Thikana News
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিক্ষোভে উত্তাল টাইমস স্কয়ার

নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে যোগ দিলেন ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা
বিক্ষোভে উত্তাল টাইমস স্কয়ার


বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রবাসীদের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল বিশ্বের রাজধানী নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার। ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ও ২১ এপ্রিল রোববার অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে সপরিবারে যোগ দিয়ে শত শত প্রবাসী সমর্থন ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন। সময় টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকীর ওপর হামলার ঘটনা ছাড়া এই বিক্ষোভ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণ। 
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশগুলোতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান এবং নিহতের ঘটনায় বিচার দাবি করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আয়োজনে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন তারা। এসময় কোটার যৌক্তিক সংস্কার এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়। 
গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারে আয়োজিত সমাবেশে কয়েক শ’ প্রবাসী বাংলাদেশি ও নতুন প্রজন্মসহ বিপুল শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন এবং দেশের আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানান। এই সমাবেশের মূল শ্লোগান ছিলো ‘সেভ বাংলাদেশি স্টুডেন্টস’। সমাবেশে সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও আয়োজক বাদল মির্জা, ফাহাদ হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, ওসমান গণি, নাফিসা সাঈদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়াও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মেরি জোবায়দা, কাজী ফৌজিয়া, কাজী জহিরুল ইসলাম, পারভেজ সাজ্জাদ প্রমুখ যোগ দেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলে। এসময় সমাবেশকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসহ তাদের দাবি-দাওয়া সম্বলিত পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে।
এদিকে টাইম স্কয়ারের সমাবেশ কভার করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ‘পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশন’-এর অভিযোগ তুলে সময় টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাকীর উপর চড়াও হয় এবং তাকে লাঞ্ছিত করে। এসময় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গাড়ীতে তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। 
এদিকে ২১ এপ্রিল রোববার দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে টাইমস স্কয়ারে। তবে এদিন চার খণ্ডে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়ে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। এখানে বিক্ষোভকারীদের অনেকে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন। 
বাংলাদেশে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে প্রবাসী নাগরিক সমাজ ইউএসএ’র মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত ২০ জুলাই শনিবার ব্রঙ্কসের স্টারলিং-বাংলাবাজার-ইউনিয়নপোর্ট রোডে এই কর্মসূচিতে স্থানীয় প্রবাসীরা অংশ নেন। 

জাতিসংঘের সামনে সমাবেশ: বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশি আমেরিকান সিটিজেন মুভমেন্ট ফোরাম নিউইয়র্ক। গত ২২ জুলাই সোমবার অনুষ্ঠিত সমাবেশ শেষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
সমাবেশে আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া এবং এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ফ্যাসিবাদী নীতির তীব্র সমালোচনা করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
আহবাব চৌধুরী খোকনের সভাপতিত্বে এবং আনোয়ার জাহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গোলাম ফারুক শাহীন, অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, আমিনুল ইসলাম স্বপন, সাইদুর রহমান সাঈদ, মোহাম্মদ বদিউল আলম, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান হোসাইন, মো. শাহীন চৌধুরী, আলমগীর হোসেন মৃধা, জাফর তালুকদার, মো. লিয়াকত আলী, জাহাঙ্গীর এম আলম, বাচ্চু মিয়া, আব্দুর রহিম, এ আর মাহবুব, সোয়েব আহমেদ, দিলরুবা আক্তার মায়া, মমতাজ উদ্দিন, আক্তার হোসেন নান্নু, আরিফুর রহমান কাইজার, বেগ হোসাইন ইসলাম মিঠু, জিল্লুর রহমান খাঁন, তপদী রায় বরুণ, আব্দুল আহাদ হেলাল, শেখ মো. ইসাহক আলী, রুবেল হোসেন, মুরাদ হোসেন, মঈনুল হোসেন, আ. মালেক রোকন, রুহুল আমিন নাসির, নাসির উদ্দিন, রেজবুল কবির, জামাল হোসেন, হাজী সাব্বির রহমান, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, দেওয়ান কাউসার, হুমায়ুন কবির, এম এ কাইয়ুম, তাজুল ইসলাম (চেয়ারম্যান), বীর মুক্তিযোদ্ধা অহেদ আলী মন্ডল, মুক্তাদির হোসেন, আশরাফ হোসেন, এম এ কালাম, রাহিমুল ইসলাম প্রিন্স, বাইতুল্লাহ শাহীন প্রমুখ। এ কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা কোটা প্রথার তীব্র সমালোচনা করে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং ন্যায় বিচারের দাবি জানান। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।
পরে গোলাম ফারুক শাহীনের নের্তৃত্বে বাংলাদেশি আমেরিকান সিটিজেন মুভমেন্ট ফোরাম নিউইয়র্ক, ইউএসএ’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ: ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র ও অভিভাবকদের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে প্রবাসের কিছু সাংবাদিকও অংশ নেন। এতে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাংবাদিক তাসের মাহমুদ, মনির হায়দার, কাজী জেসিন, মনিজা রহমান ও শাহেদ আলম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন।
এদিকে ১৭ জুলাই বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ কনসুলেটের সামনে সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক-এর ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ আনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে প্রবাসের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা দেশে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন এবং নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সমাবেশ থেকে কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। অন্যথায় প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। সমাবেশে ফাহাদ হোসেন, ওসমান গণি, আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ কনসুলেট অফিসে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। কনস্যুলেটের ভাইস কনসাল আসিব আহমেদ স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।

