Thikana News
২১ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

হতাশা-ক্ষোভ নিয়েই নির্বাচনী ট্রেনে জাপা ও আ’লীগের শরিকরা

হতাশা-ক্ষোভ নিয়েই নির্বাচনী ট্রেনে জাপা ও আ’লীগের শরিকরা



 
নানা নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ট্রেনে থেকে গেল ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মিত্র বলে পরিচিত জাতীয় পার্টি (জাপা)। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত জাপা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেÑএমন গুঞ্জন ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু সেই গুঞ্জন গুঞ্জনই থেকে গেল, বাস্তবে রূপ নেয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রার্থীদের মধ্যে ২৬টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের এবার মাত্র ছয়টি আসন ছেড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই ছয় আসন পেয়েছে মাত্র তিনটি দল। বাকি ১০ দলের কাউকে আসন ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৭ ডিসেম্বর রোববার মিত্রদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সম্পন্ন করা হয়।
তবে এই আসন ভাগাভাগি নিয়ে বেশ হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অভ্যন্তরে। ১৪ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া রয়েছে ১৩টি দল। এই ১৩ দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে ছয়টি আসন ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। ছেড়ে দেওয়া এসব আসনে জোট শরিকরা লড়বেন, তবে প্রতীক কিন্তু নৌকাই থাকছে। জোট শরিকরা নিজেদের প্রতীক ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকবেন। তবে এই ছয় আসনে সন্তুষ্ট নয় দল তিনটি। তার পরও বাধ্য হয়ে নির্বাচনী ট্রেনে উঠতে হয়েছে তাদের। এদিকে ১৪ দলীয় জোটের বাকি ১০টি দলই কোনো আসন ভাগে পায়নি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এই শরিকদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। ফলে এদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ এসব শরিক মনে করছে, দীর্ঘ দিনের রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ অবিচার করেছে, অন্যায় করেছে।
শুধু নৌকার প্রার্থী সরালেই হবে না, দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও সরাতে হবেÑদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের কাছে এমন চাওয়া ছিল জাতীয় পার্টির (জাপা) ও ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর। তবে তাদের এই চাওয়ায় পুরোপুরি সায় দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে। ফলে জন্ম হয়েছে ক্ষোভ এবং হতাশা। এ সত্ত্বেও দিন শেষে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন নৌকায় ওঠা তিন শরিক দলের ছয় নেতা আর সমঝোতার ভিত্তিতে জাপার ২৬ নেতা। তবে এবার আর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও দলটির যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদের নিরস্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই ভোটে জিততে হবে জাতীয় পার্টিসহ শরিক দলের প্রার্থীদের। ফলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে পারবেন কি না, এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন তারা।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী সরলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৩ আসনে চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন লাঙ্গলকে। দুটি আসনে নিজ দলের এমপিরা স্বতন্ত্র হয়ে বিপদ বাড়িয়েছেন। পরাজয়ের শঙ্কায় বর্তমান এমপিসহ জাপার কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা ইতিমধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। দলটির ২৮৩ আসনে প্রার্থিতা বৈধ হলেও শেষ পর্যন্ত কতজন ভোটে সক্রিয়ভাবে থাকবেন, তা নিশ্চিত নয়। নৌকা পেয়েও স্বস্তিতে নেই জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জেপির প্রার্থীরা। অন্তত চারটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। জাতীয় পার্টির মতো ১৪ দলের শরিকরাও ভোটের মাঠে দুর্বল হওয়ায় জয়ের নিশ্চয়তা নেই।
এ অবস্থার মধ্যেই ১৮ ডিসেম্বর সোমবার প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও। ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষ মাথায় রেখেই অবশেষে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে জাপা ও ১৪ দলের প্রার্থীরা ছুটছেন যার যার নির্বাচনী এলাকায়। এই প্রার্থীরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই হচ্ছেন এখন তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ।
তবে সমঝোতার কথা অস্বীকার করে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আশা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ হবে বিরোধী দল। জাতীয় পার্টি ১৫১ আসনের বেশি পেয়ে সরকার গঠন করবে। ছাড় পাওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে লাঙ্গল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লড়াই করে জিতব। ভয়ের কিছু নেই।
জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জেনেশুনে বিষপান করতে হয়েছে জাপাকে। অনেক কিছুতেই পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি।  এ প্রসঙ্গে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও আমরা বৃহত্তর স্বার্থে এবং ঐক্য বজায় রাখতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ তো রয়েছেই। এটা বলা খুব মুশকিল। কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে বলে মনে হয়নি। শেষমেশ আমরা তিনটি আসনে ছাড় চেয়েছিলাম, দেওয়া হয়েছে দুটি। সাতক্ষীরার আসনটি নিয়ে সমস্যা হলো, যা সত্যিই দুঃখজনক।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলেও তা মেনে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
আসন না পেয়ে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জোটের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকে আমার আসনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে ছাড় দেওয়া হলো না, এটা অসম্মানজনক, অপমানজনক। জোটে আমরা অবহেলিত হয়েছি, তার পরও জোটের স্বার্থে আমরা নির্বাচনে আছি।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক কমরেড রেজাউর রশিদ খান খাজা দলীয় প্রতীকে ভোট করবেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে।
 
কমেন্ট বক্স