আঁধারমুক্ত করতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাজনার তালে তালে মানবমনে সুখ ও শান্তির বারতা নিয়ে প্রবাসজীবনে ফিরে এল শারদীয় দুর্গোৎসব। সাড়ম্বরে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে মনোহারি আয়োজন। ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা। দুর্গা যেমন রঙিন সাজে সেজে মায়ের বাড়ি আসবেন, তেমনি ঘরে ঘরে মেয়ে-ছেলে, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বাহারি সাজের উৎসবে মেতেছে। এবার দুর্গার আগমন ঘটবে গজে এবং গমন ঘটবে নৌকায়। দুটোই ধন-সম্পদ ও শস্যবৃদ্ধির প্রতীক।
দুর্গাপূজা বিশ্বজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। তবে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে আনন্দের ঢল নামে ভারতের কলকাতা আর বাংলাদেশে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টম, নবমী, কুমারী পূজা এবং দশমীতে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এ ছাড়া পূজা উৎসবে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ এবং ধর্মীয় অন্যান্য অনুষ্ঠানে পুজোবিশ্বাসী মন থাকবে পবিত্রতায়।
বাংলাদেশ চেতনা ও বিশ্বাসে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার নিয়ে ৯ মাসের মহামুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করতে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দেন। সম্ভ্রম হারান আরও দুই লক্ষাধিক নারী। এই অসীম ত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে তাই দুর্গাপূজার আনন্দে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষও উৎসবে মেতে ওঠে। সবাই এই উৎসব-আনন্দে শরিক হয়ে তা সাড়ম্বরে উপভোগ করেন। প্রবাসজীবনেও সেই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে সব ধরনের সব সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিয়ে উৎসবের আনন্দকে আরও উজ্জ্বলতা দান করে। সবাই গভীরভাবে অংশ নিয়ে অতীতের মতো তাই এবারও দুর্গাপূজার আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে। এখন তা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যকেই মনে করিয়ে দেয়।
দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আবির্ভাবের পেছনে বিরাট এক ইতিহাস রয়েছে, যা হিন্দু সমাজের মানুষেরা গভীর বিশ্বাসে অন্তরে স্থান দেয়। একদা অসুর শক্তি একজোট হয়ে সব দেবতাকে স্বর্গ থেকে হটিয়ে দেয়। তখন সব দেবতা দুর্গাদেবীর কাছে প্রার্থনা জানান, তাদের স্বর্গ উদ্ধার করে দিতে। তখন তিনি দশভূজায় সজ্জিত হয়ে মহাশক্তিধর ত্রিশূলকে হাতিয়ার করে অসুর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন এবং সব অসুরকে শেষ করার পর অসুরপ্রধান মহিষাসুরকেও পরাস্ত করে স্বর্গ অসুরমুক্ত করে দেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বটাকেও দানবমুক্ত করেন। এর পর থেকে তিনি প্রতিবছর শারদ জ্যোৎস্নায় স্নাত হয়ে সপরিবারে পিতার পরিবারে আসেন। সঙ্গে থাকেন কন্যা লক্ষ্মী ও সরস্বতী এবং পুত্র গণেশ ও কার্ত্তিক।
কিন্তু আজ কি বিশ্বকে প্রকৃতই অসুরমুক্ত দেখা যায়? এখনো বিশ্বের কোণে কোণে এমনকি স্বদেশে-প্রবাসেও মানুষরূপী কিছু অসুরের আগমনে সবাই অতিষ্ঠ। আমাদের প্রার্থনা-আবার এ বিশ্বটা অসুরমুক্ত হয়ে বাসযোগ্য হয়ে উঠুক। চিরতরে সব অপশক্তির অবসান ঘটুক। মানবতার জয়গান ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়।
প্রবাস ও দেশে সবার শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিময় হোক। সার্থক হোক। ঠিকানার পক্ষ থেকে সবার প্রতি শারদীয় শুভেচ্ছা।