করেন। আবার চলেও যান। এবারই তিনি লম্বা সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার নিকটাত্মীয় রয়েছে। তাদের মাধ্যমে পুরো পরিবার ইমিগ্র্যান্ট হয়েছেন। তবে ইমিগ্র্যান্ট হলেও বৈধ আয় ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনা সম্ভব নয়। অনেকে অন্য দেশ থেকে পাচার কেনা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনছেন এমন নজির রয়েছে। কিন্তু তা অবশ্যই অবৈধ উপায়ে। সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সাচ্চু বৈধ ইমিগ্র্যান্ট হলেও নগদ অর্থে ফ্লোরাল পার্কের মত অভিজাত এলাকায় নগদ অর্থে বাড়ি কেনা বৈধভাবে মোটেও সম্ভব নয়।
২০২৩ সালের ২৬ জুলাই মঙ্গলবার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের অকাল মৃত্যুতে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এক নির্দেশে সব সংগঠনের নেতাদের ভারমুক্ত ঘোষণা করেন। গত ১৫ বছরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হন সাচ্চু। যার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি, তাকেও অর্থনৈতিকভাবে ছাড়িয়ে যান তিনি। তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং পুর্ণ সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন তিনি।
একাধিক সূত্র জানায়, নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কতিপয় নেতার সান্নিধ্যে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। তাকে গাড়ি সুবিধা এবং প্রটোকল সুবিধা দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। অনেককে আর্থিকভাবে সহায়তা দিচ্ছেন তিনি। তবে বাড়ি কেনার পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেকে বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের কয়েকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ২০ বছর ধরে প্রতিদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরও বাড়ির মালিক হওয়ার সামর্থ হয়নি। অথচ বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করেন, তাদের অনেকে কত সহজে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-গাড়ির মালিক হচ্ছেন! এসব দুর্নীতিবাজদের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের আজকের এই পরিণতি।