জ্যামাইকায় বিক্ষোভ সমাবেশ: নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ ও ১৬৮ স্ট্রিটের কর্ণারে নিউইয়র্কের ইয়র্ক কলেজ বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৈয়দ আল আমীন রাসেলের নেতৃত্বে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এই সমাবেশে যোগ দেন। 
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশেনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এতে নিহতদের স্মরণে নিরবতা পালন ও বিশেষ দোয়া করা হয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি লিডার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ছাত্রনেতা দীহান হোসেন, শারমীন, সুমন খান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রাব্বী সৈয়দ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জ্যাকসন হাইটসে নাগরিক সমাবেশ : ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নাগরিক সমাজের আহবানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালে একই স্থানে আওয়ামী লীগের মিছিল প্রবেশ করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উভয়ের উত্তেজনা ঠেকাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ সময় পুলিশ একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। তার সঠিক পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এসব সমাবেশ থেকে সবধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান বক্তারা। তারা ছাত্রহত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ : বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন এর সাথে সংহতি জানিয়ে এক প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত ছাত্রছাত্রীরা। গত ২০ জুলাই শনিবার বিকেলে ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাইজের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মেট্রো ওয়াশিংটনের বসবাসরত সাধারণ মানুষদের অংশ নিতে দেখা গেছে। 
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসালভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াশিংটনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং চলমান ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে শ্লোগান দেন। বিকালে দলে দলে ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের ভিবিন্ন প্লেকার্ড, পোস্টার ও বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে হোয়াইট হাউজের সামনে সমবেত হয়। তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ নাগরিক সমাবেশে বাংলাদেশে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর গুলি, হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য দেশ প্রধানের কাছে দাবি করেন। এই সময় শ্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগও দাবি করেন।
প্রতিবাদ সবার আয়োজক সিসিলিয়া অ্যানি ক্রুজ বলেন, আমরা কোন দলের না, আমরা আমাদের বিবেকের তাড়নায় আজকের এই সমাবেশের আয়োজন করেছি। তিনি বলেন আমরা একাত্তরের রক্ত দেখেনি। কিন্তু রক্তের কষ্ট কেমন তা ২০২৪-এ দেখছি। আমরা ছাত্রহত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও বন্ধের দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা একমাত্র বর্তমান দেশ প্রধান করতে পারেন। 
সমাবেশে বক্তব্য দেন- দেবান্দু পাত্র, আরিফ, বারাত, দিশা, জনি জন গমেজ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কবিতা দেলোয়ারসহ আরো অনেকে।  গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও অনেকে ছোট কোলের শিশু ও পরিবার নিয়ে প্রতিবাদ সভায় যোগদান করেন। সবার হাতে ছিল চলমান আন্দোলনের চিত্র, প্রতিবাদী শ্লোগান এবং গায়ে জাতীয় পতাকা। 
একই দিনে ন্যাশনাল মনুমেন্টের সামনে মেট্রো ওয়াশিংটনের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিলেন। পরে সবাই হোয়াইট হাউজের সামনে সমবেত হয় একসাথে প্রতিবাদ সভায় অংশ গ্রহণ করেন। 
প্রতিবাদ সভায় একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে মেট্রো ওয়াশিংটনের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ মাওলা মিলন, লেখক ডাক্তার আফতাব আহমেদ দম্পত্তি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এন্ড্রু বিরাজ, কবিতা দেলোয়ার, কাইয়ুম খান,সাংবাদিক জাহিদ রহমানসহ আরো অনেকে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের বাঙালি ছাত্র সংগঠন 'নবান্ন বাংলাদেশি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টস অ্যাএসোসিয়েশন এতে অংশগ্রহণ করেন। 
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন মেট্রো ওয়াশিংটনের বাংলাদেশী সমাজ। দেশের চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ, ছাত্রদের উপর জুলুম, হত্যা ও গুম বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এই প্রতিবাদ সভায় আয়োজন করা হয়েছে।  ২১ জুলাই রোববার দুপুরেও হোয়াইট হাউজের সামনে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ সভার করেন।

