Thikana News
২২ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


 

বিএনপি সামলাতে ঘর্মাক্ত তারেক

বিএনপি সামলাতে ঘর্মাক্ত তারেক


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নিরুদ্দেশে। দলটির প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশান্তরী। বাদবাকি নেতাদের কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কেউ কারাগারে। কেউ দেশেই লুকানো-চাপানো। তাদের কেউ কেউ ধরা পড়ছেন মাঝেমধ্যে। কেবল তারাই প্রধান উপদেষ্টা ও তার কয়েকজন সহকর্মীর প্রতিপক্ষ নন। অজ্ঞাত-অদৃশ্য শত্রু অনেক। সুযোগ পেলেই তারা কথা-কাজে হামলে পড়েন। ত্রুটি খোঁজেন। আবার উপদেষ্টাদের কয়েকজন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বেশি কথা বলে শত্রুর সংখ্যা বাড়ান। তার ওপর কিছু রাজনৈতিক দলও প্রকারান্তরে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছে।
এ সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাচ্যুত দল ও সরকারের প্রধানের চম্পট দেওয়া প্রাণ বাঁচাতে নাকি সমঝোতার মাধ্যমে ‘সেইফ এক্সিট’, তা এখনো পুরোপুরি খোলাসা নয়। তবে দুটি উপাদানেরই মিশেল আছে। এটা বুঝতে ও জানতে আরও সময় লাগবে। ক্ষমতা হারিয়ে দলের নেতাকর্মীদের এতিম অবস্থা। তারা প্রকাশ্য হচ্ছেন না। কেউ কেউ ফেসবুকে আশ্রয় নিয়েছেন, ইচ্ছেমতো বয়ান দিচ্ছেন। পোস্ট-স্ট্যাটাসে তারা জানাতে চান, যেকোনো সময় পড়ে যাবে ড. ইউনূস সরকার। তখন সঙ্গে সঙ্গে সত্যি সত্যি চট করে চলে আসবেন শেখ হাসিনা। এটি তাদের কারও কারও বিশ্বাস। অপেক্ষার বিষয়ও।
এখন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র পলাতক সভাপতির প্রবাসী পুত্র। ঘুরেফিরে সেই ‘পরিবার’। অন্য কাউকে স্পোকসম্যান বা কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে না বিশেষ কারণে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুবিধাভোগী, স্বজন, মোসাহেবদের দিয়ে রোবটের মতো শিখিয়ে দেওয়া কথা বলানোর অবস্থা হয়নি। নানান পদ, পদক, ভাতা, ব্যবসা পাওয়া অনুগত গোষ্ঠী দেশের ভেতরে-বাইরে থেকে ফেসবুকে নড়াচড়া করছে। অর্থবিত্ত হাতানো গোষ্ঠীটি ভিড়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ বিভিন্ন নিরাপদ মহলের সঙ্গে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জায়গা পাওয়া কয়েকজনকে সহ্য করতে না পারা ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। ড. ইউনূসের সাজা মওকুফ হয়েছে। আর্থিক লাভ হয়েছে তার ৬৬৬ কোটি টাকা কর মওকুফ পাওয়ার মাধ্যমে। গ্রামীণ ব্যাংক পেয়েছে ৫ বছরের কর অব্যাহতি। নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টার ও মাহফুজ আলম পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদ। অন্য সমন্বয়কেরা পেয়েছেন বিপুল ক্ষমতা। ফরহাদ মজহার নিজের লোকদের বিভিন্ন জায়গায় বসাতে পেরেছেন। সুইডেন আসলাম থেকে শুরু করে ডাকসাইটে সন্ত্রাসীরা ছাড়া পেয়েছে জেল থেকে। মুক্তির পাশাপাশি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন অনেকে। জামিন পেয়েছেন রাজনৈতিক অনেক নেতাকর্মী, জামায়াত-শিবির বিপুল স্পেস পেয়েছে। ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের নেতারা বিপুল ক্ষমতাশালী ভাবছেন নিজেদের।
