Thikana News
২২ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


 
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২৪

জনমতের অনিশ্চয়তার ঝড়ে লন্ডভন্ড উভয় শিবির

জনমতের অনিশ্চয়তার ঝড়ে লন্ডভন্ড উভয় শিবির


আসছে ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ওই নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে দুশ্চিন্তার ঝড় ততই ঘনীভূত হচ্ছে।
সিএনএন পল অব পলসের এক জরিপ প্রতিবেদনে জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি গড়ে ৫০ শতাংশ ভোটার এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি গড়ে ৪৭ শতাংশ ভোটার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর এক প্রতিবেদনে পছন্দসই ভোটারদের ৫০ শতাংশ কমলার প্রতি ও ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি এবং তালিকাভুক্ত ভোটারদের ৪৯ শতাংশ কমলার প্রতি ও ৪৭ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আবার রেজিস্ট্রেশনের প্রশ্ন না ওঠালে প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ কমলা হ্যারিসের প্রতি এবং ৪৮ শতাংশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এতে চূড়ান্ত পর্যায়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস স্পষ্টতর হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এ ধরনের এক অঙ্কের ন্যূনতম ব্যবধানের কারণে কার জয়ের পাল্লা ভারী, সেটা অনুমান করা কঠিন। তাই শেষ পর্যন্ত কমলা-ট্রাম্পের যে কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসতে পারেন।
এদিকে দোদুল্যমান পেনসিলভানিয়া রাজ্য এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে সবার বদ্ধমূল ধারণা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ায় বিজয় ছিনিয়ে আনতে আদাজল খেয়ে লেগেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ অক্টোবর মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে কমলা অ্যারিতে এবং ট্রাম্প ফিলাডেলফিয়া উপশহরের টাউন হলে আতিথ্য গ্রহণ করেন। এ ছাড়া কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ উইসকনসিনে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনেটর জেডি ভ্যান্স মিনেসোটা, ইলিনয় ও আইওয়া রাজ্য চষে বেড়িয়েছেন। জেডি ভ্যান্স বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর অভ্যন্তরীণ শত্রুরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড সামরিক বাহিনী তলব করবেন। আর ডেট্রয়েট ইকোনমিক ক্লাব থেকে ট্রাম্প সতর্ক উচ্চারণ করে বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস জিতলে পুরো দেশকে ডেট্রয়েটের পরিণতি বরণ করতে হবে।
দুই প্রার্থীর জমজমাট প্রচারণা : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চলছে দুই প্রার্থীর। এখন পর্যন্ত নানা হিসাবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও তার প্রতিপক্ষ সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দিন দিন ভালো করছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে অবশ্য একদণ্ড বসে নেই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। ভোটার টানতে নিজেদের মতো করে জমজমাট প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
ভোটার টানতে এই দুই প্রার্থী অবশ্য বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পন্থা। গত ১২ অক্টোবর নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বেছে নিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়াকে। অন্যদিকে কমলা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন দোদুল্যমান স্টেট নর্থ ক্যারোলিনায়। ট্রাম্প এদিন কমলা হ্যারিসের জন্মস্থান ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান। কমলার শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই হারতে চলেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তার পরও ট্রাম্প হাত গুটিয়ে বসে নেই। ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কমলার রাজ্যের সাম্প্রতিক নানা অসংগতি তুলে ধরে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে কমলা হ্যারিস এদিন হারিকেন হেলেনের আঘাতে বিধ্বস্ত নর্থ ক্যারোলিনায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি দুর্গতদের জন্য ডায়াপার, ব্যথানাশক ওষুধ ও ব্যান্ডেজ প্যাকেট করার কাজে সাহায্য করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলিনায় অল্প ভোটে জিতেছিলেন ট্রাম্প। এবার দোদুল্যমান এই রাজ্যটিকে কুক্ষিগত করতে তাই মরিয়া ডেমোক্র্যাট শিবির।