ডাইভারসিটি প্লাজায় জেএসএফ বাংলাদেশ: সরকারকে পদত্যাগ করে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্র মেরামতের সাময়িক দায়িত্ব দিয়ে কথিত ভুয়া গণতন্ত্রের লাশকে কবর দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ যাদের নির্বাচিত করবে তারা ক্ষমতায় আসবে। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার নিউয়র্কের জ্যাকসন হাইটের ডাইভার্সিটি প্লাজাতে জাতীয় সম্মিলিত ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা আরো বলেন, আর লাশের তালিকা জাতি দেখতে চায় না। পুলিশের গুলিতে আর কতটা লাশ পড়লে সরকার লজ্জিত হবে? এই মুহূর্তে এই ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। শেয়ার বাজার, শিল্প স্বাস্থ্য, ব্যবসা বাণিজ্য, অর্থ, সংস্কৃতি ইত্যাদি সবকিছু ধ্বংস প্রায়। প্রাতিষ্ঠানিক বহুদলীয় গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার হাইজ্যাক করা হয়েছে। নিরবে একদলীয় বাকশালী অপশাসনে জনজীবন বিপর্যস্ত। অরক্ষিত সীমান্ত, ভারতীয় আগ্রাসন জল শোষণ বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি, এর উপর আবার রেল করিডোর ইত্যাদি দেশবিরোধী চুক্তির পরিণাম ভয়াবহ। সমাবেশে হাজি আনোয়ার হোসেনসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

নিউজার্সি স্টেটের প্যাটারসন সিটির প্যানিংটন পার্কে ২০ জুলাই শনিবার আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশে। এই সমাবেশে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ অসংখ্য প্রবাসীদের অংশগ্রহণে বাংলদেশে চলমান কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে নানা রকম শ্লোগান দেন। তারা বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন।

জর্জিয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ: সরকা‌রি চাক‌রি‌তে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়ন ও হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় গ্লোবাল মলের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসহ নিজেদের দাবি সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করেন। সমাবেশে তাদের অভিভাবকরাও অংশ গ্রহণ করেন। সমাবেশ থেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কার এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়। 
প্রতিবাদ সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাহিদুল খান সাহেল বলেন, প্রিয় জন্মভূমিতে যা ঘটছে তাতে আমরা শোকে মুহ্যমান, বাকস্তব্দ। সেজন্য আমরা মৌন প্রতিবাদ করছি। কারণ নৃশংসতায় আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ড. নাসির উদ্দিন, মামুন শরীফ, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ফারজানা জেরিন প্রমুখ। 

সমাবেশ শেষে সম্মিলিতভাবে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার, চাও যদি অধিকার হঠাও আগে স্বৈরাচার বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মল প্রদক্ষিণ শেষে সমাবেশ শেষ করে।

কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন: ওহাইও অঙ্গ রাজ্যের কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকরা বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন্দের সাথে সংহতি জানিয়ে এক প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন। গত ১৭ জুলাই দুপুর ১২ টায়  কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করে। কেন্ট স্টেটে পিএইচডি গবেষণা রত বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও এতে অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধনে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ, নিপীড়ন ও শিক্ষাঙ্গণে অপরাজনীতি বন্ধ, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান সমৃদ্ধ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শণ করা হয়। অবিলম্বে ছাত্র হত্যার বিচার এবং কোটা সংস্কার করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে। 

ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা: ১৭ জুলাই বুধবার ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা মানববন্ধনে একুশ বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে কোটা প্রথার সমালোচনা করে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানোনো হয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। এছাড়াও মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামা বার্মিংহাম, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব আইওয়াসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে। 

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কেনডালারিস ফুটবল সেন্টারের সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। 
একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি (ইউএসএ), বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ), বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাট দ্য ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া (বিএসএইউআই), বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটি কলেজ স্টেশন।
এছাড়া, কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধন করেছে। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে স্টেট লাইব্রেরির সামনে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশি ছাত্র কমিউনিটি।

ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা: ঠিকানা প্রতিনিধি দিল এ রহমান চাঁপা জানান, গত ১৭ জুলাই বুধবার ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ইউনিভার্সিটির টার্লিংটন হল প্রাঙ্গণ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এক মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এবং শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৬টায়। এতে প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রী অংশ গ্রহণ করে। বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হবার খবরে তীব্র নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তারা। এসময় তাদের হাতে বিভিন্ন দাবি নিয়ে লিখিত পোস্টার/প্ল্যাকার্ড ছিল। 