সেই তুলনায় প্রাপ্তি কম বলে মূল্যায়ন বিএনপির একটি গ্রুপের। তারা মনে করে, দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ হয়েছে সত্য, কিন্তু এর দৃশ্যমান কোনো প্রভাব নেই। কারণ আগে থেকেই তিনি নিজের বাসভবনে ছিলেন। তারেক রহমানের ছোট ছোট মামলা বাতিল হচ্ছে সত্য, কিন্তু তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা জাগেনি। বরং তারেক রহমানের সাজা পাওয়া মামলা নিয়ে কোনো কথা নেই কারও, সরকার এটা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে পারছেন। আগেও দিতেন, তবে এখনকার মতো এত প্রচার পেত না, পার্থক্য কেবল প্রচারেই। কিন্তু তার স্ট্যাটাস আগের মতোই রয়ে গেছে। এ ধরনের অঙ্ক কষতে, সমীকরণ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সরকার ব্যর্থ হলে বিএনপির নামে ফের দুর্গতি নামবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। এর পরও থামানো বা দমানো যাচ্ছে না দলের এ মহলটিকে। দলটির অধৈর্য হয়ে খাই-খাইতে নেমে পড়া কিছু ব্যক্তির লাগাম টেনে ধরাও যাচ্ছে না। বহিষ্কার, সাময়িক অব্যাহতি, পদাবনতি, পদ স্থগিতসহ নানা শাস্তিতেও ভয় পাচ্ছে না।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার এগোচ্ছে নিজস্ব গতিপথে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় যারা হত্যা-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে গণমামলা হচ্ছে। হত্যা মামলা হচ্ছে সমানে। যদিও এজাহারে কারও নাম থাকলেই তিনি অভিযুক্ত হয়ে যান না। পুলিশের তদন্তের পর আদালত যখন অভিযোগপত্র আমলে নেন, তখনই শুধু একজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত বলা যেতে পারে। বেশির ভাগ মানুষ এমন করে ভাবে না। এ ধরনের কাণ্ড তারা গত ১৫ বছর দেখতে দেখতে বীতশ্রদ্ধ। যে যতটুকু অপরাধ করেছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ততটুকু ব্যবস্থা চায় তারা।
এর মাঝে আবার ইনডেমনিটির ছোট একটা ঘটনা ঘটে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণ-অভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মুশতাক আহমেদের জারি করা ইনডেমনিটিতে বলা হয়েছিল, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন, তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। ঘটনা দুটি ভিন্ন হলেও আইনের ভাষা ও শব্দপ্রয়োগ প্রায় একই ধরনের। যদিও সরকার এই আদেশকে এখনো ইনডেমনিটিতে নিয়ে না গেলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি অনেকটাই ‘সাধারণ ক্ষমার’ আদলে করা।
প্রেক্ষিত ও ঘটনার মাঝে তফাত অনেক। বাংলাদেশে পঁচাত্তরের আগে একদলীয় বাকশাল ছিল সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি দ্বারা গঠিত শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। সেই প্ল্যাটফর্মকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন মেজর (এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত)। নেপথ্যে ছিলেন অনেকে। এবার আওয়ামী-ফ্যাসিবাদী শক্তির মূল উৎপাটন করার জন্য এগিয়ে এসেছেন নতুন প্রজন্মের ছাত্ররা, যাদের তারা ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি। এ ছাড়া সেই পতন, সেই দুঃশাসন আর এই পতন, এই দুঃশাসন-উত্তর পরিস্থিতি এক নয়। সে সময়ে বিপ্লবের সফল নায়কেরা সরকার গঠনের পরও সরকার পরিচালনার রিমোট কন্ট্রোল বিপ্লবীদের হাতেই ছিল। সহজেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২৪ এর অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু বিপ্লবী সরকার নয়। ফলে বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিতে যেভাবে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, তা হচ্ছে না। এসবের মাঝে নানা ফের ও অর্থ খোঁজার মহল ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।
কমেন্ট বক্স