Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

অপরাধজগতে বাঙালিরা

অপরাধজগতে বাঙালিরা



 
যুক্তিবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় মানুষকে বলা হয় 'ম্যান ইজ এ র‍্যাশনাল অ্যানিম্যাল'। মানুষ ভালো কাজ যেমন করে, মন্দ কাজের প্রবণতাও মানুষের মধ্যে রয়েছে। মানুষের ভালো গুণ যখন তাকে পরিচালিত করে, তখন তাকে ভালো মানুষ বলা হয়। আর যখন একজন মানুষের মধ্যে সমৃদ্ধণের চেয়ে বদগুণ বড় হয়ে দেখা যায়, তখন তাকে আর মানুষ বলা যায় না। তখন তাকে অমানুষ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা-ই।
যে পরিবারটি খারাপ লোকের দ্বারা পরিচালিত হয় বা যে পরিবার দ্বারা প্রতিবেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে পরিবারটিকে খারাপ পরিবার বলা হয়। যে পরিবারের কুসন্তানের সংখ্যা অধিক, সেই পরিবারকে মানুষ আঙুল তুলে দেখায়, 'ওইটা কুলাঙ্গারে ভরা পরিবার।' ওই পরিবার দ্বারা এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হয়। সে রকম পরিবার কিংবা স্টেটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। স্টেট ভালো, সৎ মানুষের দ্বারা পরিচালিত হলে সেই রাষ্ট্রটি উন্নতি করে। অন্য স্টেট তা অনুকরণ করে। সেই স্টেটের নাগরিকেরা শান্তি ও নিরাপত্তায় থাকে। অন্যের অনুসরণের ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। নেতা-নেত্রীদের ক্ষেত্রেও উদাহরণটি প্রযোজ্য। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রনেতা স্মরণীয় নন। সবার নামও সবাই নেয় না। জর্জ ওয়াশিংটন, অব্রাহাম লিংকন, সেনসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মানুষ যেভাবে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় উচ্চারণ করেন, অনেকের নামই সেই শ্রদ্ধা- ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় না। সেদিক থেকে প্রবাসী সমাজের কথা অবশ্যই অন্য রকম। তাদেরকে দেখা হয় একটু ভিন্ন চোখে, তাদের বিবেচনা করা হয় একটু অন্য মাত্রায়। অভিবাসীপ্রত্যাশীরা দেশের নাগরিকদের কাছে বহিরাগত। কৃপাভিক্ষা প্রত্যাশী অতিরিক্ত বোঝা। অনেক পরীক্ষা দিয়ে, অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এক-দুই প্রজন্মের পর আস্তে- ধীরে স্বদেশবাসীর একটু 'চোখ সওয়া' হয়ে ওঠে। তারপর অভিবাসীদের অনেক কিছুই সন্দেহের চোখে দেখা হয়ে থাকে। প্রবাসীরা যত ভালোভাবেই চলার চেষ্টা করুক, যতই তাদের মন জয় করার জন্য কাজ করে যাক-তাদের মন জয় করা খুব কঠিন। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের প্রবাসজীবন তিন প্রজন্ম হয়ে গেল। পরীক্ষা দিতে দিতে এখন কিছুটা আস্থার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মারতে শুরু করেছি। যে সময় আমরা বাঙালি অভিবাসী সমাজ আমেরিকান সমাজ এবং নানা কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস অর্জন করতে শুরু করেছি, তখন দেখা যায়, আমাদের তরুণসমাজের কিছু কিছু কুলাঙ্গার বা বখে যাওয়া কিছু যুবক অপরাধজগতে, অন্ধকার জগতে তাদের যাতায়াত, ওঠাবসা শুরু করেছে এবং অপরাধজগতের অন্ধকার পথে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত করে তুলছে এবং তাদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-বন্ধুবান্ধব একটি অন্ধকার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন।
ইতিমধ্যেই আমাদের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা- বাণিজ্যে ভালো করছেন। আমাদের সন্তানদের সুনাম সমগ্র আমেরিকাজুড়েই। তারা ভালো ভালো স্কুলে ভালো ভালো রেজাল্ট করে সুনাম করছে। এখন আমাদের অর্জিত সম্মান, মর্যাদা সব এক গভীর সংকটের সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়েছে। এর আগে কুসঙ্গে মিলে আমাদের যুবসমাজের একটি অংশ নেশার জগতে হারিয়ে যেতে শুরু করে। অনেকের আটক হওয়ার কথাও শোনা যায়। এখন সেসব অভিযোগের কথা কম শোনা গেলেও হঠাৎ পত্রপত্রিকায় দেখা গেল অন্য রকম এক অপর- ধিকর্মেও বাংলাদেশিদের আটক হওয়ার খবর। এর মধ্যে তিনজন নারীর জড়িত থাকার কথাও জানা যাচ্ছে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে। সম্প্রতি ঠিকানায় 'কুইলে অপহরণ ও যৌন হয়রানির মামলা/ তিন নারীসহ ছয়জন বাংলাদেশি সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের এ তথ্য কারাগারে' শিরোনামে একটি প্রকাশিত হয়েছে। ১১ জানুয়ারি অ্যাটর্নি অফিস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে। সেখানে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের খবর মতো অভিবাসী জীবনে এ রকম অবশ্যই হতাশায় নিমজ্জিত করে। আমাদের কিন্তু ভবিষ্যৎ স্বপ্নও অন্ধকারে ঢেকে দেয়।
আমাদের শুধু হতাশ হলে চলবে না। অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। এর জন্য চাই সমন্বিত উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, আমাদের সন্তানেরা যদি বখে গিয়ে সব স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে, তবে আমাদের দেশ ছেড়ে আসার সব কষ্ট, আবেগ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের বুকে আঘাত করবে। এটা হতে দেওয়া যায় না। তাই আসুন, সবাই মিলে আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখনই উদ্যোগ নিই।

কমেন্ট বক্স