Thikana News
০৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

‘বসন্ত’ আতঙ্কে ভারত

‘বসন্ত’ আতঙ্কে ভারত



 
বসন্ত কি সবসময় সব দেশেই পরমকাক্সিক্ষত একটি ঋতু। আমরা বাঙালিরা বসন্তকে তার মোহনীয় রূপের জন্য সম্বোধন করি ঋতুরাজ বসন্ত। বাংলা বর্ষপুঞ্জির ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্ত ঋতু নিয়ে বাঙালির আদিখ্যেতার সীমা সেই। শান্তির ঋতু। বসন্ত প্রেম ও ভালোবাসার ঋতু। বসন্তের মলয় বাতাস বাঙালির প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। হৃদয় মন শীতল হয়। বসন্তে কোকিলের ডাক মনকে কোন সুদূরে নিয়ে যায়। কোকিলের কাল রূপও তখন অপরূপ হয়ে দেখা দেয়।

কিন্তু রাজনীতিতে ‘বসন্ত’ এখন সেই ভীষণ ছোঁয়াচে রোগ বসন্তের (পক্স) মতো। এ শুধু একজন থেকে অন্যজন বা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে না, বসন্ত এক দেশ থেকে অন্য দেশ, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনীতি, শাসক, শাসনব্যবস্থাকে ঝড়ো হাওয়ার মতো এলোমেলো করে দেয়। এই বসন্ত ঝড় অগণতান্ত্রিক, একনায়ক, স্বৈরাচারের পতন ঘটায়। তছনছ করে দেয় প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা জন্ম দেয় স্বৈরাচারের এবং ফ্যাসিবাদের। ভেঙে দেয় সেইরকম রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, যেখানে কিছু মোসাহেব, তোষামোদকারী যারা রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা একজন দেশ পরিচালকের হাতে কুক্ষিগত করার ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজেরা হরিলুট করে রাষ্ট্রকে ফোকলা করে দেয় এবং বসন্ত ঝড়ে সেই স্বপ্নের রাজপ্রসাদ ভেঙে পড়ে। তখন কীসের গদি, কীসের ক্ষমতা সব ছেড়েছুড়ে জান নিয়ে কেউ পালায়, কেউ ধরা পড়ে জেলে দুর্বিষহ জীবন কাটায়। কেউ মবের হাতে পড়ে নাজেহাল হয়। সেই অস্থির সময়ে অতীতের কোনো ভালো কাজকেও কেউ স্বীকার করতে চায় না। সবাই উন্মত্ত হয়ে সবকিছু ভাঙনের খেলায় মেতে ওঠে।

এর মধ্যে বসন্তের ঝড়ো হওয়ার পর যারা বসন্তাক্রান্ত দেশের হাল ধরার দায়িত্ব পান, তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি এবং দক্ষতা যদি মানসম্পন্ন হয় এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা আর দেশের মানুষের প্রতি দরদ ও মমতা থাকে, তারা ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ উত্তাল সাগরে নৌকার হাল ধরলেও, ঠিকই নৌকাকে পাড়ে নিতে সক্ষম হয়। অল্প দিনেই তারা দেশকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে দেশের মানুষকে শান্ত করতে সক্ষম হন। পাশাপাশি দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সরকারি বিভিন্ন মেকানিজমকে কার্যকর করে তোলেন। সেখানে সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা, রাষ্ট্র পরিচালকদের নির্লোভ, নিস্বার্থপ্রাণ হতে হবে। সুযোগ বুঝে অর্থ-বিত্তের বৃত্তে আটকা পড়লে আর ভালো কিছু হয়ে উঠবে না। রাজনীতির ইতিহাসে ভালো আর মন্দ-দুই দৃষ্টান্তই পাশাপাশি পাওয়া যাবে।

ঠিকানার গত ১০ সেপ্টেম্বরের সংখ্যার শিরোনাম সংবাদটিতে এসব নিয়েই লেখা হয়েছে। প্রধান শিরোনাম ‘এশিয়া বসন্ত আতঙ্কে ভারত’। উপশিরোনামে আছে- ‘বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ইন্দোনেশিয়া প্রজেক্ট ইমপ্লিন্টেশন নেপালে।...’। বসন্ত নিয়ে মানুষের এমনি আতঙ্ক। রোগ বসন্তে মানুষের জীবন যায়। রাজনীতির বসন্তে ‘বন্ধুর বাড়ির ফুলের সৌরভ’ নেই। ‘এশিয়া বসন্তে’ ভারতের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ একেবারেই অসঙ্গত নয়। বসন্ত ঝড়ে ইতোমধ্যেই এলোমেলো হয়ে গেছে মিসরের দীর্ঘ লৌহ শাসন। এশিয়া বসন্তে ইতোমধ্যে পতন ঘটার মুখে ইন্দোনেশিয়ার শাসন। শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে স্বৈর শাসনের অবসান ঘটেছে। আর নেপালের আগে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার ১৬ বছরের লৌহ শাসনের পতন ঘটে গেল বাংলা বসন্তে। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে বাংলাদেশ শাসন করছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাকিস্তানে বসন্তের ঝড় নেই। কেননা পাকিস্তানে সবসময় রাজনৈতিক ঝড় বয়েই চলেছে। যখন-তখন সামরিক ঝড়ে শাসক বদলে যাচ্ছে। ভারত তাই এখন ভয়ানক আতঙ্কে আছে ‘বসন্ত’ ঝড় নিয়ে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের যে টানাপড়েন চলছে, যে কারণে ‘বসন্ত’ আতঙ্কে ভারতের এখন দুরু দুরু বক্ষ। অন্যদিকে ৭ রাজ্যে রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদের ঝড়। বসন্ত ঝড় সর্বত্রই যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, তেমনটা দাবি করা যাবে না। তবে জেন জি, যাদের বলা হয় বর্তমান তরুণ অ্যাংরি প্রজন্মের প্রতিনিধি তারা রাষ্ট্রশাসনে অন্যায়, অসংগতি, অবিচার, দুর্নীতি সহ্য করে না। এসব অন্যায় অসংগতি দেখলে তাদের রক্তে নাচন ধরে। পুরাতন দুর্নীতিবাজদের পরিবর্তনের আকাক্সক্ষায় অস্থির হয়ে ওঠে এবং তষ্কর শাসকদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। রক্ত, জীবন সব তুচ্ছ মনে হয় তাদের কাছে।

‘বসন্ত’ ভালো কি মন্দ তার বিচারের ভার আগামী দিনের ইতিহাসের কাঁধে চাপিয়ে একথা উচ্চারণ করা যায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভয়ের কিছু নেই বর্তমান প্রজন্মের প্রহরায়।
 

কমেন্ট বক্স