Thikana News
২৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫


বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব

বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব



 
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে : ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’। এর অর্থ সাধারণ মানুষ যা বুঝতে পারে, তা হলো একজনের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই চর্চা খুব বেশি লক্ষ করা যায়। আরও একটা চর্চা খুব বেশি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশে মানুষ খুন হয় কেন? আমেরিকায় মানুষ খুন হয় না? মেক্সিকোর মানুষ মানুষকে হত্যা করে না? বাংলাদেশে খুন, গুম জাস্টিফাই করতে এ রকম হাজারটা উদাহরণ তুলে ধরা হবে। বর্তমান সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলা হলে, সেটা সঠিক না বেঠিক বিবেচনায় না নিয়ে অতীতে যত নেতিবাচক দৃষ্টান্ত আছে-সব টেনে তোলা হবে। বর্তমানকে শুধরে নিয়ে সামনে চলার সংস্কৃতি একেবারে নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশের যতটুকু অগ্রসর হওয়া উচিত ছিল, ততটুকু অগ্রসর হতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ দুটি। এক. ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব এবং দুই. সামনে অগ্রসর হওয়ার মানসিকতা অর্জন না করে কেবলই অতীতকে আশ্রয় করে চলা।

আমরা সবকিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখতে পাই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই-এর পেছনে নিশ্চয় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে ধরে নেয়া হয়। কী সে ষড়যন্ত্র, তা উন্মোচনের কোনো উদ্যোগ বা কারও মধ্যে কোনো তাগিদ দেখা যাবে না। শুধু মুখস্থ বুলির মতো বলে যাওয়া এবং প্রতিপক্ষকে সেই সন্দেহের মধ্যে টেনে আনা। পতিত ক্ষমতাচ্যুত শক্তি এত দিন ক্ষমতায় কী করেছিল? সত্য উন্মোচনের পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ ছিল তাই। যেকোনো আন্দোলন সফল হয়, যখন মানুষের মিলিত শক্তি এক হয়ে রাজপথে নামে, তখন। এই মহাসত্য মেনে নেওয়ার মতো সাহস ও সততা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা কখনো দেখাতে পারেন না। একটি সরকারের পতনের পর যে জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তির আন্দোলনে যারা ক্ষমতায় যান, তারা প্রথম ভয় পান ওই চরম সত্য জনতার শক্তিকে। তারা জনতার শক্তিকেই ভুলে যেতে চায়। উল্টো নিজেদের শক্তি দিয়ে জনতাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।

জনতার শক্তিকে শাসকশ্রেণি এতটাই ভয় পায় যে, তারা জনগণকেই সব সময় একটা ভয়ের পরিবেশের মধ্যে রাখতে চায়। জনগণ যেন ভয় পেয়ে নিজেদের শক্তির কথা ভুলে থাকে। জনগণের শক্তিকে আরও বিকশিত করে দেশ বিনির্মাণের কাজে লাগাতে চায় না। দেশের বিরোধী শক্তিকেও কাজে লাগাতে চায় না ইতিবাচক কাজে। সে কারণে দেশ চলে সামান্য নেতিবাচক পরিবেশের মধ্য দিয়ে। শাসক দল নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দেশের কল্যাণে নতুন নতুন ইতিবাচক কোনো কর্মসূচি মানুষের সামনে উপস্থিত করতে পারে না। সে কারণে দেশ কোনো ইতিবাচক রাজনীতি পায় না। সব সময় অতীতের শক্তিকে সমালোচনা, গাল-মন্দ আর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে দেশ শাসন করে চলে। সরকার যতই বদল হোক, পদ্ধতি একই থাকে। আর ক্ষমতা যাতে হাতছাড়া হতে না পারে, সে জন্য ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় থাকার উপায় খোঁজে।

তারা সব সময় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। ক্ষমতা উপভোগ করে বিত্তবৈভব গড়ে তোলার বাসনায়, তা নয়। ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, কারণ ক্ষমতাহীন হলে তারা জনতার রুদ্ররোষে পড়বে। নাজেহাল, নিপীড়ন, জেল-জুলুমের সম্মুখীন হবে-এ ভয়েও তারা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। এই ধারা কোনো এক বিশেষ দলের নয়, কমবেশি ক্ষমতাসীন সব দলের। বর্তমানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তারাও নিজেদের ব্যতিক্রম প্রমাণ করতে পারছেন না। অথচ সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর কাছে মানুষের। সব মানুষের, সব রাজনৈতিক দলের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েছিলেন বর্তমানের শাসকেরা।

অথচ বর্তমান শাসককুল মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তারাও যেন অতীতকে আশ্রয় করেই দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের সব রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, এ রকম সমর্থন নিয়ে এ-যাবৎ কেউই বাংলাদেশ শাসন করার সুযোগ পায়নি। এমন সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছে না-তা মোটেও বোধগম্য নয়। যে সরকারই হোক, তারা যদি অতীতের খোলস থেকে বের হয়ে আসতে পারত; প্রতিহিংসা, প্রতিরোধ, ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব আর ব্যক্তিগত অর্থবিত্তের খোলসমুক্ত হয়ে সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র শাসনে মনোনিবেশ করতে পারত; তবে তারা যেমন ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারত, বাংলাদেশকেও সোনার বাংলায় রূপ দিতে পারত।

কমেন্ট বক্স