নির্বাচনে ফ্যাক্টর জেন-জি : এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ লাখ তরুণ-তরুণী। তাদের বড় একটি অংশ ৩৫ বছরের কম বয়সী, যাদেরকে বলা হয় জেন-জি (জেনারেশন-জেড)। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণ করবে এই প্রজন্মই, যারা মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নির্বাচনে এই বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটারের আগ্রহ দেশের অর্থনীতি নিয়ে। জরিপে এসেছে, তরুণেরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি উদ্বিগ্ন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আয় বৈষম্য ও দারিদ্র্যের মতো বিষয়গুলো তাদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে। তরুণদের মতে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভয়গুলোই ভোটারদের ব্যালট বাক্সে নিয়ে যেতে পারে।
দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও নির্বাচনী প্রচারণায় তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনে তাদের যুক্ত করতে বিভিন্ন ঘোষণাও দিচ্ছেন তারা। তরুণদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ছাত্র ঋণ মওকুফ, ভোক্তা মূল্য নির্ধারণ ও আবাসনের মতো অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলো নিয়ে কথা বলছেন। যেগুলো ছিল বাইডেন সরকারের সাফল্য। পাশপাশি কমলা প্রথমবারের মতো বাড়ির ক্রেতাদের জন্য ২৫ হাজার ডলার ভর্তুকি এবং নবজাতকদের পরিবারের জন্য ৬ হাজার ট্যাক্স ক্রেডিট প্রস্তাব করেছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আমলের বাজারের চিত্র তুলে ধরছেন। যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়ার কথা বারবার উল্লেখ করছেন। এর মাধ্যমে তিনি তরুণদের অর্থনৈতিক অসন্তোষকে পুঁজি করার চেষ্টা করছেন। এমনকি তিনি কমলা হ্যারিস ও বাইডেন প্রশাসনের আগের অর্থনৈতিক রেকর্ডকে সামনে টেনে এনে আক্রমণ করছেন।
ট্রাম্পকে ঠেকাতে কমলার মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে উপযুক্ত প্রমাণ করতে মেডিকেল রেকর্ড প্রকাশ করেছেন। বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
কমলা হ্যারিসের নিজের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের পর ট্রাম্পের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ না করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দেখতে চায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য উপযুক্ত কি না। হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে ভাইস প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক জোশুয়া সিমন্স বলেন, গত এপ্রিলে করা হ্যারিসের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট অসাধারণ এসেছে। সিমন্স বলেন, অত্যন্ত ব্যস্ত শিডিউল থাকার পরও কর্মচাঞ্চল্য থাকা এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট বজায় রাখেন কমলা। হ্যারিসের চিকিৎসার ইতিহাস এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যের প্রতিবেদনে সিমন্স লিখেছেন, প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব সফলভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য কমলা হ্যারিসের আছে।
কমলা হ্যারিসের প্রচার টিম চাচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বয়সের ব্যাপারটি সামনে আসুক। কারণ বিতর্কে খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পর ট্রাম্পই এখন সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী।
অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ভোটার টানার চেষ্টা ট্রাম্পের : একের পর এক অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার অভিবাসীদের বিপজ্জনক অপরাধী বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে যেসব অভিবাসী আমেরিকান নাগরিকদের হত্যা করছেন, তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। গত ১১ অক্টোবর কলোরাডোর অরোরায় এক নির্বাচনী সমাবেশে এ আহ্বান জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভেনেজুয়েলাভিত্তিক অপরাধী চক্রে গ্যাং ট্রেন ডে আরাগুয়ার সদস্যদের পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি অপরাধী চক্রটির সদস্যদের দমনে ‘অপারেশন অরোরা’ নামে একটি অপারেশন পরিচালনা করবেন। ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারশিবির।
অভিবাসীবিরোধী কথাবার্তা কিংবা বক্তব্যের জন্য এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প। এক মতামত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু অভিবাসন নীতি। অনেক ভোটার মনে করছেন, ট্রাম্পই এ সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।
 
কমেন্ট বক্স