জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে ভাষণ দেবেন। তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর এসেছেন। ২ অক্টোবর দেশে ফিরে যাবেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও রয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। এটি একটি ব্যতিক্রম। এ রকম বিরোধীদলীয় সফরসঙ্গী নিয়ে আগে কোনো দলনেতা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন কি না জানা যায়না।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে ‘যেখানে ইউনূস, সেখানেই প্রতিরোধ’ স্লোগান নিয়ে তার আগমনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্কে আসা বিএনপি ও এনসিপির নেতারা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক যথেষ্ট হেনস্তার শিকার হয়েছেন। জেএফকে বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনালে তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ, গালিগালাজ, ডিম নিক্ষেপ, এমনকি নারী নেত্রীকে উদ্দেশ করে অশ্লীল বাক্যও ব্যবহার করা হয়। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি থেকে শুরু করে এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও নেতৃবৃন্দ একে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী, নিরাপত্তা-ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং বাংলাদেশের নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল বিধায় এ বছরও ড. ইউনূস কোনো সংবর্ধনা নিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে চলছে টানাপড়েন। নির্বাচন কেমন হবে, কতটা ঐতিহাসিক হবে, নির্বাচনের আগে শতকরা ভোটের হিসাবে আসন বণ্টন হবে কি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে কি না, নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ, গণপরিষদ নির্বাচন বিতর্ক সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না-এসব প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। সেসব বিতর্ক এবং বিবাদের কোনো সুরাহা না হলে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক মহলে রয়েছে সংশয়। আমরা প্রত্যাশা করি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে সব বাধা দূর হয়ে যাবে।
তবে এবার প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে প্রবাসীদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলেও হতে পারে। এবার হয়তো তাদের প্রবাস থেকে ভোট প্রদানে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র লাভের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে স্পষ্ট আশাবাদ প্রাপ্তি ঘটতে পারে। এ ছাড়া নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট আবার চালু, ঢাকা-সিলেট বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ এবং দেশে জানমালের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার একটা স্পষ্ট দিকনির্দেশনা মিলতে পারে।
তা ছাড়া এবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার যোগদান তার জন্য এবং বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে তার জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান হয়তো এবারই শেষ। তাই তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও হয়তো পাবেন না। তিনি হয়তো বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যে অমীমাংসিত সমস্যা রয়েছে, সেসব সমস্যা সমাধানের আন্তরিক চেষ্টা চালাবেন। এবারের অধিবেশনে যোগদানে তিনি যত পারবেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক ছাড়া, সাইডলাইন বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশের স্বার্থে কথা বলবেন। আমরা ভীষণভাবে আশা করব, সেসব বৈঠক সফল হবে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ অনেকটা রক্ষা পাবে। তা ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট, ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যা সমাধানে তার আন্তরিক উদ্যোগ দেখা যাবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এই সফর সফল হবে, আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করব। তাকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
                           
                           
                            
                       
     
  
 

 
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