শিকাগোতে বিক্ষোভ : শিকাগোতে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্থানীয় ৪০১ মিশিগান অ্যাভিনিউতে গত ২০ জুলাই শনিবার এই বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অংশ অংশ নেন। এসময় তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান। 
ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি : ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সাথে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এতে সংহতি প্রকাশ করেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো আলী রীয়াজ। 

পেনসিলভেনিয়ায় সমাবেশ:  নর্থ ইস্ট ফিলাডেলফিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশ নামক সংগঠনের ব্যানারে এক প্রতিবাদ সমাবেশ গত ২১ জুলাই রোববার স্থানীয় জারদের পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির পরিচালক ফরহাদ চৌধুরী তায়েফ, আকছার মুহাম্মদ জুনেদ, ইসতিয়াক আহমেদ, তাওহিদ খান, জাহেদ খান, ফজলুল হক রাসেলের তত্বাবধানে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন। মিছিল, স্লোগানে ও বক্তব্যে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ ও শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটির উপদেষ্টা ও সংগঠক আওতাদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি ও রিয়েলেটর লুৎফর রহমান, সভাপতি কামরুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ সোসাইটির সহসভাপতি জাকারিয়া হোসেন উজ্জল, মুনা নর্থ ইস্ট ফিলাডেলফিয়ার সাবেক সভাপতি আব্দুল বাছিত, সদর অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি খালেদ হোসাইন, উদিচি মৌলভীবাজার জেলার সাবেক দায়িত্বশীল হাফিজ চৌধুরী, কবি ও সংগঠক সায়েম চৌধুরী, মহিলা সংগঠক কলি, সংগঠক সোয়াদ রব চৌধুরী, কাওসার জাফর, বেসাপের জয়েন্ট সেক্রেটারি রিজওয়ান আহমদ, যুব সংগঠক ফরহাদ রেজাসহ স্থানীয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।

বিএসএ-ইউএসসি’র বিক্ষোভ : আহমেদ সাকলায়েন, সাউথ ক্যারেলাইনা জানান প্রবাসের বিভিন্ন স্থানের মতো ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারেলাইনার বাংলাদেশী  স্টুডেন্ট অ্যাসেসিয়েশনও বাংলাদেশে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ও সাধারণ মানুষের ওপর সরকার তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জুলুম-নির্যাতন ও গণহত্যার প্রতিবাদে গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে ছাত্ররা ছাড়াও কম্যুনিটির আরো অনেকে হাতে আন্দোলনের পক্ষে লেখা নানা রকম শ্লোগান সংবলিত পোস্টার নিয়ে অংশগ্রহণ করে।

ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র সভাপতি সাইদা আকতার লিলি ও সাধারণ সম্পাদক গাজী সামসউদ্দীন। এক বিবৃতিতে তারা ছাত্র সমাজের কোটা সাংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান  জানান। 
তারা বলেন, ছাত্র সমাজের প্রতিবাদ ও আন্দোলন কোনভাবেই বুলেট আর নির্যাতনের মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না, বরং আলোচনায় বসে এর সমাধান করা উচিত বলে নেতৃবৃন্দ মত প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা ছাত্র সমাজকে তাদের দাবির প্রতি নিষ্ঠাবান থাকার আহ্বান জানান। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান মুহূর্তে জাতি এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। এই সময়ে সকল মহলকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জাতীয় স্বার্থে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। 
নেতৃবৃন্দ যে সমস্ত তরুণ ও মেধাবী ছাত্র এই আন্দোলনের নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনার এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন।

জাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র সদস্যরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও নির্যাতনের আশংকাজনক ঘটনা ঘটছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি, সম্পূর্ণ ঘটনাপ্রবাহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের পদক্ষেপগুলো অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী এবং সাংবাদিকদের ওপর পুলিশী হামলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণগ্রেফতার ও মামলারও শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার পরিবেশ বজায় রাখা এবং মত প্রকাশের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে যেভাবে বিভিন্ন কৌশলে (হল বন্ধ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা) আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ মনে করেন, কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবির ন্যায্যতা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত। এ অবস্থায়, এই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বা কোন বিশেষ মহলের ইন্ধন হিসেবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টায় জাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন উদ্বিগ্ন। 
প্রগ্রেসিভ ফোরামের বিবৃতি : দেশে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে প্রগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হাফিজুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলে আসা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে যে সহিংসতার সূচনা ঘটেছে, তা চরম দুর্ভাগ্যজনক। সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ ও সরকার- সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং পুলিশের হামলায় এরই মধ্যে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা এবং এতগুলো প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, কোটাব্যবস্থার সংস্কার সময়ের দাবি। সমাজের নারী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসীসহ অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কোটা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বংশপরম্পরায় সুবিধা দেওয়ার নামে ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সেজন্য কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি যৌক্তিক। আমরা সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। 
 
কমেন্ট বক্স